ঘুষের বদলে সংসদে প্রশ্ন বিতর্কে গত প্রায় দু'মাস ধরে সংবাদ শিরোনামে মহুয়া মৈত্র। শুক্রবার কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোচ্চার মহুয়া। তাঁর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু শুধু ঘুষের বদলে সংসদে প্রশ্ন কাণ্ডই নয়, তার আগেই বেশ কয়েকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন মহুয়া। সরগরম হয়েছে বঙ্গ তথা জাতীয় রাজনীতি।
এক নজরে মহুয়া মৈত্রর বিতর্কিত মন্তব্য-
'দু'পয়সার প্রেস'
ঘটনা ২০২০ সালের। তখনও জেলা তৃণমূলের সভা নেত্রী ছিলেন মহুয়া মৈত্র। উৎসবের মরসুমে নদিয়ার গয়েশপুরে জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী মহুয়া গিয়েছিলেন একটি কর্মিসভায়। সেখানে হাজির ছিলেন সংবাদমাধ্যমের স্থানীয় প্রতিনিধিরাও। মহুয়া সেখানে গাড়ি থেকে নামতেই দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা শুরু হয়েছিল। মহুয়ার গাড়ির ঘিরে বিক্ষোভও হয়। কিন্তু, বিবদমান দুই গোষ্ঠীকে বুঝিয়ে ভিতরে নিয়ে গিয়ে বৈঠক শুরু করান মহুয়া। সেখানেও সংবাদমাধ্যমের কয়েকজন প্রতিনিধি ঢুকে পড়েছিলেন বলে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব দাবি করেন। অভিযোগ, তখনই আচমকা মেজাজ হারান সাংসদ। দলীয় বৈঠকে সংবাদমাধ্যমকে ঢোকার অনুমতি কে দিয়েছেন তা দলের নেতা-কর্মীদের থেকে জানতে চান কৃষ্ণনগরের সাংসদ। এর পর উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল যে, 'কে এই দু’পয়সার প্রেসকে ভেতরে ডাকে? কর্মীবৈঠক হচ্ছে। আর সবাই টিভিতে মুখ দেখাতে ব্যস্ত। আমি নির্দেশ দিচ্ছি, প্রেসকে সরান!'
মহুয়ার সেই বক্তব্য ভাইরাল হয়ে যায়। তারপরই চরম বিতর্ক শুরু হয়। 'দু’পয়সার প্রেস' বলায় সোশাল মিডিয়ায় মহুয়া মৈত্রকে কটাক্ষের বন্যা বয়ে যায়। কলকাতা সহ একাধিক জেলা প্রেস ক্লাবের তরফে তৃণমূল সাংসদের মন্তব্যের বিরোধিতা করা হয়।
আরও পড়ুন- ‘বহিষ্কৃত’ মহুয়ার তৃণমূলে ভবিষ্যৎ কী? সাফ জানিয়ে দিলেন মমতা
প্রবল প্রতিবাদের মুখে চাপ বাড়ে মহুয়ার। শেষপর্যন্ত পুরো ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন তৃণমূল সাংসদ। বলেছিলেন, 'গয়েশপুরের ওই বৈঠকে স্থানীয় শহর সভাপতির বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের একাংশ আমার কাছে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন। আমি সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছিলাম। সেই সময় একদল কর্মী সংবাদমাধ্যমের স্থানীয় প্রতিনিধিদের কয়েক জনকে ডেকে আনেন। আর তাঁরা আমার কথা মোবাইলে রেকর্ড করছিলেন। আমি তখন দলের সেই কর্মীদের রেগে গিয়ে বলেছি, কেন সংবাদমাধ্যমকে ডাকা হল? প্রশ্ন করি, কেন ২ পয়সার সাংবাদিকদের ডাকা হয়েছে? ওঁদের এখানে আনার ব্যাপারে আপনাদের কী স্বার্থ রয়েছে? আমি আমার দলের কর্মীদের বলেছি। সংবাদমাধ্যমকে বলিনি।'
কালীর শাক্ত আচারে পুজো সম্পর্কে মহুয়ার মন্তব্য
