বেলুড় রেল স্টেশনে প্রকাশ্য দিবালোকে যুবতীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর অভিযোগে গ্রেফতার হল এক যুবক। এই ঘটনায় ফের একবার মহিলা সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্নের মুখে রেল। ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ। অভিযোগ, বেলুড় স্টেশনের এক এবং দু'নম্বর স্টেশনের মাঝে এক যুবতীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি আঘাত করতে থাকেন এক যুবক। জানা যাচ্ছে, ওই অবস্থায় ওই যুবতীকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন আরও দুই যুবক। অভিযুক্তের নাম মহঃ সাদ্দাব। দিনের বেলা অফিস টাইমে এহেন ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় বেলুড় স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়।
ঠিক কী হয়েছিল?
প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, বেলুড় স্টেশনের এক এবং দু'নম্বর প্ল্যাটফর্মের মধ্যে থাকা আন্ডারপাসে আচমকাই এক যুবতীর উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন অভিযুক্ত সাদ্দাব। এই পরিস্থিতিতে যুবতীকে বাঁচাতে স্টেশনে উপস্থিত আরও দুই যুবক এগিয়ে গেলে অভিযুক্ত সাদ্দাব তাঁদেরও হাতে থাকা অস্ত্রটি দিয়ে আঘাত করতে শুরু করেন। এরপর ঘটনাস্থলে আসে জিআরপি। গ্রেফতার করা হয় মহঃ সাদ্দাবকে।
আরও পড়ুন- ‘আর কত দিন?’, কলেজের পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন বেঁধে দিয়ে মন্তব্য মমতার
জানা গিয়েছে, আক্রান্ত যুবতীকে বাঁচাতে গিয়ে অভিযুক্ত সাদ্দাবের অস্ত্রে জখম হন শুকদেব শাসমল নামের এক যুবক। শুকদেব শাসমল বলেন, "দু'নম্বর প্লাটফর্মে ঘটনাটি ঘটে। দেখি সাবওয়ের নিচে এক যুবতীকে একটি ছেলে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপ মারছে। এই দেখে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। তখন আমার সঙ্গে ছেলেটির ধস্তাধস্তি শুরু হয়। আমি ওর ডান হাত ধরে ফেলি। দু'জনেই মারপিট করার সময় রেললাইনে ছিটকে পড়ি। এর মধ্যে আমি পুলিশ পুলিশ বলে চিৎকার করতে শুরু করলে লোকজন ছুটে আসে। আমি তখন দৌড়ে জিআরপি থানার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করি। তখন ওই ছেলেটিও ছুটে পালিয়ে আমাকে পাথর ছুড়তে থাকে। আমি এরপর পড়ে গেলে ও ফের আমার উপর অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে এবং আমি জখম হই। তবে ওই যুবতীকে বাঁচাতে পেরে আমার ভাল লাগছে"।
ভাইয়ের এই লড়াইয়ে খুশি শুকদেবের দাদা জয়দেব শাসমলও। তিনি বলেন, "এক যুবতীকে বিপদে পড়তে দেখে আমার ভাই বাঁচাতে এগিয়ে আসে এবং তখন ওর উপর ওই যুবক আক্রমণ করে। ভাইকে বেলুড় স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার পর সে থানায় যায়। আমার ভাই সাহসিকতার সঙ্গে ওই যুবতীকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছে।"
আরও পড়ুন- যাত্রী সুরক্ষায় সাঁতরাগাছির পথের ধারে রেলিং
অন্যদিকে আক্রান্ত যুবতী বলেন, "আমি তখন টিউশনে যাচ্ছিলাম। টিকিট কেটে যখন ব্রিজ দিয়ে নামছিলাম সে সময় আচমকাই ওই যুবক আমার সঙ্গে প্রথমে অভব্যতা শুরু করে। পরে শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করে। আমি বাধা দিতে গেলে সে আমার জামা ধরে টানাটানি করতে থাকে। এরপর আমি বাধা দেওয়ায় সে আচমকাই তাঁর পকেট থেকে ধারালো অস্ত্র বের করে আমাকে এলোপাথাড়ি কোপ মারে। এরপর আমি চিৎকার করলে লোকজন ছুটে আসে। আমাকে বাঁচাতে দু'জন এগিয়ে আসেন। তখন তাঁদেরও আক্রমণ করে ওই যুবক। ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ"।
প্রসঙ্গত, বেশ কিছুদিন আগেই বালি স্টেশনেও এমনই এক ঘটনা ঘটে। এক ছাত্রীর গলায় ব্লেড চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগে এক যুবককে মুম্বই থেকে ফেরার পথে ডানকুনিতে গ্রেফতার করে বেলুড় জিআরপি। অভিযোগ, আচমকাই ওই যুবক পিছন থেকে এসে ছাত্রীর হাত টেনে ধরে। মেয়েটি সেক্ষেত্রে বাধা দিলে অভিযুক্ত যুবক ছাত্রীটির গলায় ব্লেড জাতীয় কিছু চালিয়ে দেয়। এরপরই পলাতক হয় ওই যুবক। জানা যায়, ওই ছাত্রীকে প্রেম নিবেদন করে বিরক্ত করছিল অবিযুক্ত যুবক। এদিন ফের বেলুড় স্টেশনে এমন ঘটনার পর আরও একবার প্রশ্নের মুখে রেলে যাত্রী সুরক্ষা।
হাওড়া জেলার সব খবর পড়ুন এখানে