রান্না ছেড়ে পাঠাগারে লেখক মনোরঞ্জন

চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও আজ বিশ্ব দরবারে সমাদৃত দলিত লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর লেখা। এহেন লেখকের আবেদনে তড়িঘড়ি সাড়া দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও আজ বিশ্ব দরবারে সমাদৃত দলিত লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর লেখা। এহেন লেখকের আবেদনে তড়িঘড়ি সাড়া দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারী

চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও আজ বিশ্ব দরবারে সমাদৃত দলিত লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর লেখা। এহেন লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর আবেদনে তড়িঘড়ি সাড়া দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জীবিকা নির্বাহের জন্য জনশিক্ষা দফতরের অধীনে দক্ষিণ ২৪ পরগনার হেলেন কিলার বধির বিদ্যালয়ে রান্নার কাজ করছেন প্রবীণ মনোরঞ্জন বাবু। সম্প্রতি বয়সজনিত কারণেই কঠোর পরিশ্রমের এই কাজ থেকে অন্যত্র কাজের ব্যবস্থা জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে আবেদন করেছিলেন বর্ষীয়ান এই লেখক।

Advertisment

সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রবীণ লেখক মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে যাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিদ্যানগর জেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে বদলি করার জন্য জনশিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন মমতা। গত বুধবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে মনোরঞ্জন বাবুকে ফোন করে এই খবর জানান। মুখ্যমন্ত্রীর এই সাহায্যে আপ্লুত প্রবীণ এই লেখক। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর সঙ্গেই স্বরাষ্ট্র সচিবকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন 'বাতাসে বারুদের গন্ধ'র লেখক।

'২০১৪ সালে আমার হাঁটু প্রতিস্থাপন হয়েছে। তারপর থেকেই আগুনের তাপে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক দিন দু'বেলা করে দেড়শ পড়ুয়ার রান্না করতে আমার কষ্ট হয়। গত এক বছর ধরে আমি সরকারিভাবে, আমার শুভাকাঙ্খীদের দিয়ে, এমনকী বিকাশ ভবনে গিয়ে একাধিকবার আমি কাজ বদলের আবেদন করেছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। কিন্তু দেরি হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়েছে। এতে আমি খুশি।'

মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মনোরঞ্জন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‌ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বাংলার দিদিকে। যিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে আমার সমস্যার সমাধান করে দিয়েছেন। এই তুচ্ছ অনুরোধ নিয়ে বছরের পর বছর আমি এ অফিস থেকে ও অফিসে ছুটে বেড়িয়েছি। আমার আস্থা, বিশ্বাস, ভরসা ছিল একমাত্র দিদির ওপর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দাদা আমার খবর দিদির কানে পৌছে দিয়েছেন।’‌

Advertisment

প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই, জয়ের লক্ষ্যে অদম্য জেদের অপর নাই যেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী। ১৯৫৩ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বরিশাল থেকে এ পার বাংলায় চলে আসেন ব্যাপারী পরিবার। এরপর ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠা।স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে বাড়ি থেকে পালান মনোরঞ্জন। কাজের ঠেলায় যেতে হয় ভারতের নানা প্রান্তে। এরপর যখন মনোরঞ্জন রাজ্যে ফেরেন তখন এক অশান্ত পরিবেশ। তিনি জড়িয়ে পড়েন অতি-বাম রাজনীতিতে। ১৯৭৫ সালে ২০ বছর বয়সে আলিপুর জেলে যেতে হয় তাঁকে। ক্রমশ উপলব্ধি করতে থাকেন দারিদ্রই দুর্বলতা।

জেলখানাতেই তাঁর সঙ্গে আলাপ মাস্টারমশাইয়ের, যাঁর নাম তিনি আজও জানেন না। সব সময় তিনি মনোরঞ্জনকে পড়াশোনার জন্য উৎসাহ দিতেন। তাঁর উৎসাহ ও উদ্যোগেই মনোরঞ্জনের অক্ষরজ্ঞান।

মনোরঞ্জনের জীবনের মাহেন্দ্রক্ষণ অবশ্যই মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে আলাপ। আটের দশকের গোড়ায়, মনোরঞ্জন তখন রিক্সা চালান। একদিন দেখেন বিজয়গড় কলেজ থেকে বেরিয়ে আসছেন তিনি। তখন অবশ্য আলাপ-পরিচয় ছিল না। বিশিষ্ট লেখককে সওয়ারি নিয়ে রিক্সা চালাতে চালাতে মনোরঞ্জন হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন, ‘দিদি, জিজীবিষার মানে কী? চমকে উঠলেন লেখক।ধৈর্য ধরে শোনেন মনোরঞ্জনের জীবনকাহিনি। এর পরেই আদেশ এল, ‘লেখা চাই।’

সেই শুরু। তারপর থেকে তাঁর একের পর এক লেখা পাঠকের মন জয় করেছে। গতবছরই দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্যের সব থেকে উল্লেখযোগ্য় পুরস্কার ডিএসসি প্রাইজের তালিকার লংলিস্টে জায়গা পেয়েছিল ব্যতিক্রমী সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর ‘বাতাসে বারুদের গন্ধ’র ইংরেজি অনুবাদ ‘দেয়ার্স গানপাউডার ইন দি এয়ার’। 'বাতাসে বারুদের গন্ধ'র অনুবাদ করেছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক অরুণাভ সিংহ। তাঁর অরেকটি অনব্য উপন্যাস 'ইতিবৃত্তে চন্ডাল জীবন'।

Read  in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Mamata Banerjee West Bengal