/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/03/malda_mother_1_corrected.jpg)
ছবি- মধুমিতা দে।
প্রসবযন্ত্রণাতেও আটকালো না লেখাপড়ার প্রতি ভালোবাসা। হাসপাতালে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসলেন মালদা চাঁচোলের আনজারা খাতুন। হরিশচন্দ্রপুরের বছর ১৮-র আনজারা কিরণবালা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। দীর্ঘদিন প্রেম ছিল গ্রামেরই মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে। লকডাউনে অফলাইন ক্লাস বন্ধ ছিল। তবে, সেলিম-আনজারার প্রেম বন্ধ থাকেনি। গত বছরই প্রেম বিয়েতে পরিণতি পেয়েছে। তবে, লেখাপড়া বন্ধ করেননি আনজারা। এরই মধ্যে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন। পরিবারের লোকজন বারণ করেছিল। কিন্তু, আনজারা ছিলেন অনড়। বাড়ির লোকেদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি মাধ্যমিক দেবেনই। সেইমতো ফর্ম ফিলাপ থেকে সব কিছুই নিয়মমাফিক করেছেন।
কিন্তু, যন্ত্রণার আরও বাকি ছিল। অনলাইনের গর্ভ থেকে বেরিয়ে যেদিন অফলাইন মাধ্যমিক শুরু হল, সেদিনই সকালে অসহ্য প্রসবযন্ত্রণা নিয়ে হরিশচন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হতে হল আনজারাকে। ডাক্তার সময় দিয়েছিলেন, ১৬ মার্চ সন্তান হবে। কিন্তু, কিরণবালা বালিকা বিদ্যালয়ের এই পড়ুয়ার গর্ভে থাকা সন্তানেরও যেন ভূমিষ্ঠ হওয়ার তাড়া ছিল। সোমবার সকাল সাতটাতেই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন আনজারা। কিন্তু, সন্তানকে জন্ম দেওয়ার আনন্দ, শরীরের ক্লান্তিবোধ- কোনও কিছুই তাঁকে মাধ্যমিকে বসা থেকে আটকাতে পারেনি।
প্রসবের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সদ্যোজাত কন্যাসন্তানকে কোলে নিয়েই তিনি পরীক্ষা দিতে বসে যান। এই বছর তাঁদের পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল হরিশচন্দ্রপুর হাইস্কুলে। তবে, এই প্রসূতি পরীক্ষার্থীকে হরিশচন্দ্রপুর হাইস্কুলে যেতে হয়নি। শিক্ষার প্রতি তাঁর ভালোবাসা দেখে প্রশাসন হাসপাতালেই পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। পুলিশের সামনেই হাসপাতালে চলল পরীক্ষা।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/03/malda_mother_2_corrected.jpg)
পরে আনজারা বলেন, 'সকালেই আমার কন্যাসন্তান হয়েছে। কিন্তু, আজই আমাদের পরীক্ষা শুরু। পরীক্ষা তো দিতেই হবে। হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। আশাকরি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে ভবিষ্যতে কিছু একটা করতে পারব।' লেখাপড়ার প্রতি আনজারার এই ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ প্রশাসনও।
হরিশচন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত বিএমওএইচ শুভেন্দু ভক্ত বলেন, 'আমাদের হাসপাতালে একজন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ভর্তি ছিল। সোমবার সকালে সে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। তার পরেও হাসপাতালে থেকে পরীক্ষা দিতে চেয়েছে। এই জিনিসটা খুব ভালো লেগেছে। আমরাও সমস্ত রকম ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যাতে তাঁর কোনও অসুবিধা না-হয়।'