Advertisment

লক্ষ্য লোকসভা ভোট, বিজেপির 'জাতীয়তাবাদ'-এর কোন দাওয়াই বাছল তৃণমূল?

মা-মাটি-মানুষের স্লোগান থেকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস বিতর্কে, তৃণমূল হাঁটছে একই লাইনে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Mamata Banerjee

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (এক্সপ্রেস ফোটো)

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) শাসনকালে বাংলার রাজনীতিতে বাঙালিয়ানা এবং বাংলা নিয়ে গর্বের চোরাস্রোত বইছে। বাংলার মনীষীদের বার্ষিকী উদযাপন থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের, 'মা-মাটি-মানুষ (মা-মাটি-মানুষ)' স্লোগান আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিল সেই চোরাস্রোতের কথা। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে 'বাঙালি আর বহিরাগত' দ্বন্দ্ব তুলে ধরেছিল বাংলার শাসক দল। যা তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির হিন্দুত্ববাদ-জাতীয়তাবাদের রাজনীতিকে গর্বের সঙ্গে রুখে দিয়েছে। তার মধ্যেই এবার উঠে এল 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' পালন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বাঙালিয়ানার রাজনীতি।

Advertisment

রাজভবনের ২০ জুনকে টেক্কা দিয়ে ১৫ এপ্রিল বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত রাজ্যের শাসক দলকে রাজনৈতিক জ্বালানি জোগাবে, তা না-বললেও চলে। বিজেপি একবছর আগেই ২০ জুনকে 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' পালনের দাবি জানিয়েছিল। এবছর, তা কার্যকরী করার চেষ্টা করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। পালটা যুক্তি দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বোঝানোর চেষ্টা করেছে, রাজ্যপাল আর গেরুয়া শিবির বাংলার আবেগ বোঝে না।

এই ব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্য, ২০ জুন রাজ্যের জনগণের কাছে দুঃখ এবং রক্তপাতের জন্য পরিচিত। কারণ, এই দিনেই বঙ্গ ভঙ্গের প্রস্তাব পেশ হয়েছিল। যার মাধ্যমে পরবর্তীতে গড়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গ এবং পূর্ব পাকিস্তান। ২০ জুন, ১৯৪৭-এ বেঙ্গল অ্যাসেম্বলি তার আইন প্রণেতাদের দুটি পৃথক সভা দেখেছিল। একটি ভারতে থাকার পক্ষে। অন্যটি পাকিস্তানের সঙ্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত।

সেই প্রসঙ্গ মাথায় রেখে মমতা ব্যানার্জি রাজ্যপালকে যে চিঠি লিখেছেন, তাতে বলা হয়েছে, 'রাজ্যটি (পশ্চিমবঙ্গ) কোনও নির্দিষ্ট দিনে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সর্বোপরি ২০ জুন তো নয়ই। বরং, দেশ কুখ্যাত র‌্যাডক্লিফ অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল, যাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। বিদায়ী ঔপনিবেশিক এবং সাম্রাজ্যবাদী সরকারের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভের পর, পশ্চিমবঙ্গে আমরা কখনও প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে কোনও দিনকে স্মরণ করিনি বা উদযাপন করিনি। বরং, আমরা দেশভাগকে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের ফল হিসেবে দেখেছি, যা সেই সময়ে প্রতিহত করা যায়নি।'

দলগতভাবে এই সম্পর্কে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ রাজ্যপালকে 'বাঙালি ঐতিহ্য ধ্বংস' এবং 'বাংলার ইতিহাস ও মানুষকে অপমান করার' দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। আর, সিপিএম বিষয়টিকে বিজেপির 'ইতিহাস বিকৃতি'র চেষ্টা হিসেবে দেখছে বলে জানিয়েছে। যদিও বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন যে, ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের মধ্যে কোনও ভুল নেই।

আরও পড়ুন- চন্দ্রযান নিয়ে রাজনৈতিক খোঁচা মুখ্যমন্ত্রীর! কী লিখলেন বার্তায়?

শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন নিয়ে বিতর্কে বাঙালিয়ানা প্রতিষ্ঠার চেষ্টাই নয়। চলতি মাসের শুরুর দিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সরকারি পরিচালিত স্কুলগুলোতে প্রস্তাবিত তিন ভাষার নীতি প্রয়োগ নিয়েও সমালোচনার মুখে পড়েছিল। রাজ্য সরকার তার শিক্ষানীতিতে বলেছে যে তিন ভাষার সূত্র বাংলা বাধ্যতামূলক করার জন্য করা হয়নি। বরং, শিক্ষার্থীরা তাদের প্রথম ভাষা স্বাধীনভাবে বেছে নিতে পারবে। কিন্তু, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ব্যাখ্যা যে, শিক্ষার্থীরা তাদের প্রথম ভাষা স্বাধীনভাবে বেছে নিলেও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ভাষা নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী 'জনসংখ্যার ধরণ' এবং 'জাতিগত বৈশিষ্ট্য'-র ওপর নির্ভর করবে। অর্থাৎ, যা ঘুরিয়ে বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক করারই শামিল বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

tmc Mamata Banerjee loksabha election 2024
Advertisment