লকআপে এক বন্দীকে পিটিয়ে মারার অভিযোগে ক্ষুব্ধ মৃতের পরিবার ও গ্রামবাসীদের একাংশ পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দিল। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের তিনটি গাড়ি। এমনকি উত্তেজিত জনতার হাতে আক্রান্ত হয়েছেন এসআই সোমনাথ অধিকারী (৫২)। হামলায় ওই পুলিশ অফিসারের মাথা ফেটেছে গিয়েছে। তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। রবিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে ইংরেজবাজার থানার মিল্কি পুলিশ ফাঁড়িতে। পুলিশ ফাঁড়িটি আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। পুলিশ আবাসন থেকে অফিস ঘর, সবই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।
এদিকে পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় রাতেই মালদা থেকে দমকলের দুটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে যায়। প্রায়ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে খবর পেয়ে জেলার পদস্থ পুলিশ কর্তারা মিল্কি পুলিশ ফাঁড়িতে তদন্তে যান। এই ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত সাত জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
আরও পড়ুন: সংকল্প যাত্রা উতরাতে সব্যসাচীতেই আস্থা বিজেপির
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম এনামুল খান (৫০)। তার বাড়ি নিয়ামতপুর গ্রামে। রবিবার লক্ষী পূজো উপলক্ষে নিয়ামতপুরের বিভিন্ন জায়গায় জুয়ার ঠেক চলছিল। সেই খবর পেয়ে মিল্কী পুলিশ ফাঁড়ির অফিসারেরা সিভিক ভলেন্টিয়ার এবং কনস্টেবলদের নিয়ে অভিযান চালায় নিয়ামতপুর এলাকায়। পুলিশি অভিযানে ধরা পড়ে যায় এনামুল খান নামে এক ব্যক্তি। তাকেই মিল্কি ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে আসে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের। এরপরই পুলিশ ফাঁড়িতে এনামুল খানের রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়। আর এই ঘটনায় পরিবারের লোকেরা এনামুল খানকে পুলিশ ফাঁড়ির লকআপে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। আর তাতেই ধুন্দুমার বেঁধে যায় ওই পুলিশ ফাঁড়িতে।
মৃতের এক ভাই জলিল খান বলেন, 'জুয়া খেলার অভিযোগে দাদাকে মিল্কী পুলিশ ফাঁড়ির অফিসারেরা ধরে নিয়ে গেল। সুস্থ ,স্বাভাবিক অবস্থায় দাদা গিয়েছিল। হঠাৎ করে তার কি করে মৃত্যু হতে পারে তা ভেবে পাচ্ছি না । পুলিশ বলছে দাদা নাকি অসুস্থ ছিল । যদি অসুস্থই হতো তাহলে ফাড়ি সংলগ্ন মিল্কি গ্রামীণ হাসপাতাল রয়েছে সেখানে কেন তাকে ভর্তি করা হলো না। বরঞ্চ দাদার মৃতদেহ ফেলে পুলিশ ফাঁড়ি থেকে কর্মীরা উধাও হয়ে যায়। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন পরিবারের লোকেরা। পুলিশ দাদাকে লকআপে পিটিয়ে খুন করেছে। এই ঘটনার পর পরিবারের লোকেরা গিয়ে ফাঁড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখায়। কিন্তু কেউ পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর চালায় নি। পুলিশের ওপর হামলাও করে নি । কারা পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দিল এবং ভাঙচুর করল তা বলতে পারব না।'
প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ফুলবাড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বাবুল শেখ বলেন, 'এনায়েতপুর এলাকায় রবিবার রাতে তিনটি পুলিশের ভ্যান জুয়া খেলার ঠেকগুলোতে অভিযান চালিয়েছিল। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে এনামুল পড়ে গিয়েছিল। সে সময় তাকে মারধর করা হয়েছিল। পুলিশ এনামুলকে ধরে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি পুলিশ ফাঁড়িতে এনামুলের মৃত্যু হয়েছে। যখন আমরা যায় দেখি ফাঁড়িতে কোন পুলিশ নেই । এনামুলের দেহ পুলিশ ফাঁড়ির একটি বেঞ্চের উপর রাখা রয়েছে। পরিবারের লোকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারপরে এই ভাঙচুর এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে।'
আরও পড়ুন: ঠিক যেন সিনেমা! রাজ্যে শিশু উদ্ধার ঘিরে হইচই
এদিকে মিল্কি পুলিশ ফাঁড়ির এক অফিসারের কথায়, 'জুয়া খেলার অভিযোগে এনামুলকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু সে অসুস্থ ছিল তা আমরা জানতাম না । হঠাৎ করেই ওই ব্যক্তি নিজেকে অসুস্থ বোধ করে। এরপরই মিল্কি গ্রামীণ হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে তার মৃত্যু হয়। এরপরই মৃতের পরিবারের লোকেরাই ফাঁড়িতে এসে পুলিশকর্মীদের উপর হামলা চালায়। গাড়ি ভাঙচুর করে এবং ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।'
এদিকে সমগ্র বিষয়টি নিয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে । এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত জনকে আটক করেছে ইংরেজবাজার থানার মিল্কি ফাঁড়ির পুলিশ। পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, 'পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, অফিসারকে মারধর এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এই ঘটনার পিছনে জড়িতদের খোঁজে এলাকাজুড়ে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে।'