যাদবপুরের ঘটনায় ছাত্রমৃত্যু ইস্যুতে সিপিএমকে তোপ দাগলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে ইমাম-মোয়াজ্জেমদের সভায় তিনি তীব্র ভাষায় যাদবপুরের সিপিএম অনুমোদিত ইউনিয়নকে আক্রমণ করেন। সমালোচনা করেন সিপিএম এবং তাদের ছাত্র সংগঠনের রাজনীতির। সম্প্রতি যাদবপুরে এক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তার পরই যাদবপুর ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশ। বিভিন্ন সংগঠন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। এর আগেই ঘটনার পরপরই পুলিশি রিপোর্টের ভিত্তিতে সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সোমবার নেতাজি ইন্ডোরের সভায় তিনি সেই যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'যাদবপুর নিয়ে আগে আমরা গর্ববোধ করতাম। যাদবপুরে কীভাবে একটা ছাত্রকে সিপিএমের ইউনিয়ন মেরে ফেলল। এরা জীবনে বদলাবে না। এত রক্ত নিয়েও এরা বদলায়নি। বছরের পর বছর রক্ত নিয়ে খেলেও এদের শান্তি নেই।' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অভিযোগের তীব্র বিরোধিতা করেন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক। সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, 'যাদবপুরে যারা ধরা পড়ছে, তারা দিনে নকশালপন্থী ছাত্র সংগঠন, রাতে তৃণমূল করে। মুখ্যমন্ত্রী ওই অভিযুক্তদের বাঁচাতেই এসএফআইয়ের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন।'
সভা থেকে তিনি সিপিএমের পাশাপাশি বিজেপিকেও একহাত নেন। ডাক দেন, 'বিজেপি হঠাও ইন্ডিয়া বাঁচাও।' কংগ্রেস বা সিপিএম তাঁকে যতই বিজেপিপন্থী বলুক না-কেন, গেরুয়া শিবিরকে তোপ দেগে সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'বাংলাকে ভাতে মারতে চায় মোদী সরকার। একদলের সরকারের নীতি চলবে না। আমরা সকলের উন্নতির পক্ষে। মোদী সরকার আর ৬ মাস থাকবে। আর একটু ৬ মাস কষ্ট করতে হবে আপনাদের, তারপর সব ম্যানেজ করে নেব।'
সম্প্রতি, লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বেঙ্গালুরুতে জোট বেঁধেছে ২৬টি বিরোধী রাজনৈতিক দল। তারা জোটের নাম দিয়েছে ইন্ডিয়া। দেশ বাঁচানোর সংকল্পের কথা মাথায় রেখে এই নামকরণ করা হয়েছে বলেই বিরোধীরা দাবি করেছে। সেই জোটে তৃণমূলও আছে। রয়েছে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসও। কিন্তু, তারপরও জোটসঙ্গী বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসকে সোমবারের বক্তব্যে রেয়াত করেননি তৃণমূল সুপ্রিমো। বিজেপির সঙ্গে তিনি এই দুই সর্বভারতীয় জোটসঙ্গী দলকেও এক আসনে নিশানায় রেখে বুঝিয়ে দেন, জোট শুধু সর্বভারতীয় রাজনীতিতে। রাজ্যে তৃণমূল আছে তাদের 'একলা চলো' নীতিতেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'একসঙ্গে বোর্ড গঠন করছে বাম-কংগ্রেস-বিজেপি। হিংসা লাগানোর জন্য টাকা দেওয়া হচ্ছে। বাংলায় সিপিএম-কংগ্রেসকে আমাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে বিজেপি।'
আরও পড়ুন- স্কুলে পোস্টিং মামলায় রাজ্যের স্বস্তি? বিচারপতি গাঙ্গুলির নির্দেশ নিয়ে কী বলল সুপ্রিম কোর্ট?
সভায় ইমাম-মোয়াজ্জেমদের ভাতা বাড়ানোর কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান ইমাম ও মোয়াজ্জেমদের ভাতা ৫০০ টাকা করে বাড়ানো হচ্ছে। তার ফলে ইমামদের ভাতা বেড়ে হল ৩,০০০ টাকা। মোয়াজ্জেমদের ভাতা বেড়ে হল ১,৫০০ টাকা। তাঁরা কোনওকিছু করতে চাইলে ঋণও পেতে পারেন। ইমাম ও মোয়াজ্জেমদের সঙ্গেই সভায় পুরোহিতদের ভাতাও ৫০০ টাকা করে বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তার ফলে পুরোহিতদের ভাতা বেড়ে হল ১,৫০০ টাকা। তিনি বলেন, 'রাজ্যে তিনটি অর্থনৈতিক করিডর হচ্ছে। তাই রাজ্য ছেড়ে বাইরে যাওয়ার কথা কাউকে ভাবতে হবে না।'
তবে, মুখ্যমন্ত্রীর ভাতা বাড়ানোর ঘোষণায় খুশি নন ইমাম-মোয়াজ্জেমরা। এই ব্যাপারে রাজ্য ইমাম সংগঠনের তরফে বেঙ্গল ইমামস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, 'আমরা চাই ইমামদের ভাতা ২,৫০০ টাকা আর মোয়াজ্জেমদের ১,০০০ টাকা বাড়ানো হোক। দরকার হলে আগামী মাসে ফের ইমাম-মোয়াজ্জেমদের নিয়ে সভা ডাকুন। এটাই আমাদের অনুরোধ।'