Advertisment

পুজোর আগেই নয়া ত্রাসে তোলপাড় রাজ্য, আতঙ্ক ছড়িয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কালাজ্বর!

আতঙ্কে কাঁপছে বাংলা!

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
"কোভিড আতঙ্কের মধ্যেই বাড়ছে কালাজ্বর, রাজ্যের ১১টি জেলায় আক্রান্ত ৬৫ জন - 65 people over state is attacked by Black fever, Bangla News", "description": "কালাজ্বরে সংক্রমিত হলে মানুষের ওজন ক

আতঙ্কে কাঁপছে বাংলা!

উত্তরবঙ্গে কালাজ্বরের প্রাদুর্ভাব। রাজ্যে বর্তমানে ১১ জনের কালাজ্বরের চিকিৎসা চলছে। কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজ্যে এক ব‌্যক্তির মৃত্যুর খবরে ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। এর পরেই মুখে কুলুপ এঁটেছে স্বাস্থ্য দফতর। ঘরে ঘরে বাড়ছে পতঙ্গবাহিত রোগের প্রকোপ। তার ঠিক আগেই পুজোর মুখে নয়া ত্রাস এই কালাজ্বর। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়ার কারণে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নয়া এই ত্রাস। বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অমিতাভ নন্দী কী জানিয়েছেন কালাজ্বর প্রসঙ্গে?

Advertisment

অমিতাভ নন্দী জানিয়েছেন, ১৮৩০ যশোরে কালাজ্বরের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়! ১৯৩০ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত ভারতের একাধিক রাজ্যে কালাজ্বরের দাপট আমরা দেখেছি। ১৯৫৬ সালে যখন ম্যালেরিয়া দমন অভিযান এনএন ই পি যখন শুরু হয় তখন হঠাৎ করেই কালাজ্বরের দাপট কমতে শুরু করে। ১৯৭০ সালে এই প্রোগ্রাম শেষ হয়। তখন ১৯৭৭ এ প্রায় এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ধরা পড়ে। বিহারের চারটি জেলায় ফের শুরু হয় কালাজ্বর আতঙ্ক। মারা যান কয়েক হাজার মানুষ।

১৯৮০ সামে হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লক ২ তে গরুর হাট থেকে ফের ছড়ায় সংক্রমণ। রক্তে প্যারাসাইট থাকার কারণে কালাজ্বরের প্রাদুর্ভাব বাড়তে শুরু করে। চার মাস পরে উত্তর ২৪ পরগনার খড়দায় ছড়ায় সংক্রমণ। দেখা যায় বাংলাদেশি এক উদ্বাস্তু থেকে ছড়ায় সংক্রমণ। মাত্র চার মাসের ব্যবধানে খড়দায় পেয়ারাবাগানে আদিবাসী গ্রামে হু হু করে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। ১৯৮২ সালে নন্দীগ্রামে দুটি শিশুর মধ্যে ধরা পড়ে কালাজ্বরের জীবাণু। যদিও তারা কীভাবে সংক্রমিত হয়েছে সে সম্পর্কে এখনও কোন তথ্য সামনে আসেনি। মনে করা হচ্ছে কোন গবাদি পশুর রক্তে প্যারাসাইট থাকায় এবং স্যান্ড ফ্লাইয়ের কামড়েই আক্রান্ত হয় দুই শিশু।

কালা-আজার, কালা দুঃখ, অথবা কালা জ্বর সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ বছর পর পর ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কালাজ্বর সাধারণ ভাবে এপিডেমিক হিসাবেই রয়ে গিয়েছে। এখন হঠাৎ করেই আবার পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় কালাজ্বরের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হল এই সংক্রমণ এড়াতে আমাদের কী করতে হবে?

আমাদের যেটা প্রথমের মনে রাখতে হবে স্যান্ড ফ্লাই মশার মত উড়তে পারেনা। তাই স্যান্ড ফ্লাই একজায়গা থেকে অন্য জায়গায় উড়ে গিয়ে যে সংক্রমণ ছড়াবে এমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। মানুষই এর প্রধান বাহক। অতএব আক্রান্ত এলাকার মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে র‍্যাপিড টেস্টিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পাকা বাড়ি করে দিলেই যে সংক্রমণ আটকা এমন ভাবার কোন কারণ নেই। হ্যাঁ এটা ঠিক যে পাকা বাড়িতে বালি মাছি ডিম পাড়তে বা থাকতে পারেনা। । তবে এটাও ভাবতে হবে কোন মানুষ আক্রান্ত হলেই শুধু তার বাড়ি পাকা করে কোন বিশেষ লাভ হবে না। কারণ সেই মানুষটি বাড়ির বাইরে খাটিয়া পেতে শুতেই পারেন। সেখান থেকেও তিনি স্যান্ড ফ্লাইয়ের কামড়ে কালাজ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন।

