আবারও গণপিটুনির ঘটনা সামনে এল বাংলায়। চোর সন্দেহে গণপ্রহারে এক যুবককে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ঘিরে উত্তাল হল মালদা। গণপিটুনিতে মৃত্যুর প্রতিবাদে রবিবার মালদার কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগরে দফায় দফায় বিক্ষোভ প্রদর্শন চলে। ৩৪ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়দের একাংশ। কালিয়াচকে বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙচুরেরও অভিযোগ উঠেছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি সামলাতে শূন্যে গুলি চালায় পুলিশ। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ঠিক কী অভিযোগ?
বাইক চোর সন্দেহে গত ২৬ জুন শানাউল শেখ নামে বছর চব্বিশের এক যুবককে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শানাউলকে মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। রবিবার মালদার বৈষ্ণবনগরের বাড়িতে শানাউলের দেহ নিয়ে আসা হয়। শানাউলকে মারধরের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। যা দেখার পরই রবিবার ওই এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। দোকানপাট, সরকারি বাসে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। বৈষ্ণবনগর থানার সামনেও বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়দের একাংশ। এ ঘটনার পরই এলাকায় পুলিশের বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলেই জানিয়েছেন এক পুলিশ আধিকারিক।
আরও পড়ুন: ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় বেদম মার, অভিযোগ এবার ক্যানিং লোকালে!
এ ঘটনা প্রসঙ্গে নিহতের মা সুফিয়া বলেন, ‘‘ও ইটভাটায় কাজ করত। বুধবার কয়েকজন ওকে ডেকে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। ওর স্ত্রী ও ৬ মাসের শিশুকন্যা রয়েছে। পরিবারে ওই একমাত্র রোজগার করত’’।
নিহতের বাড়িতে রবিবার যান সুজাপুরের কংগ্রেস বিধায়ক ঈশা খান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘নিহতের পরিজনরা দেহ নিয়ে বৈষ্ণবনগর থানার সামনে বিক্ষোভ দেখাতে চেয়েছিলেন। বিক্ষোভ থামিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করার কথা বলি ওঁদের। শানাউলের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি’’। বৈষ্ণবনগরের বিজেপি বিধায়ক স্বাধীন কুমার সরকারও অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: শিশুচোর সন্দেহে ফের ‘গণপিটুনি’, এবার খাস কলকাতায়
শানাউলের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ও সরকারি চাকরি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র। এ প্রসঙ্গে তিনি শাসক শিবিরকে বিঁধে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে কি গণপিটুনির সূত্রপাত ঘটছে? এজন্য দায়ী রাজ্য সরকার। আমরা লজ্জিত, যে বাংলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আমরা চাই, রাজ্য সরকার নিহতের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা সাহায্য করুক। সেইসঙ্গে পরিবারের সদস্যকে চাকরি দেওয়া হোক। পাশাপাশি অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবি জানাচ্ছি’’।
উল্লেখ্য, এর আগে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গণপিটুনির খবর সামনে এসেছে। গত ২০ জুন, বৃহস্পতিবার দুপুরের ট্রেনে ক্যানিং থেকে শিয়ালদহে আসছিলেন কয়েকজন মুসলিম যুবক। ওইদিনই মধ্য কলকাতায় একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কর্মসূচি ছিল। হিন্দু সংহতি নামে ওই সংগঠনের কয়েকশো কর্মী বিভিন্ন স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠেন। অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ ধরেই তাঁরা ওই যুবকদের উদ্দেশে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক স্লোগান দিচ্ছিলেন। ঢাকুরিয়া পেরনোর পর তাঁদের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে সরাসরি কটাক্ষ করা হয়। এরপর ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে জোর করা হয়। ওই সংখ্যালঘু যুবকেরা রাজি না হওয়ায় তাঁদের উপর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের কর্মীরা চড়াও হন বলে অভিযোগ। জিআরপি-র কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগপত্রে ওই যুবকেরা জানিয়েছেন, পার্ক সার্কাস স্টেশন আসা পর্যন্ত একটানা মারধর করা হয় তাঁদের। পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয়। এরপর স্থানীয়দের সাহায্যে তাঁরা পার্ক সার্কাসে নেমে পড়েন।
Read the full story in English