ঘটনা ২০২২ সালের জুলাই মাসের। সেই সময় কানাডাবাসী ভারতীয় পরিচালক লীনা মণিমেকালাইয়ের 'কালী' তথ্যচিত্রের পোস্টার নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। সেই বিতর্কে যুক্ত হয়েছিল মহুয়া মৈত্রের নাম। যা নিয়ে থানায় এফআইআর পর্যন্ত হয়েছিল।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেছিলেন যে, 'ঈশ্বরকে এক এক জনের এক এক রকমের মত। ভুটান বা সিকিমে ঈশ্বরকে সকালের পুজোয় হুইস্কি দেওয়া হয়। উত্তরপ্রদেশে তা শুনলে সকলে আঁতকে উঠবেন। আমার কাছে কালী এমন দেবী, যিনি মাংস খান, মদ্যপান করেন। তারাপীঠে সাধুরা ধূমপান করেন। আবার কালীর ওই রূপকেই অনেকে পুজো করেন। নিজের মতো করে কালীকে কল্পনা করার স্বাধীনতা রয়েছে হিন্দুধর্মে। আমার এই স্বাধীনতায় কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। ঠিক যেমন কেউ তাঁর ঈশ্বরকে নিরামিষভোজী কল্পনা করে আরাধনা করতে পারেন, তাঁর স্বাধীনতাতেও হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।'
এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই চরম বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। কিন্তু মহুয়া মৈত্রকে দমিয়ে রাখা যায়নি। বিতর্ক যন মধ্য গননে তখন নিজেকে কালীভক্ত বলে দাবি করেছিলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ। দাবি করেছিলেন যে, তিনি নিয়মিত কালীপুজোও করেন। আর নিজের হোয়াটসঅ্যাপের ডিপি-তেও কালীর ছবি রয়েছে।
আরও পড়ুন- ‘প্রমাণ ছাড়াই পদক্ষেপ’…! সাংসদ পদ খুইয়ে বিস্ফোরক মহুয়া, হাততালি সনিয়ার
সেই সময় মহুয়ার পাশে ছিল না দল। তৃণমূলের তরফে টুইটে (বর্তমানে এক্স) জানানো হয়েছিল যে,'মা কালীকে নিয়ে মহুয়া মৈত্রের মন্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত। দল তা সমর্থন করছে না। এই মন্তব্যের নিন্দা করছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস।'
এসবের পরই চলতি বছর অক্টোবর মাসে সংসদে ঘুষের বদলে প্রশ্ন মামলায় জড়ায় মহুয়া মৈত্রর নাম। প্রথমে এ নিয়ে তৃণমূলের কেউ মুখ খোলেনি। সম্প্রতি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'মহুয়া মৈত্র নিজের লড়াই নিজেই লড়তে পারেন। তিনি স্বাবলম্বী। দল অবশ্যই তাঁর পাশে থাকবে।' আর শুক্রবার সংসদ থেকে বহিষ্কারর পর মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বলেছেন, 'পুরোটাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিয়ে করা হল। মহুয়ার সঙ্গে সুবিচার করা হল না। ওঁর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হল, আবার ওঁকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারও করা হল। আধ ঘণ্টার মধ্যে কেউ ৪৭৫ পৃষ্ঠার রিপোর্ট পড়ে ফেলতে পারেন। ওরা সব কিছুই ঠিক করে রেখেছিল। পুরোপুরি অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক ভাবে বহিষ্কার করা হল মহুয়াকে। আমরা এর ঘোর নিন্দা করছি। মহুয়ার সঙ্গে দল ছিল, আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।'
বিতর্কের আরেক নাম মহুয়া মৈত্র! তাঁর কোন কোন মন্তব্যে তোলপাড় হয়েছে বঙ্গ রাজনীতি?
