Advertisment

বিধানসভায় তুলকালাম! নন্দীগ্রামের জয়-পরাজয় নিয়ে সম্মুখ সমরে মমতা-শুভেন্দু

'আজ নন্দীগ্রামের মানুষকে অপমান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পঞ্চায়েতের ঘটনা নিয়ে আমি অনেক প্রশ্ন করেছি। তাতেই দিকভ্রান্ত হয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্টোপাল্টা জবাব দিচ্ছেন।'

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Mamata Banerjee warns of investigation into corruption allegations against Suvendu Adhikari , শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ মমতা ব্যানার্জীর তদন্তের হুঁশিয়ারি

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী

বিধানসভায় উত্তেজনা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা নিয়ে বিজেপির এদিন মুলতুবি প্রস্তাব এনেছিল। যাতে সায় দেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময় বুধবার বিধানসভা কক্ষ সরগরম হয়ে ওঠে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জয় পরাজয় প্রসঙ্গ টেনে নন্দীগ্রামের বিধায়ককে আক্রমণ শানান মমতা।

Advertisment

একুশের ভোটে নন্দীগ্রামে পরাজিত (যদিও এই ফলাফল আদালতে বিচারাধীন) হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে এদিন শুভেন্দুকে নিশানা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বলেন, 'নন্দীগ্রামের ঘটনা ভুলে গেছেন? ২ ঘণ্টা লাইট বন্ধ করে জিতেছেন, আমায় হারিয়ে দিয়েছেন।'

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে এদিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়করা। পরে সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, 'সংবিধান মানে না বলেই মুখ্যমন্ত্রী এ ধরণের কথা বলছেন। এরা শুধু সংবিধানই নয়, বিচার ব্যবস্থাকেও মানে না। আজ নন্দীগ্রামের মানুষকে অপমান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পঞ্চায়েতের ঘটনা নিয়ে আমি অনেক প্রশ্ন করেছি। তাতেই দিকভ্রান্ত হয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্টোপাল্টা জবাব দিচ্ছেন। মমতা ব্যানার্জী বাংলার লজ্জা, গণতন্ত্রের কলঙ্ক। একুশ সালে নন্দীগ্রামের মানুষকে আমাকে ধন্যবাদ জানাতে দেননি স্পিকার। বলেছিলেন এটা বিচারাধীন বিষয়। যদিও কোর্টের কোনও স্তগিতাদেশ ছিল না। কিন্তু আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রাম নিয়ে বললেন, তাঁকে আটকালেন না স্পিকার। যে কেন্দ্রে গণনা হয়েছিল, সেখানে তিন কেন্দ্রের গণনা হয়েছিল। মহিষাদলে তৃণমূল জেতে, বাকি দুটিতে জিতেছিল বিজেপি। আপনি ১৯৫৬ ভোটে হেরেছেন। এটা মানতে না পেরে আপনি কোর্টে গিয়েছিলেন। পরে বিচারপতি পছন্দ না হওয়ায় পাল্টানোর আবেদন করেন। আপনার রিট পিটিশনের সবটাই চোখে দেখার ভিত্তিতে। প্রমাণ নেই।'

পঞ্চায়েত ভোটের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর চ্যালেঞ্জ, 'এ বার ভোটা যা করেছেন আগামী বছর সুদে আসলে হিসাব দিতে হবে। মানুষ এই ভোট লুঠের বদলা নেবে।'

কী হল এদিনের বিধানসভা অধিবেশনে?

পঞ্চায়েত ভোটে ‘হিংসা’-র অভিযোগ নিয়ে এদিন আলোচনা হয় বিধানসভায়। বক্তৃতা শুরু করেন কোচবিহার দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে। পরে নিজের বক্তব্যে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'রাজ্য সরকার বলছে পঞ্চায়েত ভোটে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যম বলছে ৫৫ জন মারা গেছেন। ২০ হাজার বুথে ভোট লুঠ হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোট পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন। প্রশাসনের সহায়তা করে রাজ্য। নির্বাচন কমিশন প্যানেলের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়। নতুন নির্বাচন কমিশনার ৮ জুন নিজের পদে বসেই ভোট ঘোষণা করেছেন। ৯ তারিখে ভোট প্রক্রিয়া শুরু করেন তিনি। ১৯৭৮ সাল থেকে ভোটে এ রকম হয়নি। সবার আগে সর্বদলীয় বৈঠক হয়। প্রশাসনের বৈঠক হয়। ব্লক স্তরে সর্বদলীয় বৈঠক হয়। কেন্দ্রীয় সরকার এই ভোটে অংশ নেয় না। এর পর ডিজি, মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনার। সব কিছুর পর ভোট ঘোষণা হয়। কিন্তু এবার ভোট চুপি চুপি হয়েছে।'  ২৫ ব্লের নাম পড়ে শুভেন্দুর দাবি, 'ত্রিস্তরীয় লুঠ হয়েছে এবার। এর দায় রাজ্য সরকারের। ২৫টি ব্লক অবরোধ করে মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। জঙ্গলমহল এখনও শান্ত রেখেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আজ কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রতিষ্ঠা দিবস। ৮২২ কোম্পীনি বাহিনী রাজ্যে মোতায়েন করা রয়েছে। অমরনাথ যাত্রা থেকে দন্তেওয়াড়াতে এদের পরিষেবা মনে রাখতে হবে। শহিদ হন এরাই।'

