নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলেন শতরূপা ভট্টাচার্য। সম্পর্কে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এই জামিন মঞ্জুর করেছেন। নির্দেশ আদালত জানিয়েছে যে, নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় শতরূপা ভট্টাচার্যের কাছ থেকে এমন কিছু প্রমাণ মেলেনি যে তাঁকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করতে হবে ইডি-কে। ফলে তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।
পাশাপাশি এদিন ইডি'কে সতর্ক করে বিচারপতি বলেছেন যে, অনুমানের ভিত্তিতে কোনও পদক্ষেপ করা উচিত নয়। জামিন মিললেও শতরূপাকে বিচারপতির শর্ত যে, এক লক্ষ টাকার বন্ডে জামিন পাবেন শতরূপা। নিম্ন আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হবে তাঁকে। তদন্তকারী আধিকারিকদের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা করতে হবে। রাজ্যের বাইরে যেতে পারবেন না শতরূপা।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আদালতে চার্জশিট পেশ করেছিল ইডি। তাতে অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গেই নাম ছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যেরও। তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগে গত বছরের ১১ অক্টোবর মানিককে গ্রেফতার করেছিল তদন্তকারী সংস্থা। এর পরেই তদন্তে নেমে মানিকের বিপুল সম্পত্তির হদিশ পান তদন্তকারীরা। সেই সূত্রে নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়ায় তাঁর স্ত্রী শতরূপা ভট্টাচার্য এবং ছেলে শৌভিক ভট্টাচার্যের। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ব্যাঙ্কশাল আদালতে আত্মসমপর্ণ করেন মানিকের স্ত্রী ও পুত্র। সেদিনই আদালতের নির্দেশে দু'জনকেই হেফাজতে নেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এদিন শতরূপা ভট্টাচার্যর আইনজীবী জিষ্ণু সাহা আদালতে জানান যে, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে এখনও কোনও প্রমাণ জোগাড় করতে পারেনি ইডি। যে অভিযোগ আনা হয়েছে শতরূপার বিরুদ্ধে, তাতে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও কোনও প্রমাণ নেই। এমনকী ইডি তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও নতুন কিছু পায়নি। শুধু তাই নয়, আইনজীবী দাবি করেন, শতরূপা আদালতের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজিরা দিয়েছিলেন, তখন ইডি বিশেষ আদালতে হেফাজতের নির্দেশ দেন, যা অনৈতিক।
ইডি-র আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি বিচারপতিকে জানান, 'আদালতের সমনে তিনি এলেও, আমরা তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে আদালতের কাছে কিছু প্রমাণ জমা করেছিলাম। তার ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়। নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন করেছেন শতরূপা, আবার হাইকোর্টেও জামিনের আবেদন করেছেন। দু'জায়গায় কীভাবে একই আবেদন করেন একজন মানুষ? আমার মনে হয় অপরাধের গভীরতা দেখা উচিত। শতরূপা গৃহবধূ। কিন্তু তাঁর বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি টাকার হদিশ মিলেছে। একটি অ্যাকাউন্ট আবার মৃত্যুঞ্জয় চ্যাটার্জী নামের এক মৃত ব্যক্তির সঙ্গেও রয়েছে। ২০১৬-তে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়, ২০১৯-এ তাঁর সঙ্গে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে'
পাল্টা বিচারপতি বলেন, 'তোমরা একটা দুর্নীতির মামলা করছো, যেখানে অর্থ লেনদেন হয়েছে। সেখানে মানিক ভট্টাচার্যের নাম উঠে এসেছে। সেখানে শতরূপাকে সাক্ষী হিসাবে ব্যবহার করে তদন্ত চালালে কী অসুবিধা হত? আর সে সাক্ষী যদি এতই গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে আগে গ্রেফতার করোনি কেন? মহিলাদের ক্ষেত্রে অনেক বিষয় মাথায় রাখতে হয়, সেগুলো কি মাথায় রেখে ইডি তার হেফাজতে নিয়েছে?'
এরপরই মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রীর জামিন মঞ্ডুর করে আদালত।