উপাচার্য নিয়োগ ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাজভবন-নবান্ন সংঘাত চরমে। এবার আচার্য সিভি আনন্দ বোসকে চরম হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সাফ জানালেন, রাজ্যপাল কথা না শুনলে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির টাকা বন্ধ করা হবে। অর্থাৎ 'আর্থিক অবরোধ' করার বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, তাঁর ঘোষণা, রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার স্বার্থে রাজভবনের সামনে ধর্নায়ও তিনি বসতে পারেন।
শিক্ষক দিবসে মঙ্গলবার ধনধান্য স্টেডিয়ামে সরকারি অনুষ্ঠানে অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপালকে বেনজির আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপের নামে রাজ্যপাল আদতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন। যা বরদাস্ত করা হবে না। বলেন, 'কোনও বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্যপালের কথা শুনে চললে, আমি অর্থনৈতিক বাধা তৈরি করব। এখানে টিট ফর ট্যাট। দেখি আপনি কীভাবে অধ্যাপকদের বেতন দেন।'
উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপালের ভূমিকাকে 'অত্যাচার' বলে অভিযোগ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে বসা শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিব-কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'প্লিজ টেক কেয়ার। আমাদের এই লড়াইটা খুব ভালভাবে লড়তে হবে।'
সম্প্রতি রাজ্যের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। যা নিয়ে আগেই আইনি লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'এখানে বসে আছেন মাননীয় রাজ্যপাল। তিনি বলছেন আমিই স্কুল, কলেজ দেখবো, ইউনিভার্সিটি দেখবো, আমি বলি আইন মেনে চলুন, কোনও আপত্তি নেই। সংবিধান মোতাবেক সরকার তিন জনের নাম পাঠাবে আপনি তার মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেবেন। ইইউজি-র নিয়ম মেনে ওটা অ্যাসেম্বিলে ওটা পাঁচ জন করা হয়েছে। কিন্তু বলতে পারেন কেন দুটো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। ইউনিভার্সিটিতে ওনার ফোন যায়। এসব খবর আমার হৃদয়বিদারণ করে। আমি অনেকবার বলেছি ওনাকে যে এসব করবেন না। স্বাধীনতার পর দেশে দু-তিনটে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। তাই ভাইসরয় চেয়ারটাকে সম্মান জানানোর জন্য গর্বনর পদ তৈরি হয়েছিল। আজ তো ৪২-৪৩টা ইউনিভার্সিটি তৈরি হয়েছে।'
এরপরই বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'টাকা দেব আমরা, পলিসি করবো আমরা। আর আপনি খবরদাড়ু করবেন? কখনো শুনেছেন মদ্যরাতে হঠাৎ করে যাদপুরের ভিসি চেঞ্জ হয়ে গেল। ১৬ জনকে টপকে। শুনলাম আলিয়ার মত স্পর্শকাতর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেরল থেকে একজনকে করে দিয়েছেন ভাইস চ্যান্সেলর। তাঁর শিক্ষায় ১০ বছরের কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। রবীন্দ্রভারতীতে প্রাক্তন বিচারপতিকে চ্যান্সেলর করে দিচ্ছে। তাঁর তো শিক্ষায় কোনও অভিজ্ঞতা নেই। তার মানে সিস্টেমটাকে কোল্যাপস করে দেওয়ার চক্রান্ত। এই চক্রান্ত আমরা মানবো না। যদি রাজ্যপাল মনে করেন নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন নেই, তিনিই সব করবেন তাহলে তা মানব না। আপনি যদি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তক্ষেপ করেন, আর যদি আপনার কথা শুনে কাজ হয় আমি কিন্তু অর্থনৈতিক বাধা তৈরি করব। এখানে টিট ফর ট্যাট। কোনও আপস নয়। দেখি আপনি কোন কলেজের শিক্ষকদের মাইনে দেন।'
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, 'আমি আজ পর্যন্ত এসব ভাবিনি। আমরা কোনও শিক্ষায় কোনও হস্তক্ষেপ করি না। কারণ শিক্ষকরাই আমাদের শিক্ষা দেন। কেরলের লোকে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু এভাবে নিয়োগ আবার কেমন করে? আমরা অ্যাসেম্বলিতে বিল পাস করেছি, এটাকে চ্যালেঞ্জ করছি।' সংবিধানের প্রশ্ন তুলে বিধানসভায় পাস করা বিল আটকে রাখা নিয়েও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে চুড়মার করে রাজ্যের অধিকার কেড়ে নিলে মুখ্যমন্ত্রী রাজভনের সামনে ধর্না দিতে বাধ্য হবেন বলেও হুঙ্কার দিয়েছেন এদিন।
অর্থাৎ, উপাচার্য নিয়োগ ইস্যুতে রাজভবনের পদক্যেষেপ যে নবান্ন কোনও মতেই মানবে না এদিন সংঘাতের ফাটল আরও চওড়া করে সেই বার্তাই স্পষ্ট করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।