শুধু ঘুষের বদলে সংসদে প্রশ্ন কাণ্ডই নয়, তার আগেই বেশ কয়েকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন মহুয়া।
Follow Us
ঘুষের বদলে সংসদে প্রশ্ন বিতর্কে গত প্রায় দু'মাস ধরে সংবাদ শিরোনামে মহুয়া মৈত্র। শুক্রবার কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোচ্চার মহুয়া। তাঁর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু শুধু ঘুষের বদলে সংসদে প্রশ্ন কাণ্ডই নয়, তার আগেই বেশ কয়েকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন মহুয়া। সরগরম হয়েছে বঙ্গ তথা জাতীয় রাজনীতি।
এক নজরে মহুয়া মৈত্রর বিতর্কিত মন্তব্য-
'দু'পয়সার প্রেস'
ঘটনা ২০২০ সালের। তখনও জেলা তৃণমূলের সভা নেত্রী ছিলেন মহুয়া মৈত্র। উৎসবের মরসুমে নদিয়ার গয়েশপুরে জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী মহুয়া গিয়েছিলেন একটি কর্মিসভায়। সেখানে হাজির ছিলেন সংবাদমাধ্যমের স্থানীয় প্রতিনিধিরাও। মহুয়া সেখানে গাড়ি থেকে নামতেই দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা শুরু হয়েছিল। মহুয়ার গাড়ির ঘিরে বিক্ষোভও হয়। কিন্তু, বিবদমান দুই গোষ্ঠীকে বুঝিয়ে ভিতরে নিয়ে গিয়ে বৈঠক শুরু করান মহুয়া। সেখানেও সংবাদমাধ্যমের কয়েকজন প্রতিনিধি ঢুকে পড়েছিলেন বলে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব দাবি করেন। অভিযোগ, তখনই আচমকা মেজাজ হারান সাংসদ। দলীয় বৈঠকে সংবাদমাধ্যমকে ঢোকার অনুমতি কে দিয়েছেন তা দলের নেতা-কর্মীদের থেকে জানতে চান কৃষ্ণনগরের সাংসদ। এর পর উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল যে, 'কে এই দু’পয়সার প্রেসকে ভেতরে ডাকে? কর্মীবৈঠক হচ্ছে। আর সবাই টিভিতে মুখ দেখাতে ব্যস্ত। আমি নির্দেশ দিচ্ছি, প্রেসকে সরান!'
মহুয়ার সেই বক্তব্য ভাইরাল হয়ে যায়। তারপরই চরম বিতর্ক শুরু হয়। 'দু’পয়সার প্রেস' বলায় সোশাল মিডিয়ায় মহুয়া মৈত্রকে কটাক্ষের বন্যা বয়ে যায়। কলকাতা সহ একাধিক জেলা প্রেস ক্লাবের তরফে তৃণমূল সাংসদের মন্তব্যের বিরোধিতা করা হয়।
আরও পড়ুন- ‘বহিষ্কৃত’ মহুয়ার তৃণমূলে ভবিষ্যৎ কী? সাফ জানিয়ে দিলেন মমতা
প্রবল প্রতিবাদের মুখে চাপ বাড়ে মহুয়ার। শেষপর্যন্ত পুরো ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন তৃণমূল সাংসদ। বলেছিলেন, 'গয়েশপুরের ওই বৈঠকে স্থানীয় শহর সভাপতির বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের একাংশ আমার কাছে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন। আমি সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছিলাম। সেই সময় একদল কর্মী সংবাদমাধ্যমের স্থানীয় প্রতিনিধিদের কয়েক জনকে ডেকে আনেন। আর তাঁরা আমার কথা মোবাইলে রেকর্ড করছিলেন। আমি তখন দলের সেই কর্মীদের রেগে গিয়ে বলেছি, কেন সংবাদমাধ্যমকে ডাকা হল? প্রশ্ন করি, কেন ২ পয়সার সাংবাদিকদের ডাকা হয়েছে? ওঁদের এখানে আনার ব্যাপারে আপনাদের কী স্বার্থ রয়েছে? আমি আমার দলের কর্মীদের বলেছি। সংবাদমাধ্যমকে বলিনি।'
