মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া উপহার নিয়ে সরগরম রাজ্যের শিক্ষা মহল। এনআরএসকাণ্ডে ডাক্তারদের প্রতিবাদ আন্দোলনের মাঝেই কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক-সহ অন্যান্য বোর্ড পরীক্ষার কৃতীদের বুধবার সংবর্ধনা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ব্যাগ ভর্তি উপহার। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া সেই উপহার দেখেই চোখ কপালে উঠেছে শিক্ষা মহলের। কিন্তু, কৃতীদের কী এমন উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী যা নিয়ে এত বিতর্ক?
মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, আইসিএসই, আইএসসি এবং সিবিএসই’র মোট ৩৫৪ কৃতী ছাত্রছাত্রীকে উপহার-সহ সংবর্ধনা দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রীর তরফে। এই উপহারের তালিকায় ছিল ল্যাপটপ, ঘড়ি, মেডেল, চকোলেট-সহ ১৮টি জিনিস এবং ৩৬টি বই। ল্যাপটপ, ঘড়ি, মেডেল ইত্যাদি নিয়ে কোনও বিতর্ক না হলেও মুখ্যমন্ত্রীর উপহারের বই নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্যের শিক্ষামহল। কারণ, ৩৬টি বইয়ের মধ্যে ২৮টি বই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের লেখা।
আরও পড়ুন- তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার জন্য সময় বেঁধে দিলেন মমতা
কৃতীদের উপহারের ডালিতে দেখা যাচ্ছে, 'মা মাটি মানুষ', 'নন্দী মা', 'অনশন কেন?', 'সিঙ্গুর জয়ী', 'মাইসেলফ', 'কথাঞ্জলি', 'মাই জার্নি', 'নীমাঞ্জলি সমগ্র', 'বিপন্ন ভারত', 'অসহিষ্ণুতা এবং আমি'-সহ মমতার লেখা বেশ কিছু বই। আর এসব বইয়ের ভিড়ে উঁকি মারছে 'আহারে অনাহারে বিবেকানন্দ', 'গীতাঞ্জলি', 'বিদ্যাসাগর', 'এপিজে আব্দুল কালাম', 'সঞ্চিতা', 'বোম্বকেশ', 'তরুণের স্বপ্নে'র মতো বহুপঠিত এবং বিখ্যাত কিছু বই। কৃতী ছাত্রছাত্রীদের একাংশ জানাচ্ছে, বইয়ের তালিকায় খুশি না হলেও, অন্যান্য উপহার সামগ্রী ও খাবারের মেনু ছাপিয়ে গিয়েছে সবকিছুকে। তবে এই ছবি প্রতিবছরই দেখা যায়। তবে কৃতীদের সরকারি সংবর্ধনায় মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বই উপহার দেওয়ায় সমালোচনায় মুখর হয়েছে বাংলার শিক্ষামহলের একাংশ।
প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমি লজ্জা বোধ করছি। কারণ, এটি ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন। যে বই ওদের ভবিষ্যৎ গড়বে এবং মানবিকতার বিকাশে সাহয্য করবে আমার মনে হয় সেইসব বই দেওয়াই উচিত"। তাহলে কেমন বই উপহার দেওয়া উচিত? অমলবাবু মনে করেন, কৃতী ছাত্রছাত্রীদের স্বামী বিবেকানন্দ ও রবীন্দনাথের লেখা বই দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, "একজন অধ্যাপক হিসাবে আমি মনে করি, পড়াশোনা চলাকালীন ছাত্রছাত্রীদের মনে রাজনৈতিক রঙ না লাগানোই শ্রেয়"।
আরও পড়ুন- ‘ভুল করেছি, গদ্দারকে বিশ্বাস করে ঠকেছি’, স্বীকার করলেন মমতা
অল বেঙ্গল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (এবিটিএ)-এর সভাপতি কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যও এ বিষয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছেন। তাঁর মতে, "রাজনীতির রঙে রঙিন বই দেওয়া উচিত নয়। কৃতী ছাত্রছাত্রীদের স্তর বুঝে সেই অনুযায়ী বই দেওয়া প্রয়োজন, যা তাদের ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। তাদের জ্ঞান ও শিক্ষাবৃদ্ধি করবে যে বই, সেগুলিই দেওয়া উচিত বলে মনে করি আমি"। তিনি আরও জানান, "পুস্তক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হয়। আমার মনে হয়, মমতা ব্যানার্জির নিজের লেখা ২৮ টা বই না দিয়ে নাসা, সায়েন্স ফিকশন জাতীয় বই দিলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য ভাল হত"।
তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মনোজিৎ মন্ডল আবার এই উপহারকে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখতে নারাজ। তিনি বলছেন,"উপহারের তালিকায় আরও অনেক কিছুই ছিল, শুধু বই নয়। উপহার বিশ্লেষণ না করাই ভাল। কারও যদি সেই বই পড়তে ইচ্ছা না করে, তাহলে রেখে দেবে। উনি তো আর কিনতে বলেননি"।