Mamata on young and old conflicts in TMC: গত কয়েকমাস ধরেই তৃণমূলে বয়সসীমা বিতর্ক তুঙ্গে। এরমধ্যেই 'সেনাপতি' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ মহলে নিজের কর্মসূচি ডায়মন্ড হারবারে সীমাবদ্ধ রাখার ইচ্ছেপ্রকাশ তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ বিতর্কে ঘি ঢেলেছিল। এরপর নতুন বছরের শুরুর দিনে দলের প্রতিষ্ঠাদিবসে এই বিতর্ক অন্যমাত্রা পায়। রীতিমত অস্বস্তি বাড়ে রাজ্যের শাসক শিবিরের। ঘটনার দিন দশেকের মাথায় ঘাস-ফুলের বয়সসীমা বিতর্কে মুখ খুলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে দলে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে সতর্ক করে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
লোকসভা ভোটের আগে প্রস্তুতি হিসাবে জেলা ধরে ধরে সাংগঠনিক পরিস্থিতি ও প্রস্তুতি পর্যালোচনা করা শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন ডাকা হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের। কালীঘাটে নেত্রীর বাড়ির এই বৈঠকে আগাগোড়া হাজির ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বৈঠকেই তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কী বলেছেন তৃণমূল নেত্রী?
তৃণমূলের রাশ কার হাতে থাকবে তা নিয়ে জোর চর্চা। অভিষেক গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তেমনভাবে কোনও দলীয় সাংগঠনিক কর্মসূচিতে না থাকায় বিতর্ক বেড়েছিল। এবার তাতে লাগাম পড়াতে মরিয়া পোড়খাওয়া নেত্রী মমতা। তৃণমূল সূত্রে খবর, এদিনের বৈঠকে দলনেত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তৃণমূল দলে গণতন্ত্র রয়েছে মানে যা নয় তাই করা যাবে, এমন চলবে না। কারও কিছু বলার থাকতেই পারে। তা দলের মধ্যেই বলতে হবে। দলের অনুমতি ছাড়া মিডিয়ার সামনে কিছু বলা যাবে না। সোশাল মিডিয়ায় দুমদাম পোস্টও করা যাবে না।
আরও পড়ুন- হেস্তনেস্ত চাইছেন অভিষেক, এবার জোড়া বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রিম আবেদন
বৈঠক শেষে মন্ত্রী তথা মেদিনীপুরের নেতা মানস ভুঁইয়া বলেছেন, 'নেত্রী সকলকে বলেছেন যেন ব্যক্তিগত মতামত বাইরে প্রকাশ করা না হয়। গনতান্ত্রিক দলে সংগঠনের ভিতরেই ব্যক্তিগত মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে সর্বস্তরে। সেটাকে মাথায় রাখতে হবে। ২০২৪ সালের ভোট মাথায় রেখে সকলে একযোগে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। এই লড়াইয়ে তৃণমূলের সকলস্তরের নেতা কর্মীদের কাছে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।'
আরও পড়ুন- ‘বেরিয়ে যান’, প্রাথমিক নিয়োগ মামলা থেকে এজি-কে সরালেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা
অর্থাৎ, তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্রদের এককথায় সতর্ক করে দিয়েছেন 'দিদি'। উল্লেখ্য, এই বিতর্কে সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়েছে তৃণমূলের রাজ্য মুখপত্র কুণাল ঘোষের নানা মন্তব্যে। যিনি তৃণমূলের অন্দরে 'সেনাপতি' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছের বলে পরিচিত। মুখে কারোন নাম নিলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে কুণাল ঘোষদেরকেই সমঝে থাকার বার্তা দিয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। তাহলে কী দলের রাজ্য মুখপাত্র পরিবর্ত হবে? উস্কে গেল সেই জল্পনাও।
জানা গিয়েছে, এদিনের বৈঠকে তেমন মুখ খোলেননি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূলে বিতর্কের ইতিকথা
বয়স্কদের কার্যক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলে নবীনদের পক্ষে সরব হন তিনি। এরপরই গত নভেম্বর মাসে তৃণমূলের বিশেষ অধিবেশন অভিষেকের না যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্ক হয়। কেন ওই অধিবেশনে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ছবি ছিল না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে আক্রমণ করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এরপর দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে ফের তার নিশানায় পড়েন সুব্রত বক্সি। আক্রমণ শানান তৃণমূলে প্রবীণ ব্রিগেডের অন্যতম সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও। এরপর গত রবিবার ডায়মন্ড হারবারের সভায় অভিষেক দাবি করেছিলেন দলে কোনও বিরোধ নেই। এদিন মমতার হুঁশিয়ারির পর আদৌ তৃণমূলের নবীন-প্রবীণ বিতর্কে ইতি পড়বে? সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।