দীর্ঘ বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের ক্ষেত্রে সিঙ্গুরের ভূমিকা বিরাট। তৎকালীন বিরোধীনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছিল সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন। মমতা কথা দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এসে জমি ফিরিয়ে দেবেন। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর সেই বিরোধীনেত্রী হিসাবে দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতি পালন করতে সমর্থ্য হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কিন্তু, সিঙ্গুরের সেই ফিরিয়ে দেওয়া জমিতে যে কৃষিকাজ তেমন ভাল হচ্ছে না, বুধবার এ কথা স্বীকার করে নিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
এই মুহূর্তে টাটার ন্যানো কারখানার চিহ্ন পর্যন্ত নেই। ফিরিয়ে দেওয়া জমিতে চাষের উদ্যোগ নিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। তিনি নিজের হাতে সর্ষের বীজ ছড়িয়েছিলেন সিঙ্গুরের জমিতে। কিন্তু, তাহলেও আশাব্যঞ্জক ফল মিলেনি। বুধবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চাষ কমেছে সিঙ্গুরের ওই জমিতে। চাষের জন্য নানা সুযোগ সুবিধা প্রদান করলেও জোর করে চাষ করনো সম্ভব নয়, বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। এদিন প্রথমে সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী ও পরে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের প্রশ্নের জবাবেই এ মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, এবারের লোকসভা নির্বাচনে সিঙ্গুরে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: হালিশহরের দখল নিয়ে তৃণমূলকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ মুকুলের
বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, "সিঙ্গুরে মোট জমি ৯৯৭ একর। এর মধ্য়ে ফেরত দেওয়া হয়েছে ৯৫৫.৯০ একর জমি। চাষ শুরু হয়েছিল ৬৪১ একর জমিতে। ৪১.২১ একর জমির মালিককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সিঙ্গুরে মোট কৃষক ছিল ১৩ হাজার ৩৩০ জন। এর মধ্যে ইচ্ছুক কৃষক ছিল ৯ হাজার ৩৩৭ জন। তাঁদের জমির পরিমাণ ৭০২.৫১ একর। বাকি জমির অনিচ্ছুক চাষীর সংখ্য়া ৩৭১৬"। সিঙ্গুরের জমিতে যে চাষ কমে গিয়েছে, এরপরই সে কথা বিধানসভায় স্বীকার করে নেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, "প্রথমে ৬৪১ একর জমিতে চাষ করা শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরের বছরই কমে যায় চাষের জমির পরিমাণ। ২০১৮-১৯ সালে সিঙ্গুরে ৭৯২ জন কৃষক ২৬০ একর জমিতে চাষ করেন। অনেকেই চাষ করা ছেড়ে দেন"। তবে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, "আমি জমি ফিরিয়ে দিয়েছি। চাষের জন্য় সব ব্য়বস্থা করে দিয়েছি। আগের থেকে ২০১৮-১৯ সালে চাষ কমে গিয়েছে। চাষ করবে কি করবে না, সেটা তাঁদের ব্যাপার। তাঁদের বিষয়ে আমি ঢুকতে পারি না। তবে চাষের জন্য আমরা সবরকম সহযোগিতা করছি"।
এদিনই সাংবাদিক বৈঠকে সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেন, সিঙ্গুরে ৫০ একরের বেশি জমিতে চাষ হচ্ছে না। ১৯২০ বিঘা বা ৬৪০ একর জমিতে চাষ হচ্ছে। অর্থাৎ, সরকার বলছে ৩৬ শতাংশ জমিতে চাষ হচ্ছে না। শুধু জমি চাষ নয়, কৃষকদের আয় নিয়েও তথ্য় ভুল দিচ্ছে সরকার।