হাতে আধুনিক পিস্তল, আর মোবাইলে। বারবার দেখানো হচ্ছে ঘরে মজুত রাখা হাতবোমা, পেট্রলবোমা এবং অ্যাসিডের বোতল। সোশাল মিডিয়ায় এভাবেই অস্ত্রশস্ত্র দেখিয়ে রীতিমতো পুলিশ প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে হুমকি দিল পুরাতন মালদার মুচিয়া এলাকার এক ব্যক্তি। যা ঘিরে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় মালদা জুড়ে।
গত তিন দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবির ভাইরাল হওয়া দেখেই নড়েচড়ে বসে পুরাতন মালদা থানার পুলিশ। অবশেষে সোমবার গোপন সূত্রে অভিযান চালিয়ে মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ডুমুরতলার নেমুয়া এলাকার বাড়ি থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃত ওই ব্যক্তি মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সক্রিয় বিজেপি কর্মী বলে পরিচিত। ধৃতের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে নাইন এমএম পিস্তল, কয়েকটি পেট্রোল বোমা এবং তাজা বোমা। এছাড়া উদ্ধার হয়েছে একটি অ্যাসিডের বোতল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিজেপির সক্রিয় কর্মী বলে পরিচিত ছিল ধৃত ব্যক্তি দেব বল্লভ (৪৬)। ওই বিজেপি কর্মীর স্ত্রী রিতা বল্লভ সংশ্লিষ্ট এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য। তিনি দীর্ঘ কয়েক মাস আগে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন। তারপর থেকেই স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে আলাদা থাকেন রিতাদেবী। কিন্তু নিজের বাড়িতেই দেব বল্লভ নামে ওই বিজেপি কর্মী একাই থাকতেন। যদিও তাঁর পরিবারের বক্তব্য, স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকেই মানসিক অবসাদে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন দেব বল্লভ। সেই কারণেই হয়তো তিনি এই ধরনের কাজ করেছে।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরে সোশাল-মিডিয়ায়-ভাইরাল হয় দেব বল্লভ নামের ওই ব্যক্তির একটি ছবি। যেখানে ওই ব্যক্তি এক হাতে পিস্তল, অপর হাতে বোমা দেখিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে খুনের হুমকি দিচ্ছে। এমনকি সংবাদমাধ্যমের কর্মীদেরও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি সোশাল-মিডিয়ায়-ভাইরাল হওয়ার পরই তদন্ত শুরু করে পুরাতন মালদা থানার পুলিশ। শেষ পর্যন্তকে অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করা হয়।
এদিকে এই ঘটনার পর পুরাতন মালদায় শাসক এবং বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের মহিলা সভানেত্রী তথা পুরাতন মালদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৃণালিনী মণ্ডল মাইতি বলেন, 'এটা বিজেপির কালচার, তা আবারও প্রকাশ্যে চলে এসেছে। মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিজেপির কর্মী হিসেবে পরিচিত দেব বল্লভ নামের ব্যক্তি ঘটনায় আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে । অভিযুক্তের যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় সেই দাবি জানাবো।'
মালদার বিজেপির জেলার দক্ষিণ সাংগঠনিক সহ-সভাপতি তাপস গুপ্ত বলেন, 'ওই ব্যক্তি বিজেপির সাথে যুক্ত নয়। বরঞ্চ ওই ব্যক্তির স্ত্রী এখন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। কাজেই শাসকদলের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পারিবারিক অশান্তিকে কেন্দ্র করে এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে হয়তো। অথচ তৃণমূল নিজেদের অস্বস্তি এবং দায়ভার এড়াতেই বিজেপির ওপর দোষারোপ করছে। এতে কোনো লাভ হবে না।'