কালীর শাক্ত আচারে পুজো সম্পর্কে মহুয়ার মন্তব্য
ঘটনা ২০২২ সালের জুলাই মাসের। সেই সময় কানাডাবাসী ভারতীয় পরিচালক লীনা মণিমেকালাইয়ের 'কালী' তথ্যচিত্রের পোস্টার নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। সেই বিতর্কে যুক্ত হয়েছিল মহুয়া মৈত্রের নাম। যা নিয়ে থানায় এফআইআর পর্যন্ত হয়েছিল।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেছিলেন যে, 'ঈশ্বরকে এক এক জনের এক এক রকমের মত। ভুটান বা সিকিমে ঈশ্বরকে সকালের পুজোয় হুইস্কি দেওয়া হয়। উত্তরপ্রদেশে তা শুনলে সকলে আঁতকে উঠবেন। আমার কাছে কালী এমন দেবী, যিনি মাংস খান, মদ্যপান করেন। তারাপীঠে সাধুরা ধূমপান করেন। আবার কালীর ওই রূপকেই অনেকে পুজো করেন। নিজের মতো করে কালীকে কল্পনা করার স্বাধীনতা রয়েছে হিন্দুধর্মে। আমার এই স্বাধীনতায় কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। ঠিক যেমন কেউ তাঁর ঈশ্বরকে নিরামিষভোজী কল্পনা করে আরাধনা করতে পারেন, তাঁর স্বাধীনতাতেও হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।'
এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই চরম বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। কিন্তু মহুয়া মৈত্রকে দমিয়ে রাখা যায়নি। বিতর্ক যন মধ্য গননে তখন নিজেকে কালীভক্ত বলে দাবি করেছিলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ। দাবি করেছিলেন যে, তিনি নিয়মিত কালীপুজোও করেন। আর নিজের হোয়াটসঅ্যাপের ডিপি-তেও কালীর ছবি রয়েছে।
আরও পড়ুন- ‘প্রমাণ ছাড়াই পদক্ষেপ’…! সাংসদ পদ খুইয়ে বিস্ফোরক মহুয়া, হাততালি সনিয়ার
সেই সময় মহুয়ার পাশে ছিল না দল। তৃণমূলের তরফে টুইটে (বর্তমানে এক্স) জানানো হয়েছিল যে,'মা কালীকে নিয়ে মহুয়া মৈত্রের মন্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত। দল তা সমর্থন করছে না। এই মন্তব্যের নিন্দা করছে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস।'
এসবের পরই চলতি বছর অক্টোবর মাসে সংসদে ঘুষের বদলে প্রশ্ন মামলায় জড়ায় মহুয়া মৈত্রর নাম। প্রথমে এ নিয়ে তৃণমূলের কেউ মুখ খোলেনি। সম্প্রতি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'মহুয়া মৈত্র নিজের লড়াই নিজেই লড়তে পারেন। তিনি স্বাবলম্বী। দল অবশ্যই তাঁর পাশে থাকবে।' আর শুক্রবার সংসদ থেকে বহিষ্কারর পর মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বলেছেন, 'পুরোটাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিয়ে করা হল। মহুয়ার সঙ্গে সুবিচার করা হল না। ওঁর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হল, আবার ওঁকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারও করা হল। আধ ঘণ্টার মধ্যে কেউ ৪৭৫ পৃষ্ঠার রিপোর্ট পড়ে ফেলতে পারেন। ওরা সব কিছুই ঠিক করে রেখেছিল। পুরোপুরি অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক ভাবে বহিষ্কার করা হল মহুয়াকে। আমরা এর ঘোর নিন্দা করছি। মহুয়ার সঙ্গে দল ছিল, আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।'