Advertisment

নিজের স্বপ্নের প্রকল্পের অন্ধকার ভবিষ্যতের ইঙ্গিত খোদ মমতার! বিকল্প নিয়েও প্রশ্ন

আচমকা কেন সিদ্ধান্ত বদল মুখ্যমন্ত্রীর?

IE Bangla Web Desk এবং Rajit Das
New Update
mamata banerjee chaa sundari scheme tea workers bleak future , মমতা ব্যানার্জী চা সুন্দরী অন্ধকার ভবিষ্যৎ

মকাইবাড়ি চা বাগানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

চা শ্রমিকদের ঘিঞ্জি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা থেকে মুক্তি দিতে বছর তিনেক আগে 'চা সুন্দরী প্রকল্প' চালুর ঘোষণা করা হয়েছিল রাজ্যের তরফে। এই প্রকল্পটি মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প বলেও জানোন হয়। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবারের পাহাড় সফরে চা শ্রমিকদের নিয়ে একটি ঘোষণায় 'চা সুন্দরী' প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। সদ্য সমাপ্ত পাহাড়় সফরে মুখ্যমন্ত্রী, চা বাগানের শ্রমিকদের আবাসন প্রকল্পের অধীনে তালিকাভুক্ত করার পরিবর্তে বাড়ি তৈরির জন্য ১.২০ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গত রবিবার আলিপুরদুয়ারের সভায় ৬,৬০০ চা বাগান শ্রমিক পরিবারকে জমির পাট্টা বিলি করেন মমতা। বলেছিলেন, 'আমরা ইতিমধ্যে চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য চা সুন্দরী প্রকল্পের অধীনে বাড়ি তৈরি করেছি। কিন্তু আমি ভাবছিলাম যে একটি বাড়ি তৈরির জন্য একটি পরিবারকে ১.২০ লক্ষ টাকা দেওয়াই ভাল। সুতরাং, আমরা উত্তরবঙ্গের (চা বাগান শ্রমিকদের) পরিবারকে জমির পট্টাসহ এই টাকা দেব।'

Advertisment

সপ্তাহব্যাপী উত্তরবঙ্গ সফরে মুখ্যমন্ত্রী ২৬ হাজার চা বাগান শ্রমিক পরিবারকে জমির পাট্টা বিলি করেছেন।

২০২০ সালে তৃণমূল সরকার 'চা সুন্দরী' প্রকল্পের সূচনা করেছিল। রাজ্য বাজেট পেশের সময় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানিয়েছিলেন যে, এই প্রকল্প মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'স্বপ্নের প্রকল্প'। অমিত মিত্র দাবি করেছিলেন, প্রকল্পের নাকরণও করেছিলেন মমতা নিজেই। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজ্য সরকার এই প্রকল্পে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, রাজ্য আবাসন দফতর এই প্রকল্পের নোডাল এজেন্সি হবে, শ্রম দফতরের সঙ্গে মিলে 'চা সুন্দরী' প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরি করবে।

আরও পড়ুন- ফলে গেল সুকান্তের কথাই? ভোটের মুখে বঙ্গে ‘অতি সক্রিয়’ অনুপম বেজায় ফাঁপড়ে!

বাজেট প্রস্তাব অনুসারে, রাজ্যের ৩৭০টি চা বাগানে নিযুক্ত প্রায় ৩ লক্ষ স্থায়ী কর্মী 'চা সুন্দরী' প্রকল্প থেকে উপকৃত হবেন। যাইহোক, সূত্র জানিয়েছে যে ২০২০-২১ আর্থিক বছরে, উত্তরবঙ্গের চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য ৪,৫০০ ঘর তৈরি করতে বরাদ্দ বাজেটের মধ্যে মাত্র ১০৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছিল। তারপরে, তারপর থেকে প্রতি বছর এই প্রকল্পের জন্য একটি নামমাত্র বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।

রাজ্যের আবাসন দফতরের একজন সিনিয়র আধিকারিক বলেছেন, 'উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার অর্থ হল যে চা সুন্দরী প্রকল্প বাতিল করা হবে এবং চা বাগানের শ্রমিকদের বাড়ি তৈরির জন্য জমি পাট্টা এবং ১.২০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।'

অর্থ দফতরের এক সিনিয়র আধিকারিকের দাবি, প্রকল্পটি শ্রমিকদের মনে মত ছিল না। কারণ এর অধীনে নির্মিত বাড়িগুলি চা বাগানের কাছাকাছি ছিল না। তাঁর কথায়, 'চা সুন্দরী প্রকল্পের অধীনে নির্মিত বাড়ির অবস্থান সুবিধাভোগীদের জন্য সবসময় সুবিধাজনক ছিল না। বাড়িগুলো চা বাগান থেকে অনেক দূরে তৈরি করা হয়েছে। বেশিরভাগ শ্রমিক চা বাগানে বাস করে যেখানে চা সুন্দরী বাড়ির চেয়ে বেশি জমি রয়েছে। সেখানে তারা কৃষিকাজ বা পশুপালন করতে পারে, যা চা সুন্দরীর অধীনে নির্মিত বাড়িতে সম্ভব ছিল না। স্কিমটি তাদের যা প্রস্তাব করেছিল তাতে বেশিরভাগ শ্রমিকই খুশি ছিলেন না।'

আরও পড়ুন- দেবতা জ্ঞানে পুজো গ্রামেরই এক কৃষককে! অপার শ্রদ্ধায় এমন অসীম ভক্তির কারণ জানেন?

সিপিআইএম প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন সিটু নেতা জিয়া আলম বলেছেন যে, এই প্রকল্পটি চা বাগানের শ্রমিকরা কখনই সমর্থন করেনি কারণ এটি তাদের বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা ছিল। তাঁর কথায়, 'চা সুন্দরী প্রকল্পের অধীনে, রাজ্য সরকার চা বাগান থেকে শ্রমিকদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা করেছিল। চা বাগানের কর্মীরা কখনই এই ধারণাকে সমর্থন করেননি। এখন সরকার প্রকল্পটি বাতিল করতে যাচ্ছে। এর ফলে যেসব বাড়ি তৈরি করা হয়েছে সেগুলো পরিত্যক্ত হয়ে যাবে। জনগণের টাকা থেকে মুনাফা করার জন্য সরকার ঠিকাদারের ব্যবস্থা করে দিয়েছে সেঠা স্পষ্ট হল।'

অতীতে, রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, 'চা সুন্দরী প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এখন সেই দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন এবং বাড়ি তৈরির জন্য জমির পাট্টা এবং ১.২০ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন।' তাঁর আরও দাবি, 'চা বাগানের জমির জন্য পাট্টা দেওয়ার কোনও আইনি অধিকার রাজ্য সরকারের নেই। চা বাগানগুলো সরকারি জমি নয়। এটি ইজারা দেওয়া জমি এবং ইজারা দেওয়া জমির জন্য পাট্টা দেওয়া বেআইনি। তাছাড়া চা শ্রমিকরা উদ্বাস্তু নয়। তারা হয় সেখানকার স্থানীয় বা স্বেচ্ছায় শ্রমিক হিসেবে এসেছে। অভিবাসী শ্রমিকদের পাট্টা দেওয়ার কোনও নিয়ম নেই।'

Mamata Banerjee darjeeling
Advertisment