দুর্গা বিসর্জন ঠিকমতো করার জন্যই মাল নদীর শুকনো খাতে বোল্ডার ফেলা হয়। যেদিকে বিসর্জন হচ্ছে, সেদিকে যেন স্রোতের টান থাকে- তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। আর এতেই বড় বিপর্যয় ঘটে গেলে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের কে বা কারা এই বোল্ডার ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
স্ক্যানারে নিরঞ্জনের আগে প্রশানের প্রস্তুতি নিয়ে বড় খামতি। এছাড়াও প্রশ্ন হল, নিরঞ্জনের সময় নদীবক্ষে বহু মানুষকে যেতে দেওয়া হয়েছিল। কেন তা রুখতে স্থানীয় প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করল না? অভিযোগ, দুর্ঘটনার সময় পর্যাপ্ত সিভিল ডিফেন্স বাহিনীও মাল নদীর ধারে ছিল না। মাত্র ৮ জন উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কাছে ছিল না লাইফ সেভিং জ্যাকেটও। ফলে আচমকা হড়পা বানে ভেসে যাওয়াদের উদ্ধারেও সমস্যা হয়েছে।
প্রবল বৃষ্টির মধ্যে কেন বিকেলের মধ্যে বিসর্জন পর্ব সম্পন্ন করা হয়নি প্রশানের তরফে? তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দশমীর বিকালে মোট ৭০টি প্রতিমা মাল বাজার ঘাটে নিরঞ্জনের কথা ছিল। এরমধ্যে ৩০-৩৫টির নিরঞ্জন সম্পন্ন হয়েছিল। বাকিগুলি লরিগুলি প্রতিমা সহ নদী পাড়ে দাঁড়িয়েছিল। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হঠাৎ করে আসা হড়পা বানে ১০টি লরি সহ নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা বহু মানুষ মুহূর্তের মধ্যে ভেসে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নদীতে জল বাড়তে শুরু করলে প্রাণে বাঁচতে সবাই নদী থেকে ডাঙায় উঠে আসার চেষ্টা করতেই হয় বিপত্তি। অনেকেই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নদীতে পড়ে যায়। এরপর স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায়। প্রশাসনের তরফে তাড়াহুড়ো না করতে মাইকিং করা হলেও অবস্থা তখন আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।
এক্ষেত্রে বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা বলেছেন, 'প্রাকৃতিক বিপর্যয়ারে পূর্ভবাস পেয়ে প্রশাসনের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। সেটাই কোথাও খামতি ছিল।' এই অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী বুলুচিক বড়াইক ও উদয়ন গুহ। বুলুচিক বড়াইক বলেছেন, 'ঘটনার সময় আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। বেশ কিছু মানুষ ভেসে গিয়েছেন। জলের স্রোত খুব প্রবল ছিল। ঘটনার সময় শতাধিক মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বেশ কয়েকজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তবে, বিসর্জনের সময় ঘাটে যথেষ্ট পরিমাণ সিভিল ডিভেন্সের কর্মী মোতায়েন ছিল এবং উদ্ধারকাজও হয়েছে তৎপরতার সঙ্গে।' উদয়ন গুহ-র দাবি, 'বিজেপি মানুষের লাশ পয়েছে। এবার ওরা রাজনীতি করবে। কিন্তু কে দোষী সেটা পরে খুঁজে বার করা যাবে। এখন ক্ষতিগ্রস্ত ও সব হারানো মানুষগুলোরপরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রশাসনের কেই দোষী হলে বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে তাঁর বা তাঁদের শাস্তি হবে।'