উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। শাসক দলের নেতা অনুব্রত মণ্ডলের এমন দাবি নিয়ে কবিতা লিখে কবি শঙ্খ ঘোষ বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন। আর এবার সেই রাস্তা নিয়েই গ্রামবাসীদের চুড়ান্ত ক্ষোভের মুখে পড়ে কার্যত নাস্ত-নাবুদ খেলেন শাসক দলের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের ভাতারের কালুত্তক গ্রামে। দুর্দশাময় দিন গুজরানের বাস্তবতা বোঝাতে বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীকে জল-কাদা রাস্তায় হাঁটা করালেন গ্রামবাসীরা।
পঞ্চায়েত ভোটে প্রতিদ্বন্দী তৃণমূল প্রার্থীদের সমর্থনে এদিন ভাতারের কালুত্তক গ্রামে প্রচারে গিয়েছিলেন এলাকার বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী। বিধায়ককে গ্রামে পেয়েই বাসিন্দারা বেহাল রাস্তা নিয়ে তাঁর কাছে ক্ষোভ উগড়ে দেন। গ্রামবাসী মজিউন বিবি বলেন, 'সিপিএমের সময় একবার আমাদের গ্রামের রাস্তায় অল্প মোরাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের ১২ বছরের রাজত্বে আমাদের গ্রামের রাস্তার কোনও সংস্কার কাজ হয়নি।'
অপর বাসিন্দা সাজাহান সেখ বলেন, 'আমাদের গ্রামের বেহাল রাস্তার কথা বহুবার স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতকে এমনকী বিধায়ককেও বলা হয়েছিল। কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। বছরের পর বছর বর্ষায় কদায় ভরে থাকা রাস্তা দিয়ে গ্রামের সকল বাসিন্দাদেয় যাতায়াত করতে হচ্ছে। স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের দুর্ভোগ পোয়াতে হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবার জন্য। গ্রামে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে শুধু বেহাল রাস্তার জন্য গ্রামে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে চায় না। এই সব কথা বিধায়ককে বলা হয়েছিল। তবুও কোনও কাজ হয়নি। রাস্তার সংস্কার কাজ হবে বলে দিদির সুরক্ষা কবজ কর্মসূচী চলার সময় বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী নিজে কথা দিয়েছিলেন। তাঁর পরেও কালুত্তক গ্রামের স্কুল পাড়ার রাস্তার কোন সংস্কার কাজ হয়নি। ৬৬০ ফুট দীর্ঘ মাটির রাস্তা এখন শুধু কাদায় ভর্তি। ওই রাস্তা দিয়ে এখন হেঁটে যাওয়া দুরহ হয়ে পড়েছে। বেহাল রাস্তার জন্য আমাদের কতটা দুর্ভোগ পোয়াতে হয় সেটা বিধয়ক যাতে নিজে উপলব্ধি করতে পারেন তাই এদিন আমরা বিধায়ককে কাদা রাস্তায় হাঁটিয়েছি।'
এই ঘটনার পর বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'এটা ঠিক ওই গ্রামের রাস্তার অবস্থা খারাপ। জেলা পরিষদ থেকে রাস্তার কাজ করা হবে। ভোট ঘোষণা হওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। আমি আগে অনেকবার প্রধানকে রাস্তাটির সংস্কার জন্য করার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু প্রধান কথা শোনেনি।আমি গ্রামবাসীদের এদিন কথা দিয়েছি, আগামী দু'মাসের মধ্যে রাস্তা ভালভাবে করে দেব। প্রয়োজনে বিধায়কের কোটায় ওই গ্রামে রাস্তা হবে।'
তবে কাদা রাস্তায় তাঁকে হাঁটানো করার বিষয়টি বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী অস্বীকার করেন। তাঁর সাফাই, 'শনিবার আমি কালুত্তুক গ্রামে প্রচারে গেলে গ্রামবাসীরা আমায় খারাপ রাস্তার কথা বলে। তখন আমি নিজেই রাস্তার বাস্তব অবস্থা দেখর জন্য ওই রাস্তা হেঁটে পার হয়েছি। আমি তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক বলেই কাদা রাস্তায় হেঁটেছি। অন্য রাজনৈতিক দলের বিধায়ক হলে রাস্তা দেখা তো দূরের কথা গ্রামবাসীদের কথা পর্যন্ত শুনতেন না।'
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, 'বিরোধীরা মিথ্যা প্রচার করে ভোটের বাজার গরম করতে চাইছে।তৃণমূল সরকারের রাজত্বে হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তা হয়েছে। গ্রাম গ্রামে ঝাঁ চকচককে রাস্তা হয়েছে। এখনও কোথাও কোথাও রাস্তার কাজ চলছে। ওই গ্রামের রাস্তাও হবে।'
জেলা বিজেপি সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, 'শুধু ভাতার নয়, গোটা রাজ্যেরই এই হাল। খোঁজ নিলে হয়তো দেখা যাবে কাজ না করেই রাস্তার টাকা লুট হয়ে গেছে। তাই বেহাল রাস্তার কোন কাজ হয়নি। এইসবের জন্যই ক্ষোভে এলাকার বাসিন্দারা বিধায়ককে কাছে পেয়ে কাদা রাস্তায় হাঁটিয়েছেন। গ্রামবাসীরা যোগ্য জবাব দিয়েছেন।'