পুজোর মুখে বানভাসি রাজ্যের একাধিক জেলা। বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে শনিবার কপ্টারে আরামবাগে পৌঁছোন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এলাকা ঘুরে দেখে এদিনও তাঁর তোপের মুখে DVC। কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ DVC-র জন্যই রাজ্যের একাংশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। 'বছরে চারবার জল ছাড়ছে, এরকম চললে DVC-র কাছ থেকে ভবিষ্যতে ক্ষতিপূরণ চাইতে হবে', আরামবাগের কালীপুরে বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে দেখার পর সাফ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টির জেরে সেখানকার ড্যামগুলি থেকে জল ছাড়া হয়। সেই জলেই বাংলার একাংশ ডোবে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনে ঝাড়খণ্ড সরকারের সঙ্গেও আলোচনা করবেন তিনি।
পুজোর আগে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে হাওড়া, হুগলি, দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশে। হুগলির আরামবাগ, খানাকুল, পুরশুড়ার পরিস্থিতি ভয়াবহ। হাজার-হাজার বাড়ি জলমগ্ন। বিঘের পর বিঘে জমি জলের তলায়। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে উদ্ধারকাজ। নামানো হয়েছে সেনা। শনিবার বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কপ্টারে আরামবাগে পৌঁছোন মুখ্যমন্ত্রী। হেলিপ্যাড থেকে গাড়িতে তিনি পৌঁছে যান জলমগ্ন কালীপুর এলাকায়। এলাকার বহু পরিবার এখনও জলবন্দি। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে হাত নাড়তে শুরু করেন বাসিন্দারা। পাল্টা তাঁদেরও পাশে থাকার আশ্বাস দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্রাণ-বণ্টন-সহ উদ্ধারকাজে গতি আনতে নির্দেশ দেন প্রশাসনিক কর্তাদের।
এরপরেই রাজ্যের একাংশের বানভাসি দশা নিয়ে ফের DVC-কে নিশানা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। DVC-র ছাড়া জলেই রাজ্যে প্লাবন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। তিনি বলেন, '৩০ তারিখে প্রায় ৩ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে DVC-র মাইথন ও পাঞ্চেত ব্যারেজ থেকে। আমাদের না জানিয়েই জল ছেড়েছে DVC। রাজ্যের অনুনতি ছাড়াই জল ছাড়া হয়েছে। DVC-র জলে রাজ্যের ৮ জেলা প্লাবিত। সাড়ে ৫ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়েছে DVC। উদয়নারায়ণপুর, আরামবাগ পুরসভা প্লাবিত হয়েছে। DVC ড্যাম ড্রেজিং করে না। বছরে চারবার জল ছাড়ছে। জুলাই মাসেও ১ লক্ষ ২৫ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছিল। এরকম চললে এমন একদিন আসতে পারে যেদিন DVC-র কাছ ছেতে ক্ষতিপূরণ চাইতে হতে পারে।'
উল্লেখ্য, এবছর ঝাড়খণ্ডে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। সেই জলই এরাজ্যে ছেড়েছে DVC। সেই জলেই বানভাসি রাজ্যের একাধিক জেলা। ঝাড়খণ্ডের ড্যামগুলি নিয়মিত পরিস্কার রাখা গেলে সেখানে আরও বেশি জল ধরে রাখা যাবে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ঝাড়খণ্ড সরকারের এব্যাপারে আলোচনা করবেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও জানান, বন্যা পরিস্থিতির জেরে ১ লক্ষ বাড়ি নষ্ট হয়েছে। ৪ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৮ কলাম সেনা নামানো হয়েছে। ৬ লক্ষ ত্রিপল পাঠানো হয়েছে।
এদিন আবারও 'ম্যান মেড বন্যা' তত্ত্ব তুলে ধরে রাজ্যের বানভাসি দশা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও সাহায্য দেয় না বলেও অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রকে আক্রমণ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, 'ক্ষোভ বাড়ছে, আমি চাই না ক্ষোভ বাড়ুক। ওরা কোনওদিন সাহায্য করে না। যা সাহায্য আমরাই করছি। আকাশপথে ভয়ঙ্কর ক্ষতির ছবি দেখেছি। আমাদের জলের টাকা তো জলেই চলে যাচ্ছে।'
আরও পড়ুন- একরত্তি মেয়েকে তুলে আছাড়, সিসি ক্যামেরায় ফাঁস পরিচারিকার ‘কীর্তি’
এখনও পর্যন্ত রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির জেরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ঠিক কত তা স্পষ্ট নয়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এদিনই রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে তিনি বৈঠক করবেন। বানভাসি এলাকাগুলিতে আরও কী কী ভাবে সাহায্য করা যায় সেব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হবে বৈঠকে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন