হবিবপুর ব্লকের মঙ্গলপুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধাকান্তপুর গ্রামের বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, বেহাল রাস্তা পাকা করার দাবি এবং টাঙন নদীর উপর স্থায়ী সেতুর দাবিতে ভোট বয়কট করা হয়েছিল। কিন্তু এদিন ভোট শেষ হয়ে যাওয়ার পর গভীর রাতে পুলিশ যথেচ্ছভাবে লাঠিচার্জ করেছে। এমনকি যারা ভোট বয়কট করেছেন, সেই সব বিক্ষোভকারীদের বাড়িতে ঢুকেও মারধর করা হয়েছে। আর এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার রাধাকান্তপুরের শতাধিক মহিলারা আবার বিক্ষোভে দেখাতে থাকেন।
এদিকে বুধবার সকাল থেকেই আবারও মঙ্গলপুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধাকান্তপুর গ্রামের মহিলারা পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বিক্ষোভ দেখান। এদিন সংশ্লিষ্ট গ্রামের বিক্ষোভকারী মহিলা জোৎস্না মন্ডল, ঝরনা বিশ্বাস বলেন, "গ্রামের বেহাল রাস্তা পাকা করা এবং এলাকার টাঙন নদীতে স্থায়ী সেতুর দাবি নিয়েই বহুবার পঞ্চায়েত ও প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তাই মঙ্গলবার লোকসভা ভোট হওয়া সত্ত্বেও আমরা ভোট দিতে যাইনি। কিন্তু আমাদের সামনেই বহিরাগত তিনজন মহিলা রাধাকান্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২২ নম্বর বুথে গিয়ে ভোট দেয়। ওরা এই গ্রামের বাসিন্দা নন, তাহলে ভোট দিল কি করে? এই নিয়েই প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। এব্যাপারে প্রিজাইটিং অফিসার থেকে প্রশাসনের কাছে জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের কর্তারা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার পাশাপাশি লাঠিপেটা করেছে। আমরা কাউকে ঘরবন্দী করে রাখিনি।"
এদিকে বুধবার সকাল থেকেই মঙ্গলপুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের জগন্নাথপুর, রাধাকান্তপুর, রামকৃষ্ণপুর গ্রামের রাস্তাঘাট রীতিমতো জনশূন্য ছিল। রাতের পুলিশি তাণ্ডবের অভিযোগ তুলেও এদিন গ্রামবাসীরা প্রতিবাদে সোচ্চার হন। অনেকেই প্রশাসনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে দোকানপাঠ বন্ধ রাখেন। বিক্ষোভকারী মহিলাদের বক্তব্য, "গ্রামের সার্বিক উন্নয়ন হয়নি। একটা রাস্তা পাকা করে দিতে কত দিন সময় লাগে? সেতুর দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত প্রশাসন কোনও উদ্যোগ নেয়নি। মঙ্গলবার ভোটের দিন শতাধিক গ্রামবাসী ভোট বয়কট করে অবস্থান বিক্ষোভ করেন। এমনকি অধিকাংশ গ্রামবাসীরা ভোটের দিন অরন্ধন পালন করেছিলেন। ভোট দিতে যাইনি বলেই পুলিশ কেন্দ্রীয় বাহিনীদের নিয়েই লাঠিপেটা করেছে। অনেকজন মহিলা আঘাত পেয়েছেন। এব্যাপারেই প্রতিবাদ জানিয়ে এদিন হবিবপুরের বিডিও অংশুমান দত্তের বদলির দাবিও জানিয়েছেন বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীরা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২২ নম্বর বুথে প্রায় ১৩০০ ভোটার রয়েছেন। যারা এদিন ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। গ্রামবাসীরা টাঙ্গন নদীর উপর যে ব্রিজের দাবি করেছেন, সেটি তৈরি করতে গেলে ন্যূনতম ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি ওরা যে রাস্তার দাবি করছে, সেটিও হঠাৎ করে হওয়া সম্ভব নয়। এজন্য সরকারি কিছু নির্দেশিকা রয়েছে। সেকথাও গ্রামবাসীদের জানানো হয়েছিল। সঠিক সময়ে গ্রামবাসীদের দাবি মতো এই কাজগুলি হবে বলেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু এদিন ভোট বয়কটে সামিল হওয়া বিক্ষোভকারীরা আচমকায় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইটিং অফিসার থেকে ভোট কর্মীদের তালা বন্দি করে রাখে। বিপুল সংখ্যক মানুষের জমায়েত হতে শুরু করে। এমনকি একটা সময় পরিস্থিতি লাগামছাড়া হতে থাকে। পুলিশ ও কর্তব্যরত কেন্দ্রীয় বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইঁট ছোড়া হয়। তাদেরকে হেনস্তা ও মারধর করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতেই কড়া পদক্ষেপ নিতে হয়েছে প্রশাসনকে। তবে যারা ভোটের কাজে ওই কেন্দ্রে যুক্ত ছিলেন অথচ সংশ্লিষ্ট বিধানসভার ভোটার সেই রকমই তিনজন ইডিসি ভোট দিয়েছেন।
জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, "গ্রামবাসীদের দাবীর বিষয়টি অবশ্যই প্রয়োজনমতো তদারকি করে দেখা হবে। তবে এভাবে ভোটকেন্দ্রে উত্তেজনা ছড়ানো সঠিক কাজ নয়। ভোট কর্মীদের আটকে রেখে যে পরিস্থিতি তৈরি করেছিল কিছু বিক্ষোভকারীরা, তাতে যে কোনও সময় একটা অঘটন ঘটে যেতে পারত। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনেই সেইসব ভোট কর্মীদের উদ্ধার করেছে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী। পুলিশও ভোট কর্মীদের হেনস্তা করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট বুথে তিনটে ভোট হয়েছে"।