গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেড়ে পড়ার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২ জনের। আহত প্রায় ১৫। এখনও চলছে উদ্ধারকাজ। জানা গিয়েছে ধ্বংস্তুপের ভিতর এখনও আটকে রয়েছেন ৬ জন। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। রয়েছেন পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তারা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন তিনি। কথা বলছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বেআইনি নির্মানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেন, 'বহুতল নির্মাণের আগে আশেপাশের মানুষ জনের কথা ভাবা উচিৎ ছিল'। একই সঙ্গে তিনি কার্যত মেনেও নিয়েছেন "বেআইনি নির্মাণের জেরেই ঘটে গিয়েছে এত বড় দুর্ঘটনা"। এরপরই আহতদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার সকালেই দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেখানে গিয়ে উদ্ধারকাজ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি হাসপাতালেও গিয়ে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন। মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করে তিনি ।
এদিকে বিপর্যয়ের পরই স্থানীয় বাসিন্দারা অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে সরব হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই ঘটনা নিয়ে শোকপ্রকাশ করেছেন। এক্স হ্যান্ডলে করা পোস্টে তিনিও ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের কথা জানিয়েছেন।
হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিল মেয়র ফিরাদ হাকিম বলেন, বহুতল “উদ্ধার কাজ এখনও চলছে। ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।” এর পর অবৈধ নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা। তখন তিনি বলেন, “এটা পরে দেখব। আগে উদ্ধার কাজটা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হোক।”
অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, “এই বাড়ি প্ল্যান থাকতে পারে না। যাঁরা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আহতদের সকলেই পাশে টালির বাড়িতে থাকতেন। এক জনের ভুলে, অন্য জন শাস্তি পাচ্ছে। এত বড় বাড়ি এত সরু গলিতে কোনভাবেই হয় না।
গার্ডেনরিচে নির্মিয়মান বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, 'বাংলায় বেআইনি বিল্ডিং ডেভেলপমেন্ট এখন একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাউন্সিলর, এমএলএ ,এমপিরা টাকা খাচ্ছে। লোকাল নেতারা টাকা খাচ্ছে। রাজ্যে নির্মীয়মান ফ্লাইওভার ভেঙে পড়ে এখন নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে পড়ছে। এই যে দুর্নীতি হচ্ছে যেখানে অর্ধেক টাকা দিয়ে দিতে হচ্ছে লোকাল নেতাদেরকে, কাউন্সিলরদেরকে। কোন মতে ইট বালি দিয়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রকাণ্ড বহুতল। সেই জন্য সরকারকে সতর্ক হতে হবে। বিষয়গুলি নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার"।
গার্ডেনরিচের ঘটনায় ইতিমধ্যে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি এক্সে লেখেন, ‘‘গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচতলা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। এই এলাকাটি কলকাতার মেয়র এবং রাজ্যের মাননীয় পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ‘দুর্গ’ বলে পরিচিত। আমি পুলিশ, রাজ্যের মুখ্যসচিবকে বলব অবিলম্বে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে উদ্ধারকাজে নিয়োগ করতে। এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। আমার কাছে অনেক ফোন আসছে।’’