মালদার স্কুলে বন্দুকবাজের গ্রেফতারের ঘটনায় আদালতে যাওয়ার মুখে সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন ধৃত দেব বল্লভ । তাঁর দাবি, মোটা টাকার বিনিময়ে বিহার থেকে বন্দুক কিনেছিলেন তিনি। বিহারের কিছু মাফিয়ার সঙ্গেও নাকি তাঁর যোগাযোগ আছে। তারপরই পরিকল্পনা করেই স্কুলে বন্দুক নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন দেব ওরফে রাজু বল্লভ। বৃহস্পতিবার দুপুরে ধৃত দেব বল্লভকে মালদা আদালতে পেশ করেছে পুলিশ। ধৃত দেভ বল্লভকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়েছে।
এদিন আদালতের যাওয়ার পথে বেশ হাসিমুখেই পুলিশি ঘেরাবন্দীর মধ্যে যেতে দেখা গিয়েছে বন্দুকবাজ দেব বল্লভকে। সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে কথা বলার সময় মনের মধ্যে তার কোন যে অনুতাপ ছিল না, তার হাসিমুখের চেহারাতেই পরিষ্কার ফুটে উঠেছে।
পুরাতন মালদা থানার মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চন্দ্রমোহন হাইস্কুলে বুধবার দুপুরে বন্দুক, বোমা এবং ভোজালি নিয়ে সপ্তম শ্রেণীর ক্লাস ঘরে গিয়ে তাণ্ডব চালাই অভিযুক্ত দেব বল্লভ। এই ঘটনার পর পুলিশি তৎপরতায় অভিযুক্ত ধরা পড়ে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে স্কুলের নিরাপত্তা নিয়ে। কীভাবে একজন অচেনা মানুষ স্কুলের ক্লাস ঘরে অস্ত্র হাতে এবং নিজেকে মানব বোমা বলে ঢুকে পড়েছিল, তা নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এদিন পুলিশের ঘেরাটোপে আদালতে যাওয়ার মুখে ধৃত দেব বল্লভ চিৎকার করে বলেন, 'আমার কাছে যে বন্ধুক আছে সেটা পুলিশ জানত।' এই কথা বলতে বলতেই ধৃতকে ধাক্কা দিয়ে আদালতের জিআরও অফিসে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে বুধবারে পুরাতন মালদার চন্দ্রমোহন হাইস্কুলের বন্দুকবাজ তান্ডবের ঘটনায় এখনও সংশ্লিষ্ট স্কুলে আতঙ্কের ছাপ রয়েছে। অন্যান্য দিনের থেকে এদিন পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার ছিল অনেকটাই কম। বন্দুকবাজের তাণ্ডবের পর এখনো থমথমে পুরাতন মালদা থানার মুচিয়ার চন্দ্রমোহন হাইস্কুল। স্কুলে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ বাহিনী।
স্কুলে বন্দুককাণ্ডে বুধবার রাতে মালদার পুলিশ সুপার তার নিজস্ব অফিসে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানিয়েছেন, এই ধরণের উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র বিহার অথবা ঝাড়খন্ড থেকেই সংগ্রহ করে থাকতে পারে অভিযুক্ত বন্দুকবাজ দেব বল্লভ। তবে এই ঘটনার পিছনে তার পারিবারিক সমস্যাই মূলত জড়িত রয়েছে। তবে স্কুলে ঢুকে এমন ঘটনা ঘটানেো বিষয়টা পরিকল্পনা মাফিক। আগ্নেয়াস্ত্র কার মাধ্যমে অভিযুক্ত দেব বল্লভ আমদানি করল সে ব্যাপারেও তদন্ত শুরু করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী স্কুলগুলো নিরাপত্তা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন। স্কুলে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার করতে কী ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন সেগুলো নিয়েজেলা পুলিশ প্রশাসন ইতিমধ্যে আলোচনা করেছে।
একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, দেড় বছর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্দুক হাতে প্রশাসনের কর্তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে হুমকি দিয়ে ভাইরাল হয়েছিল অভিযুক্ত দেব বল্লভ। সেই সময় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। উদ্ধার করা হয় একটি আগ্নেয়াস্ত্র। কিন্তু তারপরে ফের নতুন করে উন্নত মানের নাইন এমএম পিস্তল এবং দুটি ম্যাগাজিন অভিযুক্ত কোথা থেকে জোগাড় করল তা নিয়েই প্রশ্ন। এমনকী সে পেট্রোল বোমা বানাতে শিখলো কীভাবে, এসবের পিছনে কোনো জঙ্গি সংগঠনের মদত রয়েছে কিনা সে ব্যাপারেও পুলিশ খোঁজখবর করছে।