একটি ঘরের মধ্যে কলার ধরে বেদম মারধর করা হচ্ছে মালদা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান স্বপন মিশ্রকে! সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন ছবি ভাইরাল হতেই জেলা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্বপনবাবু তৃণমূল পরিচালিত মালদা জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মধ্যক্ষও ছিলেন। বর্তমানে তিনি শাসক দলের জেলা নেতা বলেই পরিচিত।
আর তাকে ঘিরেই এমন মারধরের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই এখন রাজনৈতিক শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ওই তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন জেলা পরিষদের কর্মধ্যক্ষ স্বপন মিশ্রকে যেভাবে মারধর করা হচ্ছে তার একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিও অনেকের মোবাইলে ছবি ঘুরপাক খাচ্ছে।
কী অভিযোগে মারধর?
তৃণমূলের দোর্দদণ্ডপ্রতাপ নেতা স্বপন মিশ্র। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ট হিসেবেও পরিচিত। প্রাথমিকে চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল নেতা স্বপন মিশ্রে বিরুদ্ধে। ২০১২ সাল থেকে স্বপন মিশ্র মালদা জেলা তৃণমূলের একাধিক পদ সামলেছেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মালদা জেলা পরিষদের আসন থেকে জয়ী হয়ে তিনি কর্মধ্যক্ষের পদ সামলেছেন। এমনকী ২০১৩-১৪ সালে মালদা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান করা হয় তাঁকে।
কিন্তু গত দেড় বছর ধরে স্বপন মিশ্রের বিরুদ্ধে প্রাথমিকে চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে লাখ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে জেলাজুড়ে নানা কথা বলাবলি চলে।
এবারের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্বপন মিশ্রকে তৃণমূলের প্রার্থীকরা হয়নি। গুঞ্জন যে, পাওনাদারদের হাত থেকে বাঁচতে তিনি এতদিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন।
আর এই ঘটনার পর সম্প্রতি ওই তৃণমূল নেতাকে বেধড়ক মারধরের ছবি ভাইরাল হতেই এখন রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে।
পালাবদলের পরই প্রবল ক্ষমতাশালী স্বপন-
রাজ্য রাজনীতিতে পালা বদলের পর থেকেই মালদহের কাজিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা স্বপন মিশ্র বেশ ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিলেন। মালদা শহরের সানি পার্কে তাঁর বাড়িও ছিল বলে জানা যায়। কিন্তু বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গিয়েছে যে, প্রাথমিকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলার পর পাওনাদারদের চাপে পড়ে নিজের ওই বাড়ি তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন।
কী আছে ওই ভাইরাল ছবিতে?
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি ঘরের মধ্যে ওই তৃণমূল নেতাকে বসিয়ে চড় , থাপ্পর মারছে এক যুবক। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে স্বপন মিশ্রকে মারধরের পাশাপাশি চাকরির নামে যে সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছিল তা ফেরৎ চাওয়া হচ্ছে। আর এমন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই বিভিন্ন মহলে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
দূরত্ব বাড়াতে মরিয়া তৃণমূল!
এখন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযুক্ত স্বপনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে মরিয়া। তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা উত্তরবঙ্গ ক্রীড়া উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য প্রসেনজিৎ দাস বলেছেন, 'স্বপন মিশ্রের ব্যাপারে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখেছি। অনেকের মুখেও শুনেছি। তিনি যদি এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকেন দল তার দায়িত্ব কোনওভাবেই নেবে না। বর্তমানে তিনি তৃণমূলের সঙ্গে কোনরকমভাবেই জড়িত নন। তিনি কোথায় কখন কী দুর্নীতি করেছেন সেই জবাব তাকেই দিতে হবে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোনরকম ভিত্তিহীন অভিযোগ উঠলে তা বরদাস্ত করা হবে না।'
কী বলছে বিজেপি?
বিজেপি জেলার সাধারণ সম্পাদক তথা ইংরেজবাজার পুরসভার কাউন্সিলর অম্লান ভাদুড়ি বলেন, 'দুর্নীতিতে কারা যুক্ত এখন তা পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে। প্রাথমিকে চাকরি দেওয়ার নাম করে যে কত টাকা তছরুপ হয়েছে তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিও থেকেই মানুষ পরিষ্কারভাবে জানতে পারছে। ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়, মানুষ এর জবাব দেবে।'