আদালতের বাইরে তীব্র আর্তনাদ করে উঠলেন নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত নদিয়ার পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। বুধবার আদালতে হাজিরা ছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের এই প্রাক্তন চেয়ারম্যানের। আদালত চত্বরের বাইরে রীতিমতো ভেঙে পড়তে দেখা যায় এই তৃণমূল বিধায়ককে। প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় তিনি কথা বলছিলেন।
বুধবারই আদালতে মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এই দুর্নীতিতে মানিকবাবুর সঙ্গেই তাঁর স্ত্রী ও ছেলের নামও জড়িয়ে গিয়েছে। চার্জশিটে তার উল্লেখও করেছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কর্তারা। এনিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। কিন্তু, তাঁর সেই আপত্তিকে গোয়েন্দারা আমল দিতেই রাজি হননি। এতেই আরও ভেঙে পড়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান।
আরও পড়ুন- পঞ্চায়েতের আগে ত্রাস তৈরির ছক, মানিকচকের ঘটনায় ঘুম উড়েছে প্রশাসনের
সূত্রের খবর, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট আদালতে মানিকবাবুর বিরুদ্ধে যে চার্জশিট পেশ করেছে, তাতে নাম রয়েছে তাঁর স্ত্রী ও ছেলেরও। আর, তার জেরেই রীতিমতো ভেঙে পড়েছেন এই ঝানু প্রাক্তন শিক্ষাকর্তা। আদালতের শুনানি শেষ হওয়ার পরই তাঁকে বাইরে বেরিয়ে ভেঙে পড়তে দেখা যায়। সেখানে কাতর কণ্ঠে মানিক ভট্টাচার্যকে বলতে শোনা যায়, 'আমাকে মেরে ফেল।' এরপরেই তিনি ওই কাতর কণ্ঠেই ফের বলে ওঠেন, 'আমার স্ত্রী ও ছেলেকে এর মধ্যে জড়িয়ো না।' কিন্তু, পুলিশ এরপর মানিক ভট্টাচার্যকে বেশি কিছু বলার সুযোগ দেয়নি। তাঁকে টানতে টানতে নিয়ে চলে যায়।
পুলিশের গাড়িতেও ওঠার সময়ও দেখে রীতিমতো উদাসীন বলে মনে হয় মানিক ভট্টাচার্যকে। ইতিমধ্যে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মানিক ভট্টাচার্য-সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সূত্রের খবর, প্রাইমারি টেট কেলেঙ্কারিতে মোট ছয় জনের নামে চার্জশিট পেশ করেছে ইডি। তার মধ্যে মানিক ভট্টাচার্য, তাঁর স্ত্রী, ছেলে, তাপস মণ্ডল-সহ আরও দুই সংস্থার নামও রয়েছে। এই মামলায় মোট ১০৭ পাতার চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। যাতে মোট ৫০ জন সাক্ষীর বয়ান উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ১০ অক্টোবর ম্যারাথন জেরার পর মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। বয়ানে অসঙ্গতি ও তদন্তে সহযোগিতা না-করার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তে উঠে এসেছে ৫৮ হাজার বেআইনি চাকরির কিংপিন এই মানিক ভট্টাচার্য। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি হিসেবে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে তিনি চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর ঘুষের টাকা পাঠিয়ে দিতেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবী অর্পিতার কাছে। তদন্তে এমনটাই জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতারির ৫৮ দিনের মাথায় পেশ করা চার্জশিটে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা এমনটাই জানিয়েছেন বলে খবর।