দুর্গা পুজো উদ্যোক্তাদের জন্য বিরাট সুখবর। বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলোর আর্থিক সহায়তার অঙ্ক বাড়ালো রাজ্য সরকার। এদিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুজো নিয়ে সমন্বয় ও প্রশানিক বৈঠকে বিরাট ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Advertisment
এবার বারোয়ারি দুর্গা পুজো কমিটিগুলো শারদীয়া উৎসবে ৭০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা পাবে। মঙ্গলবার এই ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সাহায্যের পরিমান গতবার ছিল ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ এবার আরও ১০ হাজার টাকা করে সহায়তার অঙ্ক বাড়ানো হল। এদিন অনুদান ঘোষণার সময় মুখ্যমন্ত্রী মজা করে বলেন, 'এবার কি টাকার অঙ্কটা হাফ করে দেব? সরকারের কিন্তু একদম টাকা নেই। যখন প্রয়োজন পড়বে সাহায্য করবেন তো?' হাজির পুজো উদ্যোক্তারা তখন সমবেতভাবে মমতার কথায় সাহায্যের আশ্বাস দেন। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'এবার তাহলে অনুদান বাড়িয়ে ৭০ হাজার করে করা হল। বড় পুজো কমিটিগুলো ছোট উদ্যোক্তাদের পুজোকে সাহায়্য করবেন। হাতে অর্থ থাকলে আবার পরে ভাববো অনুদান বাড়ানোর কথা।'
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রাজ্য ৪২ হাজার ২৮টি পুজো কমিটিকে অনুদান দিয়েছিল। এ জন্য খরচ হয়েছিল ২৪০ কোটি টাকা। এবার শারদীয়া অনুদান বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এই খাতে খরচের পরিমানও বাড়ছে। খরচ বেড়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে বলে প্রাথমিক অনুমান।
Advertisment
এছাড়া পুজো কমিটিগুলোর বিদ্যুতের বিলে রাজ্য সরকারের তরফে দুই তৃতীয়াংশ মকুব করার কথাও এদি ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি পুজো কমিটিগুলোকে সরকারের বিভিন্ন দফতর বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং দেবে। পর্যটন, শিল্প দফতর সহ অন্যান্য দফতরে সরকারি কাজের হোর্ডং বারোয়ারি পুজোকে দেবে। ফলে বিজ্ঞাপণ বাবদও আয় বাড়তে চলছে পুজো কমিটিগুলোর।
২০২২ সালে পুজোয় রাজ্য সরকার কেন অনুদান দেবে, তা নিয়ে আদালতে মামলা গড়িয়েছিল। জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চে। অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত আরোপ করেছিল হাইকোর্ট। কারা অনুদান পাবে এবং কী ভাবে- তা ঠিক করে দিয়েছিল আদালত। এ বারেও বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, 'টাকা দিয়ে পুজো কমিটিগুলো আমদের কেনা হচ্ছে না। ক্লাবগুলোর জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য এই টাকা সহায়তা দেওয়া হয়।'
পুজো উদ্যোক্তাদের মমতার পরামর্শ, 'পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য স্কুলের পড়ুয়াদের স্বেচ্ছাসেবক রাখতে হবে। মণ্ডপে প্রবেশ ও বাহিরের আলাদা পথ রাখতে হবে। সেই সঙ্গে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাও রাখতে হবে। বিসর্জনের জায়গায় আলো ও ব্যারিকেডের ব্যবস্থা করায় বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। জরুরি পরিস্থিতির জন্য চিকিৎসক, নার্স, অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা এখন থেকেই করে রাখতে হবে জেলায় জেলায়। পুজোর সময় হেল্পলাইন নম্বরগুলো কার্যকর রাখতে হবে। পুজো কমিটিগুলিতে বার বার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য মাইকে ঘোষণা করতে হবে। জনকল্যাণমূলক হোর্ডিং রাখতে হবে। সরকারের বিভিন্ন দফতর বিজ্ঞাপন হিসাবে হোর্ডিং দিলেও তা কম দামের হবে। সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রেখে, নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে শারদীয় উৎসব পালন করতে হবে।'
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবছর কমিটিগুলোকে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন করতে হবে ২৬ অক্টোবরের মধ্যে। লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন ২৭ অক্টোবর রেড রোডে হবে পুজোর কার্নিভ্যাল।