সাধারণ ভাবে কালাজ্বরে আক্রান্ত হলে যে সমস্যা গুলি দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর। তবে সেই জ্বর যে সব সময় থাকবে এমনটা নয়। জ্বরের সঙ্গে কাঁপুনি থাকতেও পারে অথবা নাও থাকতে পারে। এর পর যেটা দেখা দিতে পারে সেটা হল যকৃতের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। ওজন কমে যাওয়া, কঙ্কালসার চেহারা, পেট ফুলে যাওয়া, ফ্যাকাশে চামড়া, রক্তাল্পতা, শারীরিক দুর্বলতা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুলির মত দাগ।

কালা জ্বর কাদের হতে পারে

কালাজ্বর প্রবল এলাকায় ভ্রমন করলে অথবা ঐসব এলাকায় যারা বসবাস করেন তাদের কালাজ্বর হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। ছোট বড় যেকোনো বয়সের মানুষেরই এ রোগ হতে পারে । কালাজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শিশুদের। সেই সঙ্গে যাদের আর্দ্র এবং উষ্ণ এলাকায় যারা বসবাস করেন তাদের মধ্যেও কালাজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মনে রাখতে হবে কালাজ্বরে আক্রান্ত হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে তাই দীর্ঘদিন জ্বরে ভুগলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার। বর্তমানে কোভিডের বাড়বাড়ন্তে কালাজ্বরের সঙ্গে কোভিডের ফারাক আমাদের সকলকে বুঝতে হবে। আপনি যদি কালাজ্বর প্রবণ অঞ্চলে গিয়ে রাত্রে না থেকে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার শরীরে কালাজ্বরের সম্ভাবনা প্রায় থাকেনা বললেই চলে।

এই রোগের সংক্রমণ বিভিন্ন অঞ্চলের পরিবেশগত অবস্থা, পরজীবী এবং মানুষের জীবনযাপনের উপরে নির্ভর করে। বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যগুলোতে কালা জ্বরের প্রকোপ বেশি। শুধু মানুষকে কামড়ানোর মাধ্যমেই নয় বরং স্যান্ডফ্লাই যদি কোন পশুকে কামড়ায় সেখান থেকেও ছড়াতে পারে কালাজ্বর।

কালাজ্বরের চিকিৎসা

পরজীবীর প্রকোপে হওয়া লিসম্যানিয়াসিস রোগের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ হল এই ভিসেরাল লিসম্যানিয়াসিস, যা কালাজ্বর নামেই অধিক পরিচিত। ১৮৩০ সালে বাংলাদেশের যশোর জেলায় কালাজ্বরে মৃত্যুর ঘটনার উল্লেখ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ১২ টি জেলাকে কালাজ্বর-প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল হু।

সেগুলি হল মালদহ, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, নদিয়া, বর্ধমান, হুগলি, মুর্শিদাবাদ,দুই দিনাজপুর, দার্জিলিঙের তরাই অঞ্চল ও জলপাইগুড়ির কিছু এলাকা। ভারতের বাইরে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলেও এই রোগের প্রকোপ রয়েছে।

কালাজ্বরের জীবাণু যে শরীরে একবার ঢোকে মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই থাকে। রোগ না ছড়ালেও, দেহের মধ্যেই তা থাকে। সেই ব্যক্তিকে স্যান্ড ফ্লাই বা বেলে মাছি কামড়ালে জীবাণু ওই বাহকের শরীরে চলে আসে। এর পরে ওই স্যান্ড ফ্লাই যে মানুষকে কামড়াবে, তার শরীরেই কালাজ্বরের জীবাণু ঢুকে যাবে।

বর্তমানে যে ১১ টি রাজ্যে সংক্রমণ ঘটেছে তা মূলত সেই কারণেই। কালাজ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিহ্নিত করে তাদের আইসোলেট করতে হবে। সেই সঙ্গে রক্ত পরীক্ষা বোন ম্যারো বায়পসি করেও কালাজ্বর সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

এ রোগের জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর থেকে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ২মাস থেকে ৬মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কাজেই লক্ষণ প্রকাশ পেলেই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। সোডিয়াম স্টিবোগ্লুকোনেট কিংবা এম্ফোটেরিসিন বি নামক ওষুধ দিয়ে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। সময়মত কালাজ্বর পরীক্ষায় ধরা পড়লে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই তা নির্মূল সম্ভব।

black fever
Advertisment