মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় কৃতজ্ঞ মাদ্রাসা শিক্ষক শাহরুফ হালদার, কিন্তু সন্তুষ্ট নন। বৃহস্পতিবার তিনি জানান, তাঁর উপর হামলার পর এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। কিন্তু রেল পুলিশ এখনও পর্যন্ত একজন হামলাকারীকেও গ্রেফতার করতে পারে নি। তাঁর অভিযোগ, রেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা কে বৃহস্পতিবার শাহরুফ বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী আমাদের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের ঘোষণা করায় আমি কৃতজ্ঞ। ওঁকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই। এতে আমরা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হব ঠিকই, কিন্তু সার্বিকভাবে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বন্ধ হওয়া উচিত। আমরা আর কতদিন এভাবে মার খাব? আমাদের দাড়ি দেখে, পোশাক দেখে মারধর করা হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, দেশ থেকে সব মুসলিমকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে, এর প্রতিকার চাই।"
আরও পড়ুন, ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় বেদম মার, অভিযোগ এবার ক্যানিং লোকালে!
রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওই মাদ্রাসা শিক্ষকের অভিযোগ, তাঁরা তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী নন। শাহরুফ বলেন, "এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। এখনও একজনকেও ধরা গেল না! ওই যুবকেরা হিন্দু সংহতির পতাকা হাতে মারধর করেছিল। ওদের মাথায় হিন্দু সংহতি লেখা ফেট্টি ছিল। রেল কর্তৃপক্ষ চাইলে ওই সংগঠনের নেতৃত্বকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারতেন।"
রেল পুলিশের এক কর্তা এই প্রসঙ্গে এদিন জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহের বুধবার ক্যানিং থেকে ট্রেনে শিয়ালদহ আসছিলেন আরামবাগের একটি মাদ্রাসায় কর্মরত শাহরুফ। ওই একই ট্রেনে করে কলকাতায় তাঁদের সাংগঠনিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসছিলেন হিন্দু সংহতির নেতাকর্মীরা। অভিযোগ, তাঁদের একাংশ শাহরুফকে 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান দিতে জোর করে। শাহরুফ রাজি না হওয়ায় তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। হিন্দু সংহতির পাল্টা অভিযোগ, শাহরুফ-সহ কয়েকজন সংখ্যালঘু তাঁদের 'জয় শ্রীরাম' স্লোগান দিতে বাধা দিচ্ছিলেন। সেই থেকেই বচসা। এরপর ওই মুসলিম যুবকেরা পার্ক সার্কাস স্টেশনে নেমে কামরা লক্ষ্য করে পাথর ছোড়েন বলে দাবি করেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটি।
আরও পড়ুন, স্কুলশিক্ষকদের টিউশনি বন্ধ না হলে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানাবেন গৃহশিক্ষকরা
বুধবার বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। শাহরুফ-সহ আক্রান্ত তিনজন সংখ্যালঘু যুবককে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। হিন্দু সংহতির নেতা দেবতনু ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, "মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছিলেন, তিনি সংখ্যালঘুদের তোষণ করেন। কোনওরকম তদন্ত ছাড়া এভাবে টাকা বিলি করে ফের নিজের তোষণকারী ভাবমূর্তিকেই সামনে আনলেন তিনি। বাস্তবে ওই মাদ্রাসা শিক্ষকদের ছোড়া পাথরে আমাদের এক কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁর হাতে আটটি সেলাই পড়েছে।"