প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে পুরুষ, নারী বা জন্তুদের সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হন, তবে তাঁর যাবজ্জীবন সাজা বা ১০ বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে। একইসঙ্গে জরিমানাও করা হতে পারে। কোনও পুরুষ বা মহিলা একই লিঙ্গের কারও সঙ্গে যৌন সংসর্গ করলে, তাও অপরাধ বলে গণ্য করা হয় এই আইনে। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, এদিন আংশিক খণ্ডন হল এই ৩৭৭ ধারা। আর এই ঐতিহাসিক রায়ের পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে নিজের প্রতিক্রিয়া জানালেন অধ্যাপিকা মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি ভারতে সর্বপ্রথম রূপান্তরকামী কলেজ প্রিন্সিপ্যাল।
এতদিন পরে ৩৭৭ খারিজ হল, আপনার প্রতিক্রিয়া?
ভলো লাগছে! তবে বাঁধ ভাঙা উচ্ছাস হল না, কারণ আমি জানতাম এটা হবে। আর আমি তো হোমোসেক্সুয়াল নই, হেটেরোসেক্সুয়াল। ট্রান্সজেন্ডার ছিলাম, সেই অর্থে আমরা একই ছাতার সহদোরী। তবে ব্রিটিশের নিগড় থেকে বেরিয়ে সভ্যতার পদক্ষেপের জন্য আমার আনন্দ হচ্ছে বইকি।
আপনি একা লড়েছেন, তখন এটা হলে লড়াইটা কি আর একটু সহজ হত?
(হেসে) কোনও এয়ারপোর্টই ছিল না, তবু আমার প্লেনটা নামিয়ে দিয়েছিলাম ঝট করে। আমি চিরকালই জানতাম অন্তরের সত্যিটাই একমাত্র সত্যি। সে কারণে খুব যে আইনের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম তা নয়। আসলে কলোনিয়াল সমাজে যা কিছু আইনসিদ্ধ, তাই সমাজে মানা হয় না। একটু লক্ষ্য করলেই সেটা দেখা যায়। তবে আগে এটা হলে লড়াইটায় সুবিধে হত হয়ত, কিন্তু আমার এই ঐতিহাসিক যুদ্ধটা কোথাও ঠাঁই পেত না। আমি ইতিহাস হতে চাই। তখন ভাবিনি কিন্তু এখন তো ভালই লাগছে।
তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতিও আমরা পেয়েছি, কিন্তু সামাজিকভাবে আর কোনও ফল এখনও পাইনি। এক্ষেত্রেও কি তাই হওয়ার সম্ভবনা?
হ্যাঁ, স্বীকৃতি পেয়েছি অনেকটা তৃতীয় নয়নের মতো। চার বছর হয়ে গেছে সেই আইনী স্বীকৃতির। আসলে ৩৭৭ অর্থাৎ সমকামী হলে সেই মানুষটার রুটি-রুজির অভাব হয়না। কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের ক্ষেত্রে উল্টোটা। অনেক সময় মুখে না বললে তো সমকামী মানুষকে চেনাও যায়না। তবে থার্ড জেন্ডার হলে মানুষটা হেঁটে এলেই বোঝা যায়। রবীন্দ্র জয়ন্তী থেকে বিয়েবাড়ি, সব জায়গা থেকে তাকে উৎখাত করা হয়। অথচ অন্ধকারে নিয়ে গিয়ে জোর করে যৌন সংসর্গও করা যায়, এটা ট্রান্সজেন্ডারের যন্ত্রনা। তাদের পুনর্বাসনের দরকার রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে সামাজিক পথটা অতটা জীর্ণ নয়।
চিরকালই জানতাম অন্তরের সত্যিটাই একমাত্র সত্যি, মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। ফোটো- মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফেসবুক পেজ থেকে
দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ক কোনো অপরাধ নয়। কোথাও কি তাহলে এটা আংশিক জয়?
না, একটা জিনিস প্রমাণ হল, দৈহিক লিঙ্গের নয়, জয় হল মানসিক লিঙ্গের। এদের ক্ষেত্রে কিন্তু ভোটার কার্ডের পরিবর্তন হবে না, যা আমাদের ক্ষেত্রে হয়েছিল। সে কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার লিখবে না কোনও ফর্মে। সেক্সুয়াল কথাটা না বলে আমাদের ক্ষেত্রে জেন্ডার বলা হয়, এখন তো পার্সনও লেখেন অনেকে। আসলে আমাদের জায়গাটা অনেক কষ্টকর ছিল। হোমোসেক্সুয়ালসের সঙ্গে ট্রান্সজেন্ডরকে গুলিয়ে ফেলা হত। সমকামী বলে পেটানো হত, হ্যারাস করা হত।
সমাজের প্রতি দায়িত্ব বেড়ে গেল?
এই সমাজকে নিয়ে কিছু করা যাবে না। মানুষের সম্পর্কটা একান্ত। সমাজ, সমাজ করে চেঁচিয়ে লাভ নেই। মানুষের মানসিক এবং অর্থনৈতিক গঠনটা ঠিক থাকলে, সমাজই ফণা নামিয়ে কথা বলবে।