মমির জন্য বিশ্বজোড়া খ্যাতি মিশরের। প্রাচীন মিশরীয়রা নানান পদ্ধতি অবলম্বন করে মতদেহ সংরক্ষণ করত। হাজার হাজার বছর আগের মিশরীয় মমি এখনও অপরিবর্তিত, অক্ষয়। পরবর্তীতে বহু দেশে মমি তৈরির গবেষণাও চলেছে। সেই মমি তৈরির পরকল্পনা বাস্তবায়িত করতেই কী বাবা, মা, দিদি ও বোনকে হত্যা করল মালদার কালিয়াচকের তরুণ? ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ মনে করছে, মৃতদেহ সংরক্ষণের গবেষণা করতে গিয়েই এমন নারকীয় কান্ড ঘটাতে পারে ধৃত আসিফ মহম্মদ।
মালিদার কালিয়াচকের গুরুটোলা গ্রামে একই পরিবারের চারজনের মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হতবাক স্থানীয়রা। খুনের ঘটনায় একের পর এক তথ্য হাতে আসার পর জেলা পুলিশের কর্তারা রীতিমত চমকে উঠেছেন। পরিবারের চারজনকে নৃশংসভাবে খুন করার পর মৃতদের শরীরে বিভিন্ন কেমিকেল মিশিয়ে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে কফিনবন্দী করে ঘরের ভিতরে পুঁতে রেখেছিল আসিফ। সম্ভবত মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ১৮ বছরের তরুণ ঘরে বসেই মৃতদেহ সংরক্ষণের গবেষণা শুরু করেছিল। তার জন্য কেমিকেল, কফিনের সাজসরঞ্জাম সবই ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার করে সংগ্রহ করেছিল। ঘটনার পর্যায়ক্রম, আসিফ ও রাহুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের অনুমান, সম্ভবত মমি তৈরির গবেষণা মাথায় চড়েছিল ওই তরুণের।
আরও পড়ুন, পানীয়ে মাদক মিশিয়ে খুন, ঘরেই সুড়ঙ্গ, কালিয়াচক খুনে প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য
অভিযোগ, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাবা জাওয়াদ আলি (৫৩), মা ইরা বিবি (৩৬), দিদা আলেকনুর বেওয়া (৭০) ও বোন রিমা খাতুনকে (১৬) মর্মান্তিকভাবে খুন করে আসিফ। অপরাধ ঢাকতে গল্পও ফেঁদেছিল সে। আত্মীয়রা তাঁদের ফোনে খোঁজ করলেই আসিফ বলে দিত বাবা, মায়েরা মহারাষ্ট্রে চলে গিয়েছে। দু-তিন বছর পরে ফিরবে। এদিকে ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। একসঙ্গে চারজনকে খুন করা সম্ভব নয়, তাই আসিফ খাবারের সঙ্গে মাদকজাত কিছু মিশিয়ে বেহুঁশ করেছে বলে পুলিশের অনুমান। শিহরণ জাগানো এই ঘটনায় আটক আসিফ পুলিশি তদন্তে একাধিকবার বলেছে সে ঘরে বসেই নানা ধরনের গবেষণা করত।
কফিনের সরঞ্জাম কিনতে আসিফ অনলাইনের সাহায্য় নিয়েছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, অনলাইনের মাধ্য়মেই সে প্লাইবোর্ড কেনার অর্ডার দিয়েছিল। সেই প্রাইবোর্ড দিয়েই তৈরি করেছিল কফিন। সেই কফিনেই মৃতদেহের ওপর নানা ধরনের কেমিকেল মিশিয়ে ঘরের ভিতর গর্ত করে পুঁতে রেখেছিল। সূত্রের খবর, আসিফ পুলিশকে জানিয়েছে, শরীরে কোনও আঘাত ছাড়াই সে খুন করার পরিকল্পনা করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল মমির মতো দেহগুলি সংরক্ষণ করা। এই ঘটনায় পাঁচটি ল্যাপটপ, ছয়টি সিসি ক্যামেরা, নানা কেমিক্যাল, ডাটাকার্ডসহ নানান সামগ্রী উদ্ধার করেছে পুলিশ। করোনা আবহে ঘরে বসে কেনা-কাটা সমস্তই করেছে অনলাইনে। খাবারও কিনতো অনলাইনেই। আসিফের মানসিক পরিস্থিতিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন