বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হলো দুইজনের। মঙ্গলবার সাতসকালে ঘটনাটি ঘটেছে মালদা শহরের সবথেকে বড় বাজার হিসাবে পরিচিত নেতাজি পুরো মার্কেটে। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওই বাজার এলাকায় পরপর ছয়টি দোকান আগুনে পুড়ে পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। ঘটনাস্থলে দমকলের ৮টি ইঞ্জিন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে করার চেষ্টা করে। সেই আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ধোয়াতে শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ে একজন দমকল কর্মী।
এদিকে এই ঘটনার খবর জানতে পেরেই নেতাজি পুরো মার্কেটে এলাকায় পৌঁছায় ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী সহ মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের কর্তারা। প্রায় চার ঘন্টার চেষ্টায় কোনওরকমে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। দমকল কর্মীদের প্রাথমিক অনুমান ওই বাজারের আতশবাজির একটি গোডাউনের আচমকা বিস্ফোরণের জেরেই এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে। যাতে মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পরিস্থিতির সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে পৌঁছায় মালদার ডিএসপি প্রশান্ত দেবনাথ। মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত দুইজনের নাম মঙ্গলু ঋষি (৪৫) এবং গণেশ কর্মকার (৪২)। মঙ্গলুর বাড়ি মালদা শহরের কুলিপাড়া এলাকায়। ওপর মৃতের বাড়ি বাগবাড়ি ৫২ বিঘা এলাকায়। যে আতশবাজির গোডাউনে প্রথমে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে, সেই গোডাউনের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ এবং দমকল অফিসারদের বক্তব্য, এদিন সাতসকালে ওই আতশবাজির দোকানের গোডাউনে কার্বাইড ড্রাম নামানোর সময় আচমকা বিস্ফোরণ ঘটে। সেই বিস্ফোরণেই মঙ্গলু ঋষি নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পেশায় ভ্যানচালক মঙ্গলু ওই গোডাউনের কাজ করতে গিয়েছিল। তাঁর সঙ্গে ছিল আরও একজন শ্রমিক গণেশ কর্মকার। বিস্ফোরণের সময় আগুনে ঝলসে যায় ওই ব্যক্তিও। কোনওরকমে দীর্ঘ চেষ্টার পর দুইজনকে দমকলের কর্মীরা উদ্ধার করে মালদা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়। প্রথমে সেখানে মঙ্গলু ঋষিকে মৃত বলে ঘোষণা করে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা। পরে মৃত্যু হয় অপর এক শ্রমিক গণেশ কর্মকারের।
এদিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন, এখনই মন্তব্য করার কোনও সময় নয়। আগে আগুন নিভিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে পুলিশ ও দমকলের কর্মীরা। পরবর্তীতে কী পরিস্থিতিতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছিল সেটি পুরসভার পক্ষ থেকেও ময়নাতদন্ত করে দেখা হবে। কোথাও কোনও দোষত্রুটি থাকলে অবশ্যই সেক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন ফের বিস্ফোরণ, বোমা ফেটে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল তৃণমূলকর্মীর বাড়ির একাংশ
মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জয়ন্ত কুন্ডু বলেন, একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়িক দোকান সম্পূর্ণভাবে পুরে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কয়েক কোটি টাকার সামগ্রী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কীভাবে এই দুর্ঘটনাটি ঘটল পুলিশ সেটা তদন্ত করে দেখছে। মালদা মার্চেন্ট চেম্বারের পক্ষ থেকেও পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, শুধু কার্বাইড বিস্ফোরণে এত বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে তাতে সন্দেহ রয়েছে। প্রচন্ড গরমের কারণে ওই আতশবাজির গোডাউনে মজুত থাকা বারুদ এবং কার্বাইড গরম হয়ে যাওয়ার কারণে অথবা কোনওরকম অগ্নিসংযোগ থেকেই এই বিস্ফোরণ ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। ওই গোডাউনটি আতসবাজি কতটা আইনসম্মত ভাবে রাখার অনুমতি রয়েছে সেটিও তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। তবে কোনও কিছুই এখনই পরিষ্কারভাবে বলা যাচ্ছে না। পুরো বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ।
মালদার পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানিয়েছেন, কীভাবে এত বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটল তা অবশ্যই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি পুরো বিষয়টি নিয়েও তদন্ত শুরু করা হয়েছে।