স্রেফ চোর সন্দেহ করে আইন নিজেদের হাতে নিয়ে এক যুবককে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে বেদম প্রহার করলেন একদল মানুষ। কিন্তু প্রহার করেই ক্ষান্ত হননি তাঁরা, প্রকাশ্য দিবালোকে ওই যুবককে নগ্ন করে গোপনাঙ্গেও চলল লাথি, ঘুসি। কেউ আবার জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে গোপনাঙ্গে ছ্যাঁকাও লাগাতে গিয়েছেন।
শনিবার সকালে এই ঘটনা ঘটেছে মেদিনীপুরের এলআইসি মোড়ে। কিন্তু বর্বোরোচিত এই দৃশ্য দেখেও কেউ তো থামাতে আসেনই নি, বরং কেউ কেউ গোটা ঘটনার ভিডিও রেকর্ডিং করতে কিংবা ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। যদিও ওই যুবকের দাবি, তিনি কোনো কিছু চুরি করেন নি, কিংবা চুরির উদ্দেশ্যেও আসেন নি। কিছুক্ষণ পর কোতোয়ালি থানার পুলিশ এসে অসুস্থ যুবককে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
শনিবার সকালে ওই যুবককে মেদিনীপুরের এলআইসি মোড়ে "সন্দেহজনকভাবে" ঘোরাঘুরি করতে দেখেন কিছু লোকজন বলে দাবি। যুবককে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁর কাছ থেকে অসংলগ্ন উত্তর পেতেই সন্দেহ হয় স্থানীয় মানুষদের। আর তারপরই শুরু হয় চড়-থাপ্পড়-কিল-ঘুসি। পথচলতি মানুষজন কৌতূহলবশত উঁকি মেরে দেখেও চলে যাচ্ছেন, কেউ আবার দু'একটা চড় ঘুসি লাগিয়েও দিচ্ছেন। যুবক হাত জোড় করে তাঁর বক্তব্য বারংবার বলতে চাইলেও কেউই তাঁর কথা শুনতে চান নি, বরং সকলেই মারধর করতে এবং ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
বিষয়টি ভাল নজরে দেখছেন না মেদিনীপুরের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষজন। অধ্যাপক শিবরাম চ্যাটার্জী ঘটনাটি শুনে বললেন, "এ আমরা কোথায় বাস করছি! স্রেফ সন্দেহ করে একজনকে এভাবে নির্যাতন করা যায়! কেউ অন্যায় করলে তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া যেতে পারত। এভাবে নগ্ন করে মারধর করা সভ্য সমাজের পক্ষে লজ্জার বিষয়।" শিক্ষিকা সোমা চট্টরাজের কথায়, "আধুনিক জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়েও অনেকেই একটুতেই মাত্রাজ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন, যার পরিণতি কখনো কখনো মারাত্মক হয়ে উঠছে।"
পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে, যদিও বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন এলআইসি মোড়ের লোকজন।