ক্ষমতায় এলে দেশব্যাপী জাতশুমারি করা হবে। তার আগে দেশজুড়ে মোদী সরকারের কাছে জাতশুমারির জোরদার দাবি তোলা হবে। গোবলয়ের বেশ কয়েকটি শরিক দলের চাপে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'। কিন্তু, এনিয়ে আবার তাদের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কারণ, ২৮ লোকসভা সাংসদের দল তৃণমূল কংগ্রেস জাতশুমারির বিরোধী। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের এই জাতশুমারিতে আপত্তি আছে। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন যে এই জাতশুমারিতে হিন্দিবলয়ের দলগুলোর রাজনৈতিক লাভ হবে। বাংলায় লাভের গুড় খাবে বিজেপি।
সদ্যগঠিত বিরোধী জোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে রীতিমতো গুরুত্ব দিচ্ছে জোটসঙ্গী দলগুলো। বিশেষ করে প্রধান দল কংগ্রেসের হাইকমান্ডের কাছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আর, সেই কথা মাথায় রেখে জাতশুমারি ইস্যুতে অবিলম্বে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব মিটিয়ে ফেলতে চান 'ইন্ডিয়া' জোটের নেতারা। সেকথা মাথায় রেখে তাঁরা চান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পেন সফর থেকে ফেরার পরই এই ব্যাপারে আলোচনা সেরে নিতে। এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)-র প্রধান শরদ পাওয়ারের বাসভবনে 'ইন্ডিয়া' জোটের সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকেই বিজেপির হিন্দুত্বের মোকাবিলা করতে জাতশুমারির দাবি জোরালো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী দলগুলো। পাশাপাশি, ক্ষমতায় এলে জাতশুমারি করা হবে বলে লোকসভা নির্বাচনের অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচিতে প্রতিশ্রুতি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সেই বৈঠকে ছিল না তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও প্রতিনিধি। দলের তরফে থাকার কথা ছিল সমন্বয় কমিটির অন্যতম নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু, ওই দিনই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল। ৯ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়েছে। যার জেরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠক চলাকালীন স্পেন সফরে ছিলেন। সেই কারণে তিনি থাকতে পারেননি। আর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে না-পারায়, পরিবর্তে আর কাউকে বৈঠকে না-পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ফলে, 'ইন্ডিয়া' জোটের ১৩ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে জাতশুমারি নিয়ে আপত্তি ওঠেনি। কিন্তু, বৈঠকের ফলাফল জানতে পারার পরই জাতশুমারির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
আরও পড়ুন- ‘পরেরবার রসগোল্লা নিয়ে আসব’, বার্সেলোনায় প্রবাসী ভারতীয়দের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী
বিজেপি ইতিমধ্যেই লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ওবিসি ভোটারদের কাছে টানতে 'বিশ্বকর্মা' প্রকল্পের নাম প্রচুর অর্থ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। আর, তাতেই তৃণমূল নেতৃত্বের ধারণা, ওবিসি ইস্যুতে এভাবে বিভাজনের রাজনীতিতে বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে লাভবান হবে বিজেপি। কিছু না-পেয়ে মুসলিম ভোটও তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। পাশাপাশি, রাজ্যের বর্ণহিন্দুরাও মুখ ফিরিয়ে নেবে তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে। আর, সেই কারণেই তৃণমূল কংগ্রেস চায়, শাসক হিসেবে বিভাজনের রাজনীতির পথে না-হাঁটতে। বরং, সকলের উন্নতির জন্য কী করা যায়, সকলকে নিয়ে কীভাবে চলা যায়, সেটা নিশ্চিত করাই 'ইন্ডিয়া' জোটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বলেই ঘাসফুল শিবিরের ধারণা।