রাজ্য সরকার বনাম সিবিআই দ্বন্দ্বের জেরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রাজ্যের মুখ্য সচিবকে একটি নির্দেশ দিয়েছেন। সে নির্দেশে বলা হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নায় 'হাজির হওয়ার জন্য' পাঁচজন আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ওই অফিসারদের কেন্দ্র যে পদক দিয়েছে, তা কেড়ে নেওয়া হবে বলেও কথা উঠেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে একবার দেখা নেওয়া যাক, অফিসারদের কী ধরনের আইন মেনে চলতে হয়, এবং তা লঙ্ঘিত হলে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে:
আরও পড়ুন: মমতার ধর্নায় জাতীয় রাজনীতির উত্থান
আইপিএস আধিকারিক
মুখ্যসচিব মলয়কুমার দে'কে লেখা চিঠিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যাঁদের নাম করেছে, তাঁরা হলেন
১) ডিজিপি বীরেন্দ্র কুমার - ইনি আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন
২) বিনীত গোয়েল - প্রাক্তন অতিরিক্ত কমিশনার, যিনি বর্তমানে আইজি পদাধিকারে মমতার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন
৩) অনুজ শর্মা - অতিরিক্ত ডিজিপি (আইন-শৃঙ্খলা)
৪) জ্ঞানবন্ত সিং (বিধাননগরের কমিশনার)
৫) সুপ্রতিম সরকার (অতিরিক্ত কমিশনার, কলকাতা পুলিশ)
মুখ্য সচিবকে বলা হয়েছে এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। শুধু মেডেল কাড়াই নয়, কেন্দ্র এঁদের নাম প্যানেলের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি যাতে এঁরা না করতে পারেন, সে বিষয়টিও বিবেচনা করে দেখছে।
উদাহরণ খুব বেশি নেই
পুলিশ মেডেল কেড়ে নেওয়ার ঘটনা কদাচিৎ ঘটেছে। বড়সড় উদাহরণের মধ্যে রয়েছে সাম্প্রতিক একটিই ঘটনা। এর আগে ১৯৯৯ সালে সাংবাদিক শিবানী ভটনাগর হত্যার ঘটনায় যুক্ত আর কে শর্মার মেডেল কেড়ে নেওয়া হয়। নিম্ন আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে (পরে হাইকোর্ট অবশ্য তাঁকে অব্যাহতি দেয়), এবং তাঁর চাকরি য়ায়। সে সময়ে তাঁর প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক কেড়ে নেওয়া হয়। দীর্ঘ ১৮ বছর পর ২০১৭ সালে মধ্য প্রদেশ ক্যাডারের অফিসার ধর্মেন্দ্র চৌধুরীর মেডেলও কেড়ে নেওয়া হয়। তাঁকে ভুয়ো সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযুক্ত করেছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
অফিসাররা কী করতে পারেন না
১৯৬৮ সালের অল ইন্ডিয়া সার্ভিস (কনডাক্ট) রুলস রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার উপর জোর দিয়েছে। আইনের ৩ নং ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের আওতাভুক্ত সকলকে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। আইনের ৫ (১) ধারায় বলা হয়েছে, সার্ভিসের কোনও সদস্য বা অন্য কোনওভাবে সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত কেউ কোনও রাজনৈতিক দল বা রাজনীতিতে যুক্ত কোনও সংগঠনের অংশ হতে পারবেন না, বা তেমন কোনও রাজনৈতিক কাজে যুক্ত হতে পারবেন না, অথবা তাতে কোনওভাবে সাহায্য করতে পারবেন না।
এ ছাড়া, ১৯৭৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ক্যাবিনেট সেক্রেটারিয়েটের এক নির্দেশে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে যে সমস্ত নির্দেশ ইতিমধ্যেই দেওয়া আছে তার পরিপ্রেক্ষিতে, যাতে তাঁদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন না উঠতে পারে, সে জন্য কোনও সরকারি কর্মচারী কোনও রাজনৈতিক দলের আয়োজিত কোনও সভা-সমাবেশে উপস্থিত হতে পারবেন না।
পুলিশ মেডেল প্রত্যাহার
২০১৭ সালের ২৯ মে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি নির্দেশিকা জারি করে। সেখানে পুলিশ পদক প্রত্যাহারের কথা উল্লিখিত হয়। বলা হয়, যদি পদকপ্রাপক আইনের চোখে দোষী সাব্যস্ত হন, বা তাঁর চাকরি যায় বা তাঁর আচরণে আনুগত্যের অভাব, ভীরুতা অথবা তেমন কোনও কিছু দেখা যায় যা রাষ্ট্রপতির মতে বাহিনীর পক্ষে মর্যাদাহানিকর - সেক্ষেত্রে তাঁর পদক কেড়ে নেওয়া হতে পারে।
সিদ্ধান্ত কে নেবে
অল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস (ডিসিপ্লিন অ্যান্ড অ্যাপিল) রুলস, ১৯৬৯ অনুসারে এ ব্যাপারে কর্তৃত্ব রাজ্য সরকারেরই হাতে।
কোনও আইএএস, আইপিএস এবং ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিসের অফিসারের ক্ষেত্রে রাজ্য ও কেন্দ্র, দুই সরকারকেই মতৈক্যে আসতে হবে। রাজ্য সরকার যে শাস্তিই দিক না কেন, সে ব্যাপারে ইউপিএসসি এবং কেন্দ্রের মত নেওয়া আবশ্যক। ৯ (৩) ধারানুসারে সমস্ত ঘটনাতেই তদন্তের সব রেকর্ড ইউপিএসসি-র কাছে পাঠাতে হবে, তাদের মতামত জানতে হবে, এবং সার্ভিসের কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সে মত বিবেচনা করতে হবে।
বর্তমান মামলা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্নায় উপস্থিত অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে নিশ্চিত হতে হবে যে তাঁরা ধর্নায় অংশ নিয়েছিলেন কী না। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন জানিয়েছেন, "ওঁরা ধর্নায় আদৌ বসেন নি, ঘন্টাখানেকের জন্য ধর্নাস্থলে গিয়েছিলেন, তারপর সেখান থেকে চলে যান।"
পদক প্রত্যাহারের পুরোনো যেসব ঘটনা, তার সাপেক্ষে দেখলে এ ঘটনায় তা কার্যকর হওয়ার কথা নয়। এমনকি যদি আনুগত্যের অভাব বা কর্তব্য়ে ভীরুতার প্রসঙ্গও আসে, তাহলেও সে নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যকে সহমত হতে হবে।
Read the Full Story in English