Mamata Banerjee: আরজি কর কাণ্ডে উত্তাল দেশ। নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে পথে নেমে সোচ্চার সাধারণ মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। একদিকে আরজি কর কাণ্ডে যখন চাপ বাড়ছে রাজ্য সরকার তথা প্রশাসনের উপর ঠিক তখন ধর্ষণের মত ঘটনা রোধে কড়া আইন আনার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
আজ সকালেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায় ধর্ষণ বন্ধে কড়া আইন আনার প্রসঙ্গ টেনে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন। আর এদিনই বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি লিখে ধর্ষণের মত ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, 'দেশে ধর্ষণ, খুনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। যে তথ্য সামনে আসছে, তাতে দেখা যাচ্ছে সারা দেশে একদিনে প্রায় ৯০টির মতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। মহিলাদের নিরাপত্তা দায়িত্ব সকলের। এই নৃশংস ঘটনার অবসান দরকার। ধর্ষণের মত ঘটনাকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে। ফাস্ট ট্র্যাক স্পেশাল কোর্টে এই ধরনের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি যাতে হয় তার যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে'। পাশাপাশি ১৫ দিনের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।
< Sandip Ghosh: সন্দীপ ঘোষ ও ৪ ডাক্তারি পড়ুয়াকে নিয়ে শিয়ালদহ কোর্টে সিবিআই, আচমকা কীসের তৎপরতা? >
উল্লেখ্য আরজি কর কাণ্ডে আজ সকালেই নীরবতা ভাঙেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্ষণের বিরুদ্ধে তোলেন জোরালো সওয়াল। এক্স হ্যাণ্ডেলে এক দীর্ঘ পোস্টে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘গত ১০ দিনে আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় যখন গোটা দেশ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, সুবিচারের দাবি করছে। সেই সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ভারতের বিভিন্ন শহরে মাত্র ১০ দিনের মধ্যে ৯০০ জন মহিলা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এত কিছুর পরও অপরাধের কোনও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান বার করা গেল না কেন?’ পাশাপাশি অভিষেক তাঁর পোস্টে বলেছেন, ‘প্রতিদিন ৯০টি, প্রতি ঘণ্টায় চারটি, ১৫মিনিটে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন বলবৎ করা কতটা জরুরি তা স্পষ্ট। ৫০ দিনের মধ্যে গোটা বিচার প্রক্রিয়ার নিষ্পত্তি এবং দোষীরা যাতে যথাযথ শাস্তি পায়, তার জন্য আইন আনা হোক। কেন্দ্রের কাছে ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন চালু করার জন্য রাজ্য সরকারকেই ক্রমাগত চাপ দিতে হবে।’
আজ সুপ্রিম কোর্টে তিন বিচারপতির বেঞ্চে আরজি করের চিকিৎসক ধর্ষণ-খুন মামলার শুনানি হয়। বৃহস্পতিবার শুনানি শুরুর আগে সিবিআই এবং কলকাতা পুলিশ তাদের স্ট্যাটাস রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে মুখ বন্ধ খামে জমা দেয়। উল্লেখ্য আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা গ্রহণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
এদিন সুপ্রিম কোর্ট আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাজে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বেঞ্চ সিবিআই এবং কলকাতা পুলিশের দেওয়া তদন্তের স্ট্যাটাস রিপোর্ট খতিয়ে দেখছেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, চিকিৎসকরা কাজে না ফিরলে জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামো চলবে কীভাবে? প্রধান বিচারপতি বলেন, “প্রথমে আমরা তদন্তের রিপোর্ট দেখব। তার পরে রাজ্যের গঠিত সিট নিয়ে আদালত বিবেচনা করবে।” আরজি করে ভাঙচুরের ঘটনায় শীর্ষ আদালতে এদিন রিপোর্ট জমা দেয় রাজ্য।
মঙ্গলবার মামলার শুনানির সময়, ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং রাজ্য পুলিশের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন এবং আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ কুমার ঘোষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। আরজি করের ঘটনায় সিবিআই সঞ্জয় রায়, যিনি এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত তাকে এবং প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ সহ বেশ কয়েকজন জুনিয়ার চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এক তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণের প্রতিবাদে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ চলছে। সিবিআই এই মামলার তদন্ত করছে এবং অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে কয়েক ঘণ্টা ধরে জেরা করা হয়েছে। সিবিআই-এর স্ট্যাটাস রিপোর্টে তথ্য থাকতে পারে কতজন অভিযুক্ত চিকিৎসককে ধর্ষণ করেছে? ফরেনসিক রিপোর্টে কী তথ্য উঠে এসেছে? মামলায় প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ভূমিকা কী? অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে জিজ্ঞাসাবাদে কী কী প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে? পুলিশের তদন্তে কী ভুল হয়েছে?
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের (NMCH) অধ্যক্ষ হিসেবে সন্দীপ ঘোষের নিয়োগ বাতিল করেছে স্বাস্থ্য দফতর। পাশাপাশি গতকাল আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষের পদ থেকেও অপসারণ করা হয়েছে সুহৃতা পালকে। আরজি কর মেডিকেল কলেজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মানস কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে, আরজি কর মেডিকেল কলেজে প্রায় ১৫০ সিআইএসএফ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।