রাত পোহালেই কালীপুজো। আর আজই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে উদ্বোধন হলো দক্ষিণেশ্বর স্টেশন এবং মন্দিরের যোগসূত্র, রানি রাসমণি স্কাইওয়াকের। মন্দিরের সামনে ডালা বিক্রেতাদের আক্ষেপ, "আর ক'টা দিন আগে হলে কালীপুজোর ব্যবসাটা ভালো হতো।" উদ্বোধনের পর স্কাইওয়াকের মঞ্চ থেকেই বিজেপিকে খোঁচা মুখ্যমন্ত্রীর, "গেরুয়া পরলেই সাধু হয় না, মনটা সাধু হওয়া চাই, গেরুয়া রাস্তাতেও বিক্রি হয়। বিজেপির গেরুয়াদের দেখুন, যা ইচ্ছে করে বেড়ায়, আর ভাষণ দিয়ে বেড়ায়। ওরা নকল গেরুয়া।"
দক্ষিণেশ্বরের স্কাই ওয়াকের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় pic.twitter.com/MENNrTqo2c
— IE Bangla (@ieBangla) November 5, 2018
ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় বিকেল পাঁচটা। দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রাঙ্গণের চারিদিকে পুলিশ ব্যারিকেডের ওপারে উপচে পড়ছে দর্শনার্থীদের ঢল। তবে মন্দির নয়, স্কাইওয়াক দেখার জন্য ভীড় জমিয়েছেন তাঁরা। সাইরেন বাজিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এসে পৌঁছতেই সজাগ হয়ে উঠলেন সকলে। ফিতে কেটে তরতরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে, স্বভাবসিদ্ধ গতিতেই স্কাইওয়াক ধরে হেঁটে মন্দির প্রাঙ্গণে পৌঁছলেন তিনি। পুজো দিয়ে, নীল সাদা বেনারসী পরা মায়ের ছবি তুলে নিলেন নিজের ফোনে। তারপর মন্দির ঘুরে এসে উপস্থিত হলেন সভাস্থলে।
স্কাই ওয়াকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় pic.twitter.com/SbgWm2Tp8m
— IE Bangla (@ieBangla) November 5, 2018
আরও পড়ুন: মহানগরে একাধিক উড়ালপুল হবে, সৌজন্যের উদ্বোধনে বললেন মুখ্যমন্ত্রী
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় pic.twitter.com/p9OOfjcnGi
— IE Bangla (@ieBangla) November 5, 2018
এদিনের বক্তৃতার তীর ছিল গেরুয়া বাহিনীর দিকে। তাদের ধর্ম পালনের নৈতিকতাকে তুলোধোনা করলেন মমতা। বিজেপিকে কটাক্ষ করে হিন্দুধর্মের পাঠও দিলেন তিনি। "গেরুয়া বসনের অর্থ কী? তা রাজনীতির রঙ নয়, আসল গেরুয়ারা সন্ন্যাসী হয়, নকল গেরুয়ারা রাজনীতি করে। যারা ধর্ম নিয়ে বলে তারা ধর্ম নিয়ে এক ইঞ্চিও করে না। আমি ধর্মকে সম্মান করি, বিক্রি করি না।"
এদিন উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রী সহ দক্ষিণেশ্বরের অছি ও সহ সম্পাদক কুশল চৌধুরী। হাকিম ছিলেন চার বছর ধরে তৈরি হওয়া রাণি রাসমনি স্কাইওয়াকের ভারপ্রাপ্ত সেনাপতি। এই স্কাইওয়াক হবে কী না, তা নিয়ে হাইকোর্ট অবধি গড়িয়েছিল জল। বিরোধী পক্ষের নাম উল্লেখ না করে হাকিম এদিন বলেন, "জগাই মাধাই গদাই, তিন রাজনৈতিক দল হকারদের ভুল বুঝিয়ে আটকে দিতে চেয়েছিল স্কাইওয়াকের কাজ।"
ওই এলাকায় আগে যাঁদের দোকান ছিল, তাঁদের যাতে রুজি রোজগার নষ্ট না হয়, সেদিকে যথেষ্ট নজর ছিল বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। ১৩৭ টি স্টল তৈরি করা হয়েছে স্কাইওয়াকে। স্কাইওয়াক পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডালার দোকানদারদের, দেখভাল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কর্মকর্তাদের। উদ্বোধনের ম়ঞ্চ থেকে ৫০ জনের ১০০ দিনের কাজের ঘোষণা করলেন মমতা, যাঁরা দুবেলা পরিষ্কার করবেন স্কাইওয়াক। পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত মন্দিরকে ঢেলে সাজানোর কথাও তিনি ঘোষণা করেন এদিন।
ভাষণের মাঝখানে গলা তুলে হাকিমকে জিজ্ঞেস করেন, "উন্নয়েনে কত টাকা দিয়েছিলাম?" পাখি পড়ার মত হাকিমও তার হিসাব জানিয়ে দেন। সভার মাঝেই হঠাৎই গোটা পরিস্থিতি হয়ে উঠল বাঙালির অতি পরিচিত একটি চলচ্চিত্রের দৃশ্যের মত।
মুখ্যমন্ত্রী: জায়গাটা খারাপ হয়েছে না ভালো হয়েছে?
দর্শক: ভালো-ও-ও-ও
মুখ্যমন্ত্রী: এটা মানুষের কাজে লাগবে কী লাগবে না?
দর্শক: লাগবে-এ-এ-এ
পরিশেষে, দক্ষিণেশ্বরে পুলিশ স্টেশন বানানোর কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "মনে রাখবেন, যতই ঝড় ঝঞ্ঝা আসুক, আর যতই চক্রান্তের তুফান আসুক, বাংলার মেরুদন্ড ভাঙা অত সহজ নয়।"