তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচি ব্যর্থ ৷ তাই এ বার 'কাটমানির নবজোয়ার' আনতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ শুক্রবার টুইটে এই দাবি করেছেন বিরোধ দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ তাঁর দাবি, পঞ্চায়েত নির্বাচনের কাটমানি তোলার শেষ সুযোগকে কাজে লাগাতে তৎপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। শুক্রবার টুইটে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, "যেহেতু ভাইপোর নবজোয়ার তরঙ্গ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে, সেই কারণে পিসি অবশেষে পঞ্চায়েত স্তরের তোলামূল নেতাদের জন্য 'আসল নবজোয়ার' চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কাটমানির নবজোয়ার!!!"
কী অভিযোগ শুভেন্দু অধিকারীর?
দীর্ঘ টুইট পোস্টে নিজের অভিযোগের কথা তুলে ধরেছেন বিরোধী দলনেতা। তিনি লিখেছেন, 'কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক দ্য ন্যাশনাল সোশ্যাল অ্যসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামের অধীর নতুন যোগ্য সুবিধাভোগীদের অন্তর্ভুক্ত করার অনুমোদন দিয়েছে। এই অনুমোদন অনুযায়ী, জাতীয় পেনশন প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য ১.৬৬,৪৫৩ জন সুবিধাভোগীকে আরও বাছাই করা যেতে পারে এবং জাতীয় পেনশন প্রকল্পের ওয়েটিং লিস্ট থেকে আরও ৬৪, ৬৩০ জন সিবিধাভোগীকে সুবিধা পাওয়ার জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে।'
এর ফলে পঞ্চায়েত এবং গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগ ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রতিটি ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে 'যোগ্য' নাকি 'যোগ্য নয়' তা দেখতে একটি শারীরিক যাচাইকরণ প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে বলা হয়েছে জেলাশাসকদের। আর এই যাচাইয়ের ক্ষেত্রে কাটমানি ইস্যু ফের মাথা চাড়া দিতে পারে বলে আশঙ্কা বিরোধী দলনেতার।
কেন এই আশঙ্কা?
টুইটে পরিসংখ্যান তুলে ধরে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি জানিয়েছেন, 'বার্ধক্য পেনশন প্রকল্পে আঈরও ১,৬৬,৪৫৩ জনকে নির্বাচনের সুযোগ রয়েছে। তবে ওয়েটিং লিস্টে নাম রয়েছে ৭,৮৫,৫০৬ জনের। আর বিধবা পেনশন স্কিমে আরও ৬৮,৬৩০ জনের নির্বাচনের সুযোগ রয়েছে। অথচ ওয়েটিং লিস্টে নাম রয়েছে, ২,৫০,৭৭৩ জনের। পঞ্চায়েতগুলো যাচাইকরণ প্রক্রিয়া চালাবে। আর তখনই কাটমানির বাড়বাড়ন্ত হতে পারে।'
'অতীতে পঞ্চায়েত গুলোর ভূমিকা তা সে আম্ফান ঝড়ের পর ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণের সময় হোক বা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় কার বাড়ি তৈরি হবে সেই নামের তালিকা বানানোর সময়েই হোক, কি পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি হয়েছে তা সারা রাজ্যবাসী জানেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সমীক্ষা করার দায়িত্ব যখন সেই পঞ্চায়েতের ওপরেই পড়েছে তখন কি হতে চলেছে তা অনুমান করা কঠিন নয়।'
'ক) ওয়েটিং লিস্টে নাম থাকা ব্যক্তিদের "যোগ্য" চিহ্নিতকরণ করার বিনিময়ে বিপুল অঙ্কের কাটমানি নেওয়া হবে।
শুধুমাত্র যাদের নাম তালিকাভুক্ত হবে তাদেরই নয়, এই কাটমানি সিংহভাগ ব্যক্তিদের থেকেই নেওয়া হবে প্রলোভন দেখিয়ে, ফলে আবার লক্ষাধিক মানুষ প্রতারিত হবেন।'
খ) তোলামূল নেতা-কর্মীদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও তোলামূল ঘেঁষা লোকজনের এই তালিকায় নাম অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্থান পাবে। প্রয়োজনে নথির হেরফের করে তাদের নাম তালিকায় ঢোকানো হবে।
'গ) পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ভোটারদের প্রভাবিত করে রাজনৈতিক আনুগত্য আদায় করার একটি সুন্দর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে৷ ওয়েটিং লিস্টে নাম থাকা ব্যক্তিদের "যোগ্য" চিহ্নিতকরণ করার বিনিময়ে তাদেরকে শাসকদলে ভেড়ানোর প্রয়াস করা হবে।'
'কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের নিয়মের কড়াকড়ির জন্য আবাস যোজনা এবং MGNREGA-তে পঞ্চায়েত স্তরের তোলামূল নেতাদের অবৈধ কামাই এর যোগানে বেশ কিছুদিন ধরেই ভাঁটা চলছে। এদিকে মোকা-র মতো শেষ গোটা দুয়েক ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে না গিয়ে তার গতিপথ পরিবর্তন করে অন্য দিকে চলে যাওয়ায় দুর্ভাগ্যবশত তোলামূল নেতা কর্মীরা ত্রাণ সামগ্রী ও ত্রানের তহবিল ও চুরি করার সুযোগ পায়নি; তাই এইবছর আগস্ট মাসে পঞ্চায়েতগুলির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে এটাই তাদের লুটপাটের শেষ সুযোগ।'
শুভেন্দুর অভিযোগ নিয়ে কী জবাব তৃণমূলের?
রাজ্যের শাসক দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ টুইটে লিখেছেন, 'বিরোধী দলনেতা মিথ্যা বলছেন, আমরা কেন্দ্রের উপর সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের টাকার জন্য নির্ভর করি না। কীভাবে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার ন্যায্য MGNREGS এবং আবাস যোজনার বকেয়া বন্ধ করে দিয়েছে? আপনি কি আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার জন্য দোষ দিতে পারেন? রাজ্য সরকার, তার শেষ বাজেটে, দুর্নীতির কোনও উদাহরণ ছাড়াই প্রায় ১৭ লক্ষ এবং ১৫ লক্ষ লোককে বার্ধক্য এবং বিধবা পেনশন প্রদান করেছে।'