আঁধার কাটিয়ে আলোয় ফেরা, বিয়ে করে ঘর বাঁধলেন মহিষাদলের যৌনপল্লির ঝুমা

সংসার বাঁধার স্বপ্ন বুকেই অন্যের যৌন লালাসা মেটাতে হত ঝুমা ঘোষকে। কিন্তু, মুখ ফেরাননি ঈশ্বর। শেষ পর্যন্ত সরস্বতী পুজোর দিন পরিণয় সম্পন্ন হল বছর একুশের মেয়েটির।

সংসার বাঁধার স্বপ্ন বুকেই অন্যের যৌন লালাসা মেটাতে হত ঝুমা ঘোষকে। কিন্তু, মুখ ফেরাননি ঈশ্বর। শেষ পর্যন্ত সরস্বতী পুজোর দিন পরিণয় সম্পন্ন হল বছর একুশের মেয়েটির।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
mahishadol youth chottu das got married with call girl jhuma ghosh

ঝুমার কপালে ছোট্টর সিদুঁর দানের মুহূর্ত। ছবি- কৌশিক দাস

হতদরিদ্র পরিবার। পেটে খিদের জ্বালা। শেষ পর্যন্ত বাবা-মায়ের হারা মুর্শিদাবাদের লালগোলার ষোড়শীর ঠাঁই হয়েছিল মহিষাদলের অন্ধকার কানাগলিতে। যৌনপল্লিতে কোনমতে মাথা গুঁজে থাকা। সংসার বাঁধার স্বপ্ন বুকেই অন্যের যৌন লালাসা মেটাতে হত ঝুমা ঘোষকে। কিন্তু, মুখ ফেরাননি ঈশ্বর। শেষ পর্যন্ত সরস্বতী পুজোর দিন পরিণয় সম্পন্ন হল বছর একুশের মেয়েটির। ধুমঝাম করে উলুধ্বনিতে হিন্দু মতেই চার হাত এক হল।

Advertisment

মহিষাদলের যৌনপল্লিতেই দিন কাটছিল ধুমার। বছর ছ'য়েক আগে মুর্শিদাবাদের লালগোলাথেকে নাবালিকা ঝুমাকে যৌনপল্লিতে দিয়ে গিয়েছিল নারী পাচার চক্রের লোকেরা। ইচ্ছার অমতেই দেহ ব্যবসায় নামতে বাধ্য হয় সে। যে পল্লিতে এসে একসময় জীবনের ঘোর অন্ধকার দেখেছিল মেয়েটি, সেই গলিতে শেষ পর্যন্ত আলোর হদিশ পায় সে।

এই যৌনপল্লিতেই খাবার দেন বাসুলিয়ার বাসিন্দা পেশায় হোটেল ব্যবসায়ী ছোট্টু দাস। সেই সূত্রেই ঝুমা-ছোট্টুর দেখা। পরে আলাপ, বন্ধুত্ব ও প্রেম।। তবে, খুব বেশিদিনের নয়, বড়জোর মাস পাঁচেক চলে এভাবেই।

Advertisment

এরপরই ছিল আসল পরীক্ষার পালা। ঝুমার অতীত সহ বাড়িতে সব জানায় ছোট্টু। প্রথমে বেঁকে বসে পরিবার। সে পর্যন্ত অবশ্য ছেলের সিদ্ধান্তের সিলমোহর দিয়েছেন ছোট্টুর বাবা-মা। এক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করেছিল নিহারীকা নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। একদিকে ছেলের বাড়ি, অন্যদিকে পতুতালয়ের মালিকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর অসাধ্য সাধন করেছে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।

publive-image
ছোট্টু ও ঝুমা

কথায় বলে শুভ কাজে দেরি নয়। সেই প্রবাদ মেনেই ছোট্টু-ঝুমা চার এক করতেও কসুর করেনি কেউ। বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে, অর্থাৎ সরস্বতী পুজোর দিনই শুভপরিণয় সম্পন্ন হয় ছোট্টু ও ঝুমার। ক্লাবে সরস্বতী প্রতিমার সামনেই হয় বিয়ের অনুষ্ঠান। মালাবদল থেকে উলুধ্বনি, আনন্দ আহ্লাদ, সবই ছিল ভরপুর।

ঘর-বর দুই পেল ঝুমা। মাথা ভর্তি সিদুঁর নিয়ে তাই তাঁর দু'চোখ ভরা জল। ঝুমা বলছিলেন, 'এই অন্ধকার জগৎ থেকে মনের বাসনা কোনদিন পূরণ হতে পারে তা ভাবিনি।' ক্লাব সদস্য ও শশ্বুড় বাড়ির লোকেদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে সে। আর বর ছোট্টির কথায়, 'আমি ভীশণ খুশি।'

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিহারীকার সম্পাদক মানস বেরার কথায়, 'অন্ধকার জগতের এক যুবতীকে সংসার জীবনে পাঠাতে পেরে ভীষন খুশি আমরা। আগামীদিনে সমাজের অন্যান্যরাও যাতে এই ধরনের কাজে এগিয়ে আসে তার আহ্বান জানাই।'

West Bengal East Midnapore