এরপরই বলতে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'এখানে কেউ বলতে পারবেন না, সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হয়। সকালে বলে দেওয়া হয়, বিজেপির পক্ষে খবর করতে হয়। বিজেপির বিরুদ্ধে বলা যাবে না। যারা তৃণমূলকে গালাগালি দিয়ে বাংলাকে অসম্মান করে, তখন খারাপ। যিনি এর আগে বললেন (শুভেন্দু অধিকারী) তিনি তৃণমূলে ছিলেন, তিনি আগের কথা বললেন না। সিপিএম জমানার কথা বলা হয় না। কেন্দ্র যেমন ভোট করায় না, তেমনই রাজ্য সরকার ভোট করায় না। লোকসভা ও বিধানসভা ভোট চিরকুটে পুলিশ বদল। নন্দীগ্রামে দু’ ঘণ্টা লাইট বন্ধ করে দিয়ে কী হয়েছিল ভুলে গেলেন।'

মমতা নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ তুলতেই বিক্ষোভ শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা। তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বলতে থাকেন, ' আমারও কথা বলার অধিকার রয়েছে। মামলা হয়েছিল। সেটা পেন্ডিং রয়েছে। আপনারা বলেছেন, সারা ভারতে কোথাও সন্ত্রাস হয়নি। ত্রিপুরায় কী হয়েছে?

এরপর বিজেপি বিধায়কেরা কালো কাপড় দেখিয়ে ওয়াক আউট করেন বিধানসভা থেকে। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলতে থাকেন ‘সেম সেম’।  

তবে থামেননি মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি নিশানা করে তিনি বলেন, 'উত্তরপ্রদেশ দেখাচ্ছ? ১,১০০ মানুষকে এনকাউন্টার করা হয়েছে। ত্রিপুরায় ৯৭ শতাংশ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। গুজরাতে ইউএপিএ কী হয়েছে? মিডিয়া বাংলায় একতরফা। ২ লাখ মনোনয়ন হয়েছে যা রেকর্ড। ৫৪,৬২০টি মনোনয়ন জমা পড়েছে বিজেপির। কংগ্রেস ১৭ হাজার, বামফ্রন্ট ২৭ হাজার ৭৮৭ মনোনয়ন জমা করেছে। ২০১৮ সালে ৬৫ শতাংশ মনোনয়ন হয়েছিল। এবার ৮৭ শতাংশ হয়েছে। ৩৯৮ দল পর্যবেক্ষক ছিল। ৬৯৬টি বুথে পুননির্বাচন হয়েছে। আপনারা বলছেন গন্ডগোল হয়েছে? ভোটের বাক্স জলে ফেলে দিন, কে বলেছিল? ৩৫৫, ৩৫৬ করব, কে বলেছিল? কার্পেট বোম্বিং করবে কে বলেছিল? আপনারা তো আর ৬ মাস রয়েছেন। আর কাকে কার্পেট বম্বিং করবেন? মানুষকে?'়

মণিপুর নিয়ে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, 'মণিপুর নিয়ে অত ভয় কিসের? আপনি এদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, টাকা দিয়ে উপহার দিচ্ছেন। আর মণিপুর জ্বলছে। মিজোরাম জ্বলছে।' বাংলার প্রসঙ্গে টেনে বলেন, 'এঁরা বাংলাকে বদনাম করে বেড়ান। বিজেপিতে গিয়ে সকলের নবজন্ম হয়। আমি তো বলিনি কিছু ঘটেনি। বামফ্রন্ট সিস্টেম করে দিয়ে গেছে, পরিবারে পরিবারে লড়াই হয়।  এর জন্য নবজোয়ার হয়েছিল। মানুষকে বোঝান হয়েছে। কোচবিহারের দিনাজপুর, মানিকচক, রেজিনগরে এক জন রয়েছেন আমাদের দলে, গুন্ডা, বদমাইশি করেন। আমরা মান্যতা দিই না।'

tmc bjp Mamata Banerjee nandigram Suvendu Adhikari West Bengal Assembly
Advertisment