man pretends dead to escape elephant: ওরে হাতি তুই কত চালাক? তোর থেকেও আমি বেশি চালাক।’ বুদ্ধির জোরে প্রাণে বেঁচে যাওয়ার পর সগর্বে এমন মন্তব্য করলেন এক যুবক। ঈশপের গল্পের সেই দুই বন্ধুর কথা মনে আছে? ওই যে যারা জঙ্গলে যাওয়ার পর ভালুকের পাল্লায় পড়ে। বুনোর হামলা থেকে বাঁচতে এক বন্ধু তো তরতরিয়ে গাছে উঠে গিয়েছিল। আরেক বন্ধু আবার গাছে উঠতে পারত না। বাধ্য হয়ে সে মাটিতে মরার ভান করে শুয়ে পড়ে। আর ভালুকও তাকে মৃত ভেবে আর ঘাঁটায়নি। ভাবছেন, পুরোনো গল্পের কাসুন্দি ঘাঁটতে বসা কেন? কারণ, এক রাতে প্রায় সেই গল্পের পুনর্নির্মাণ দেখল ফালাকাটা ব্লকের শালকুমার গ্রাম পঞ্চায়েতের খাউচাঁদপাড়ার লোকজন।
কী ঘটেছে? এলাকায় সেদিন হানা দেয় এক মস্ত দাঁতাল হাতি। আশপাশের লোকজন যখন চিৎকার করতে আর পালাতে ব্যস্ত, তখন এক ব্যক্তি মাথা ঠান্ডা রেখে ঈশপের ‘শিক্ষা’ প্রয়োগ করেন। মরার ভান করে মাটিতে শুয়ে পড়েন। একেবারে নিথর। হাতি তাঁর পাশ কাটিয়ে চলে গেলেও তাঁকে কিন্তু কিচ্ছু করেনি। আশপাশের লোকজন ততক্ষণে ভয়ে অস্থির। তাঁরা তো ধরেই নিয়েছিলেন যে ওই ব্যক্তিকে পায়ে পিষে মারবে দাঁতাল। হাতি তাড়াতে দূর থেকেই চিৎকার করছিলেন, বাজি ফাটাচ্ছিলেন। দাঁতাল চলে যাওয়ার পর সেই ব্যক্তি যখন টলতে টলতে উঠে দাঁড়ালেন, তখন সকলের চক্ষু চড়কগাছ। লোকজন ঘিরে ধরার পর তাঁর সগর্ব মন্তব্য, ‘ওরে হাতি তুই কত চালাক? তোর থেকেও আমি বেশি চালাক।’
সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা সামনে এসেছে ডুয়ার্সে। সেই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন খাউচাঁদপাড়ার বাসিন্দা কৈলাস কার্জি। ঘটনার পর থেকে এখনও ঘোর কাটেনি তাঁর। জানালেন, রাত তখন সাড়ে ৭টা। পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে এক মস্ত দাঁতাল হাতি তাঁদের গ্রামে আসে। তাঁরা ওইসময় লক্ষ্য করেন এক ব্যক্তি টলতে টলতে, বকবক করতে করতে রাস্তা দিয়ে আসছেন। তাঁরা চিৎকার করে জানান দেওয়ার চেষ্টা করেন হাতি আসছে বলে। তবে সেই ব্যক্তি পাত্তাই দেননি। কিছুক্ষণ পর তাঁরা দেখেন, সেই ব্যক্তির আর কোনও সাড়াশব্দ নেই। কৈলাস বলেন, ‘সার্চলাইট জ্বালিয়ে দেখলাম লোকটা রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে। ভেবেছি তো অঘটন ঘটেই গিয়েছে। আমরা আরও কয়েকজন মিলে দাঁতাল তাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। একটু বাদে দেখি সে মাটি থেকে উঠে টলতে টলতে বলছে, ওরে হাতি তুই কত চালাক। তোর থেকেও আমি বেশি চালাক।’
আরও পড়ুন- Kolkata News Live Updates:বউদির কাটা-মুণ্ড হাতে নিয়ে সটান থানায় দেওর, হাড়হিম কাণ্ডে তুমুল চাঞ্চল্য
অভিনব পদ্ধতিতে হাতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সেই ব্যক্তির নাম সঞ্জীব ওরাওঁ। বাড়ি উমাচরণপুর ১০ মাইলে। পেশায় দিনমজুর। সঞ্জীব বললেন, ‘বৃহস্পতিবার কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে একটু রাত হয়ে যায়। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় সামনে দেখলাম পাহাড়ের মতো দেখতে কালো রংয়ের একটা কী জানি আসছে। প্রথমে বুঝিনি। একটু পরেই দেখি বিশাল দাঁতাল আসছে আমার দিকে। তখন আর কী করব! নিজেকে বাঁচাতে রাস্তার ধারে মরার ভান করে পড়ে থাকি। দাঁতাল আমার গা ঘেঁষেই কিছু না করে চলে গেল। আর আমি বেঁচে গেলাম।’ গর্বের সঙ্গেই বললেন, ‘উপস্থিতবুদ্ধি থাকলে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।’
আরও পড়ুন- IIRF: আবারও 'সেরার সেরা' বাংলা, ফের বাংলার মুকুটে যোগ হল 'সোনার পালক'!
শালকুমার গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান বিমল গাবুরের বাড়ির সামনেই এই ঘটনা। বিমলের বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে দিয়েছে সেই হাতি। তিনিও কৈলাসের সঙ্গে হাতি তাড়াতে বেরিয়েছিলেন। কৈলাস বললেন, ওই দাঁতাল ছাড়াও একটি হাতির দল আমার প্রচুর সুপারি গাছ ভেঙে নষ্ট করে দিয়েছে।’ তাঁদের অভিযোগ, বনকর্মীরা ঠিকমতো টহল দেন না। যদিও অভিযোগ মানতে চাননি জলদাপাড়া পশ্চিম রেঞ্জের আধিকারিক অয়ন চক্রবর্তী।