শুধুমাত্র উপস্থিত বুদ্ধির জোরেই শ'য়ে শ'য়ে যাত্রীর প্রাণ বাঁচাল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। খুদে পড়ুয়ার নজিরবিহীন কীর্তিকে কুর্ণিশ জানিয়েছে রেলও। তাকে পুরস্কৃত করার চিন্তা-ভাবনাও চলছে। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না করলে শিয়ালদহ থেকে শিলচরগামী আপ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের কয়েকশো যাত্রীর জীবনহানির আশঙ্কা পর্যন্ত ছিল। রেললাইনের নীচে ওঁত পেতে ছিল 'বিপদ', তা দেখেই মুহূর্তে মাথায় যেটা এসেছিল সেটাই করেছে ওই খুদে পড়ুয়া। তাতেই বড়সড় বিপদ এড়ায় আপ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। শুক্রবার দুপুর ৩.৩০ মিনিট নাগাদ মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের ভালুকা স্টেশন রোড এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে।
পঞ্চম শ্রেণির ওই পড়ুয়া কী করেছিল যা ঘিরে এত আলোচনা?
রেলের মালদা ডিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার দুরন্ত গতিতে আপ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ছুটে যাচ্ছিল। মালদার ভালুকা রোড স্টেশন পেরোতেই বিপত্তি অপেক্ষা করছিল ট্রেনটির জন্য। সেই সময় ট্রেন লাইনের পাশ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বছর আটেকের ছাত্র মুরসেলিম। সে হঠাৎই লক্ষ্য করে ভালুকা স্টেশন রোড থেকে সামান্য দূরে আপ লাইনের নীচে বেশ কিছু অংশের মাটি সরে গিয়েছে। তড়িঘড়ি নিজের গায়ে থাকা লাল গেঞ্জি খুলে ট্রেনের ট্র্যাকে দাঁড়িয়ে ছাত্রটি সংকেত দিতে থাকে চালককে।
লাল সংকেত দেখে চালক এমারজেন্সি ব্রেক কষে ট্রেনটি দাঁড় করান। বড়সড় বিপদ থেকে রক্ষা পায় আপ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। জীবন বেঁচে যায় ট্রেনের কয়েকশো যাত্রীর। ঘটনার পরপরই সেখানে ছুটে যান রেলকর্মীরা। তড়িঘড়ি লাইনের নীচের অংশের মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ট্রেনটি গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেয়।
পরনের লাল গেঞ্জি উড়িয়ে এক স্কুলছাত্রের শিয়ালদহ থেকে শিলচরগামী আপ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দাঁড় করানোর এই খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। খুদে ছাত্রের উপস্থিত বুদ্ধির জেরে বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে ট্রেন রক্ষা পাওয়ার খবর ভাইরাল হতেই রীতিমতো হতচকিত হয়ে পড়েছেন পূর্ব রেলের মালদা ডিভিশনের পদস্থ কর্তারাও।
আরও পড়ুন- ‘ঘেন্না ধরে গিয়েছে, আর নয়!’, নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর জয়ের প্রধান কারিগরই বিজেপি ছাড়ছেন
হরিশ্চন্দ্রপুরের ভালুকা রোড স্টেশন সংলগ্ন এলাকার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মুরসেলিমের উপস্থিত বুদ্ধির জন্য তাকে পুরস্কৃত করার চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন পূর্ব রেলের মালদা ডিভিশন কর্তৃপক্ষ। শুক্রবারের এই ঘটনার পর মুরসেলিমের বাড়িতে এখন বহু মানুষ যাচ্ছেন তাঁকে অভিনন্দন জানাতে।
মুরসেলিম হরিশ্চন্দ্রপুরের কড়িয়ালী বারিনওয়ার মিশন বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তার পরিবারে বাবা-মা, ভাই-বোন রয়েছে। মুরসেলিম নামে ওই ছাত্র বলেছে, "শুক্রবার দুপুরে বাড়ি ফেরার সময় ভালুকা রোড স্টেশন থেকে সামান্য দূরে রেল লাইনের নীচে বড় একটি গর্ত দেখতে পাই। ঠিক সেই সময়েই দূরে একটি ট্রেন আসতে দেখি। তখনই নিজের লাল গেঞ্জি খুলে ওড়াতে থাকি। আমার লাল গেঞ্জি ওড়ানো দেখে ট্রেনটি দূরে থেমে যায়। পরে পুলিশের লোকজন আসে।"
আরও পড়ুন- মমতা ঘনিষ্ঠ তারকা বিধায়ক গেলেন বাড়িতে, সিপিএমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রাক্তন সাংসদ কি তৃণমূলে?
পূর্ব রেলের মালদা ডিভিশনের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, ওই ছাত্রের এমন কাজে তাঁরাও গর্বিত। বৃষ্টির জেরেই কোনওভাবে ওই জায়গাটির মাটি আলগা হয়ে তা সরে গিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। রেলের পক্ষ থেকে ওই স্কুল ছাত্রকে পুরস্কৃত করার চিন্তাভাবনা চলছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।