মঙ্গলবার দিঘায় দলীয় বুথ কর্মী সম্মেলনের মঞ্চেও হাওড়া ও রিষড়ার অশান্তি নিয়ে বাম বিজেপিকে দুষলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ কথা, 'বাইরে থেকে গুন্ডা এনে বিজেপি বাংলায় অশান্তির চেষ্টা করছে। কিন্তু ওরা জানে না, বাংলার মানুষ এসব অশান্তি পছন্দ করে না, তারা রুখে দাঁড়াবেই। বিজেপি বাইরে থেকে গুন্ডা এনে, অস্ত্র এনে বাংলায় অশান্তি করার চেষ্টা করছে। রামনবমীর মিছিলে বন্দুক হাতে নাচ! রাম কি ওর কানে কানে বলে গিয়েছিল, আমার পুজোয় অস্ত্র নিয়ে মিছিল করো? রাম তো প্রজাদের ভালবাসতেন, শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। তাহলে কেন তাঁর নামে পুজোয় অস্ত্র মিছিল হবে?' এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, 'এরকম তো সিপিএম করত।'
বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'মিটিং করে ইশার করছে নেতারা। এরা হিন্দুও নয় এরা খ্রিস্টানও নয়, এরা বিজেপির গুন্ডা। কোনওদিন দেখেছেন দুর্গাপুজোর মিছিল হয়। কোথা থেকে উঠে এসেছে কতগুলো বক ধার্মিক। রামের নাম বদনাম করছে। আমিও হিন্দু। আমি শান্তির হিন্দু। আমি স্বামী বিবেকানন্দের হিন্দু। এরা কারা?' মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, 'দাঙ্গা করতে এলে মেয়েদের হাতে হাতা খুন্তি যা আছে তা দিয়েই তেড়ে দিন। মেয়েরাই শক্তি।'
মুখ্যমন্ত্রী কথায়, 'ভাবছে মমতাকে হারানো যাচ্ছে না। তাই চরিত্রহনন করতে হবে। এই নন্দীগ্রামে আমার পা ভেঙেছিল। ওরা বুনো ওল হলে আমিও কচু। আমিও ভয় পাইনা আমি হুইল চেয়ার নিয়ে বেরিয়ে গেলাম। আমার পুলিশের ভাই-বোনেরাও হেল্প করেছিল। খেলা হবে স্লোগানে ওদের সবাই স্তব্ধ করে দিয়েছিল।'
এরপরই নাম না করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করেন মমতা। বলেন, 'দিদি ও দিদি, যখন পেলনা, তখন নন্দীগ্রাম লুঠ করল। আগামী দিনে প্রমাণ করব। আমি ছেড়ে কথা বলার মানুষ নই। প্রতিদিন শুনছি ভোটের পর হিংসা হয়েছে। ওই গদ্দারদের জন্য, যাদের খাইয়ে পরিয়ে মানুষ করেছি। ভাবে এখন যাই একটু দিল্লি দখল করে আসি। মানুষের ঘরে যেমন ভালো সন্তান জন্মায়, তেমনি কিছু কুলাঙ্গারও জন্মায়। এই কুলাঙ্গারদের কাজ হল দাঙ্গা তৈরি করা। আর তো একবছর টিমটিম করে জ্বলবি। তারপর ভারত থেকে বিদায় নিবি। কে দেবে ভোট। ১১৪৯ টাকা গ্যাসে ফুটছে বিনে পয়সার চাল। বাহবা নন্দলাল।'
সিপিএমকে আক্রমণে এদিন নন্দীগ্রামের আন্দোলনের কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'আমি আনিসুরের মটোর বাইকে চড়ে গ্রামে-গ্রামে যাচ্ছিলাম। তখন সেখানে সিপিএম এসে উপস্থিত হচ্ছে। আর গালাগালি দিচ্ছে। এক অক্ষর থেকে বারো অক্ষর পর্যন্ত গালাগালি দিচ্ছিল। তার আগের দিন কোলাঘাটে পেট্রল বোমা রেখেছিল মারার জন্য। সেই সময় রাজ্যপাল গোপাল কৃষ্ণগান্ধী রাত্রিবেলা ফোন করে আমায় খবর দিয়ে বলেছিলেন, আপনি ওইখান থেকে চলে যান। ওরা পেট্রল বোমা মেরে উড়িয়ে। এরপর রাজ্যপালের কথা শুনে কোলাঘাট গেষ্ট হাউসে উঠলাম। দেখালাম বড়-বড় বাস দিয়ে গেস্ট হাউসের দরজা বন্ধ করা। আমি তো গ্রামের মেয়ে। জন্ম গ্রামে। আণি সাঁতার কাটতে পারি, গাছে উঠতে পারি। ধান কাটতে পারি, তুলতে পারি, মাছ ধরতে পারি। তাই ওরা কী করবে? আমি ডাবল ডেকার বাস বেয়ে উঠে লাফ দিয়ে ঢুকলাম। ওই রাতে লাগেজ নিয়ে ঢুকলাম। পরের দিন আমরা চালাকি করে ভিতরের রাস্তা দিয়ে এলাকায় গেলাম। আর আজকে সিপিএম বড়-বড় কথা বলছে। একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করে। ওরা বডি পুড়িয়ে দিয়ে বলে মেয়েটির বাবা ধর্ষণ করেছে।'