মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানে সিকিমে ধ্বংসযজ্ঞ, নিখোঁজ ২৩ সেনা জওয়ান। ঘটনায় শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের। উত্তর সিকিমের লোনাক হ্রদে আকস্মিক মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানে তিস্তা নদী প্লাবিত হয়েছে। সেনা জওয়ানদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের সিনিয়র মন্ত্রী এবং সিনিয়র আইএএস অফিসারদের উদ্ধার ও ত্রাণকার্য্যে তদারকির জন্য উত্তরবঙ্গে পাঠানো হয়েছে বলেই জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী।
আচমকা মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভয়াবহ পরিস্থিতি উত্তর সিকিমের। অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে তিস্তা নদীর জলস্তর। জলস্তর বেড়ে বাঁধভাঙা পরিস্থিতি হয়েছে উত্তর সিকিমের চুংথাংয়ের দক্ষিণ লোনাক হ্রদে। ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণে ইতিমধ্যেই উত্তর সিকিমের বিভিন্ন জায়গায় লাল সতর্কতা জারি করেছে সিকিম সরকার। তিস্তা নদী সংলগ্ন সিকিমের বেশ কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিকিমের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের তিস্তা সংলগ্ন এলাকার মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। তিস্তার জল ছাপিয়ে বন্যার আশংকা রয়েছে উত্তরবঙ্গের গাজলডোবা, দোমোহনি, মেখলিগঞ্জ, ঘিস এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়।
মঙ্গলবার রাত থেকে মেঘভাঙ্গা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তর সিকিম। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের তরফে একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রবলবর্ষণে জল অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় লোনাক হ্রদের বাঁধ ভেঙেছে। যার ফলে চুংথাংয়ে তিস্তা নদীর জলস্তর উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। নদীতে দেখা দিয়েছে হড়পা। সেই জল উপচে তিস্তার আশপাশের এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েক জায়গায় সিকিমের সঙ্গে সংযোগকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক চলে গিয়েছে তিস্তাগর্ভে। সাংকালং, ব্রিংবং, ফিডাং, ডিকচু, মাখা, সিংটাম, রংপো, মেলি এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। মেলি বাজারে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্পূর্ণভাবে ভেসে গিয়েছে। তবে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। উত্তরবঙ্গের তিস্তা সংলগ্ন এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা হচ্ছে। এসডিও-বিডিওরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন।
সিকিমের মঙ্গনের পুলিশ সুপার সোনম দেচু জানিয়েছেন, লোনাক হ্রদের বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হাই এলার্ট জারি করা হয়েছে। নদী সংলগ্ন নীচু এলাকার বাসিন্দাদের উঁচু জায়গায় সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নদীর জলস্রোতে মঙ্গন ও চুংথাং-এর সংযোগকারী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় উত্তর সিকিমের ছোট শহর চুংথাং এখন বাকি অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গ্যাংটকের পুলিশ সুপার তেনজিং লোডেন লেপচা জানিয়েছেন, তিস্তাতীরবর্তী সিংতাম এবং রংপোর বাসিন্দাদের উঁচু এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পুরো পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। তিস্তার থাবায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একাংশ। এর ফলে সিকিমের সঙ্গে অবশিষ্ট ভারতের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
উত্তর সিকিমের লোনাক হ্রদে আকস্মিক মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানের কারণে তিস্তা নদীর জলস্তর বেড়ে বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ২৩ জন সেনা জওয়ান নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এই নিখোঁজ সেনা-জওয়ানদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে চুংথাং বাঁধ থেকে জল ছাড়ার কারণে, নীচের দিকে জলের স্তর হঠাৎ করে ১৫-২০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ কারণে সিংগামের কাছে বারডাংয়ে পার্ক করা সেনাবাহিনীর গাড়িগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৩ জন কর্মী নিখোঁজ এবং একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি যানবাহন তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তল্লাশি অভিযান চলছে।
প্রতিরক্ষা বিভাগের জনসংযোগ আধিকারিক জানিয়েছেন 'উত্তর সিকিমের লোনাক হ্রদের উপর হঠাৎ মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর জলস্তর বেড়ে যায়। আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দেখা দেয়। এ কারণে সিংগামের কাছে বারডাংয়ে পার্ক করা সেনাবাহিনীর গাড়িগুলি তলিয়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে ২৩ জন সেনা কর্মী নিখোঁজ হয়েছেন। তল্লাশি অভিযান চলছে। ঘটনার পর সিকিম সরকার রাজ্যে উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে এবং জনগণকে তিস্তা নদীর পাড় থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।