২৫ ডিসেম্বরের আগে রাজ্য সরকারি কর্মীদের কাছে সান্টার ভূমিকায় মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য আরও ৪ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন বছরের ১লা জানুয়ারি থেকেই বর্ধিতহারে ডিএ পাবেন রাজ্য সরকারি কর্মী ও পেনশনভোগীরা। এখন থেকে মোট ১০ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন রাজ্যের ১৪ লক্ষ সরকারি কর্মী ও পেনশনভোগী।
এদিন বিকেলে পার্ক স্ট্রিটের অ্যালেন পার্কে বড়দিনের উৎসবের সূচনা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আরও ৪ শতাংশ ডিএ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য সরকার। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'এর আগে আমরা ১২৫ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেছিলাম। তার পর পে কমিশন হয়েছে। চার রকমের পে স্কেল রয়েছে এখন। নতুন পে স্কেলে ৬ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা ইতিমধ্যে দেওয়া হচ্ছে। আজ বড়দিনের বিকেলে ঘোষণা করছি যে ৪ শতাংশ হারে আরও এক কিস্তি ডিএ ১ জানুয়ারি থেকে দেওয়া হবে। রাজ্য সরকারি কর্মচারী, অধিনস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, স্কুল কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী মিলিয়ে ১৫ লক্ষ কর্মচারী এর সুবিধা পাবেন।'
আরও পড়ুন- ‘কৌশলী’ মমতা ‘লালিপপ’ ধরালেন, কী যুক্তি শুভেন্দুর?
এই বৃদ্ধির পরও রাজ্যের ডিএ-এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ডিএ-এর ৩৬ শতাংশ পার্থক্য থাকছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বর্ধিত ডিএ-অর দাবিতে আন্দোলনরত সংগ্রামী যৌথমঞ্চের পদাধিকারীরা। এক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে ডিএ বাধ্যতামূলক। কিন্তু রাজ্য সরকারের ক্ষেত্রে তা নয়। রাজ্যে ডিএ ঐচ্ছিক।'
আরও পড়ুন- বিরাট অনুমতি বিচারপতি মান্থার, চওড়া হাসি বাংলার ডিএ আন্দোলনকারীদের মুখে
বড়দিনের আগে ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণাকে রাজ্যসরকারি কর্মী ও পেনশনভোগীদের কাছে তাঁর সরকারের 'হ্যাপি নিউ ইয়ার গিফট' বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ফলে সরকারের ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণায় মোটেই খুশি নয় বর্ধিত ডিএ বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারীদের সংগঠন সংগ্রামী যৌথমঞ্চ। এই মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেছেন, 'আমরা ১০ শতাংশ ডিএ-তে খুশি নই। ডিএ সরকারি কর্মীদের হকের দাবি। আমরা আমাদের দাবি আন্দোলন ও আদালতের নির্দেশে আদায় করেই ছাড়ব। মনে রাখতে হবে, এরপরও ১লা জানুয়ারি থেকে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের থেকে কেন্দ্রের সরকারী কর্মীরা ৩৬ শতাংশ বেশি ডিএ পাবেন। আমাদের দাবি কেন্দ্রীয়হারে ডিএ।' যৌথমঞ্চের নেতা রাজীব দত্ত বলেন, 'ব্যবধানটা ৪০ শতাংশের, উনি ৪ শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করছেন। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে বলি এককের ঘরে শূন্যটা কোথায়? আপনি তো ট্রেডমিলে বাজেট কষেন। শূন্যটাকে বামদিকে না বসিয়ে চার এর ডান দিকে বসান। আমরা কিন্তু ভিক্ষা চাইছি না।'
আরও পড়ুন- মমতার পুলিশে চরম বিরক্ত, সমাধানে বেনজির দাওয়াই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের!
রাজ্য সরকারি কর্মীদের সংগঠন কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেছেন, 'মুখ্যমন্ত্রী এভাবে নিজের ইচ্ছা মত ডিএ বৃদ্ধির ঘোষমা করতে পারেন না। এটা নিয়ম নয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে সরকার। সেটা এখনও হয়নি। ডিএ নির্ধারিত হয় নির্দিষ্ট নিয়মের ভিত্তিতে। সেসব মানা হল না। আমরা ১০ শতাংশ হারে ডিএ মানছি না। কেন্দ্রীয়হারে ডিএ-এর দাবিতে সরকারি কর্মীদের আন্দোলন চলবে।'
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের রাজ্যের আহ্বায়ক প্রতাপ নায়েক বলেছেন, 'মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা আবেদন করেছিলাম। তিনি সাড়া দিয়েছেন। যার জন্য সকল সরকারি কর্মচারীর মুখে হাসি ফুটেছে। মুখ্যমন্ত্রী সবসময় সরকারি কর্মীদের কথা ভাবেন এবং তাঁদের মঙ্গলের জন্য কাজ করেন।'
আরও পড়ুন- ‘যা হয়েছে ভুলে যান’, অনুরোধ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের! সমস্যার জট ছাড়ল?