করোনা মোকাবিলায় রীতিমতো রণংদেহী মেজাজে দেখা গেল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি জানান এ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলার বিভিন্ন অঞ্চলকে স্পর্শকাতর এবং অতি স্পর্শকাতর তকমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই এলাকা থেকে করোনা নির্মূল করতে অতন্দ্র প্রহরার কথাও উল্লেখ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার বৈঠকের শুরুতেই হাওড়া এলাকা নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "হাওড়া এখন খুব স্পর্শকাতর এলাকা হয়ে পড়ছে। মূলত শিবপুর, সাঁকরাইল এবং হাওড়া শহর এলাকায় ঝুঁকি বেশি।প্রয়োজনে হাওড়ায় বাজারের কাছে সশস্ত্র পুলিশ ফোর্স নামান হতে পারে।হাওড়ার মতো একই ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে কলকাতার বিভিন্ন এলাকাতেও (এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এলাকার নাম করা হয়নি)।" এমনকি বাজার করার ক্ষেত্রে এদিন চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছেন মমতা। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, "মাস্ক না পরে বাজারে ঢোকা যাবে না। বাজারে একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি যাওয়া যাবে না। বাজার থেকে বেরনোর সময়ও হাত স্যানিটাইজ করতে হবে।"
আরও পড়ুন- যে যতোই লাটসাহেব হোক, সীমান্ত থেকে কাউকে ঢোকানো যাবে না: মমতা
তবে এমন কড়া নিয়ম যে তিনি হাওড়ার সুবিধার্থেই করেছেন তাও উল্লেখ করে মমতা বলেন, "আমি হাত জোড় করে অনুরোধ করছি আপনাদের। আপনাদের রক্ষা করতেই এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছি আমি।বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাড়ির বাইরে না বেরনোর আবেদন করছি।" তবে মানুষের পাশে থাকতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। তিনি এও জানিয়ে দেন, "পরিস্থিতি তেমন হলে পুলিশ বাড়ি বাড়ি খাবার পৌছে দেবে।গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হলে খুব বিপদ।"
এই বৈঠক থেকে জেলাশাসকদের উদ্দেশেও কড়া নির্দেশ মমতা। তিনি বলেন, "জেলাশাসকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতে হবে। যারা খেতে পাচ্ছেন না, তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় আড্ডা, বাজার, মেলামেশা বন্ধ করতে হবে।প্রতিদিন প্রত্যেক হাসপাতাল পরিদর্শন করতে হবে জেলাশাসকদের। রেশন দোকানগুলির উপরেও নজর রাখতে হবে। তবে অবশ্যই নিজেকে সুরক্ষিত রেখে। দরকারে এসপি, ডিএমকে ২৪ ঘন্টা কাজ করতে হবে।" এরপর তিনি বলেন, "রাজ্যে যেন কেউ অভুক্ত না থাকে।"
হাওড়ার দিকে বিশেষ নজর দিতেও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। নির্দেশের সুরেই বলেন, "হাওড়াকে ১৪ দিনের মধ্যে রেড থেকে অরেঞ্জ জোনে ফিরতে হবে। পুর্ব মেদিনীপুর ইতিমধ্যেই রেড জোন থেকে অরেঞ্জ জোনে পরিণত হয়েছে।উত্তর ২৪ পরগণায় সমস্ত রোগের সূত্রপাত হচ্ছে।" তবে তিনি এও জানান, " শিলিগুড়িতে অনেক বাইরের লোক যাতায়াত করে। ওটা সীমান্ত এলাকা। তাই ওখানে লকডাউন আরও কঠোরভাবে পালন করতে হবে।লকডাউনে যারা বাইরে আছেন তাঁদের আনা সম্ভব নয় রাজ্যে। দয়া করে কেউ লবি করবেন না। লকডাউন ভাঙা চলবে না।"
এদিকে লকডাউনের দ্বিতীয় পর্যায়ে জুটশিল্প খোলার ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছিলেন মমতা। এদিন বৈঠক থেকে তিনি বলেন, "কোনও শিল্প চালু করতে হলে মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। উনি মনে করলে চালু হবে। এমনিতেই ১৫ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে জুটমিল শুরু করার বলা হলেও রেড জোনে ৫ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।"
পাশাপাশি তিনি এও বলেন যে জনবহুল এলাকায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি করা হবে না। একটু ফাঁকা ও বিচ্ছিন্ন এলাকায় তা তৈরি হবে। রাজ্যর তরফে অনেক প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ১৫ এপ্রিল থেকে ফলপ্রসু করতে হবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন