Matua Vote Burdwan-East And Burdwan-Durgapur Constituency 2024: ভারতীয় রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে রয়েছে জাত ও ধর্ম। তারই অনুরাগের ছোঁয়ায় লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে লাগু হওয়া সিএএ যেন 'রস মালাই'। আর বঙ্গের মতুয়ারা যেন তার 'প্রাণ ভোমরা'। তাই মতুয়াদের কাছে পেতে পূর্ব বর্ধমানের তৃণমূল নেতারা এখন যেমন ব্যাকুল, তেমনই মরিয়া বিজেপি নেতৃত্বও। সিএএ লাগুর পরিপ্রেক্ষিতে মতুয়ারা পদ্ম প্রেমে মজে গিয়েছেন, নাকি ঘাসফুল আঁকড়েই রয়েছেন, তা নিয়ে দুই দল শুধুই হিসেব-নিকেশ কষে চলেছে। তবে শেষপর্যন্ত মতুয়ারা কার মুখে হাসি ফোটাবে আর কাকে কাঁদাবে তানিয়ে গোলক ধাঁধা অব্যহত।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব বর্ধমান জেলায় মোট ভোটার ৪১ লক্ষ্য ৩৭ হাজার ৮২৯ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২০ লক্ষ্য ৯১ হাজার ৬৪ জন, মহিলা ভোটার ২০ লক্ষ্য ৪৬ হাজার ৬৭৮ জন। ৮৭ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। জেলায় লোকসভা কেন্দ্র দু'টি। একটি বর্ধমান পূর্ব, অপরটি বর্ধমান-দুর্গাপুর।
এর মধ্যে বর্ধমান পূর্ব লোকসভায় ভোটার সংখ্যা ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ১২১ জন। আর বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভায় ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ৪৭ হাজার ২৮৩ জন। দুই কেন্দ্রেই মতুয়ারা ভোটার বর্তমান। মতুয়া সংগঠনগুলির দাবি অনুযায়ী, জেলায় প্রায় ৮ লাখ মতুয়ার বাস রয়েছে। তার মধ্যে ভোটার সাড়ে তিন লক্ষের কিছুটা বেশি।
অষ্টাদশ লোকসভা ভোট দুয়ারে কড়া নাড়ছে। সিএএ কার্যকরের পরই হয়েছে ভোট ঘোষণা। তাই মতুয়া ভোটব্যাঙ্কই এবার বড় ফ্যাক্টর। সেই কারণে তৃণমূলের মত বিজেপি নেতারাও এখন মতুয়াদের মন মাপতে ব্যস্ত। পাশাপাশি উভয়েরই নজরে পূর্ব বর্ধমানের ১০-১১টি বিধানসভা এলাকার বেশকিছু ওয়ার্ড ও গ্রাম পঞ্চায়েত। তারমধ্যে মেমারি, জামালপুর, কালনা, পূর্বস্থলী উত্তর ও কাটোয়া বিধানসভা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বর্ধমান দক্ষিণ, ভাতার, আউসগ্রাম ও মঙ্গলকোট বিধানসভা।
রাজনৈতিক মহলের প্রায় সবাই জানেন, এইসব এলাকার মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের একটা বড় অংশ ২০১১ সালে তৃণমূলের বাংলা জয়ের পথ মসৃণ করেছিল। কিন্তু ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের সময় সেই মতুয়া ভোট ব্যাঙ্কেই থাবা বসায় বিজেপি। যা অন্তত জেলার পাঁচটি বিধানসভা এলাকার ভোটের ফলে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছিল। এবার সিএএ কার্যকরের পর লোকসভা ভোটে মতুয়ারা কোন ফুল বেছে নেবেন সেটাই এখন মূল্যবান প্রশ্ন।
আরও পড়ুন- Dilip Ghosh: শেষ জীবনে মমতার গন্তব্য কোথায়? রাম নবমীর দিন বড় ভবিষ্যদ্বাণী দিলীপের!
রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের অনুমান, পূর্ব বর্ধমান জেলার দু'টি লোকসভা আসনেই এবার তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীদের মধ্যে লড়াইটা হবে হাড্ডাহাড্ডি। সে ক্ষেত্রে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে সাড়ে তিন লক্ষ মতুয়া ভোটার। যার নেপথ্যে রয়েছে লোকসভা ভোট ঘোষণার আগেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সিএএ লাগু করে দেওয়ার অঙ্ক।
যদিও তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম দিন থেকেই সিএএ লাগুর প্রতিবাদ করে চলেছেন। বিষয়টিকে বিজেপির 'ফাঁদ' বলে কটাক্ষ করেছেন। একই সুর তৃণমূলের 'সেকেন্ড ইন-কমান্ড' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।
কিন্তু মমতা ও অভিষেক যাই দাবি করুন না কেন সিএএ নিয়ে ঠাকুরনগরের ঠাকুর বাড়ির সদস্য তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের দাবি আবার ভিন্ন। তাঁর দাবি, সিএএ লাগু হওয়ায় তৃণমূলেই ’মঙ্গল’ হবে। যদিও ’মঙ্গল’ নিয়ে মমতাবালার ভবিষ্যৎদ্বাণীকে একেবারে নস্যাৎ করে দিয়েছে ওই বাড়ির-ই অপর সদস্য তথা বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে দ্বিতীয়বারের বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর। তাঁর দাবি, এবার বঙ্গ বিজেপির মঙ্গলে’ বড় ভূমিকায় থাকবেন মতুয়ারাই।
শান্তনু ঠাকুরপন্থী ’অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের’ সহ-সভাপতি শৈলেন বিশ্বাস দাবি করেছেন, ২৮% মতুয়া ভোটার রয়েছে বর্ধমান পূর্ব লোকসভায়। আর বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভায় ১৪ শতাংশ মতুয়া ভোটার। শৈলেনবাবুর বক্তব্য, 'কেন্দ্র সিএএ কার্যকর করায় মতুয়ারা এবার দ্বিগুণ উৎসাহে বিজেপিকে ভোট দেবেন।'
অন্যদিকে জেলার গুসকরা নিবাসী মতুয়াদের অপর একটি সংগঠনের নেতা হিরন্ময় ঠাকুর বলেন, 'পূর্ব বর্ধমানের দু’টি লোকসভা ছাড়াও আউশগ্রাম বিধানসভায় মতুয়ারাই নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে থাকেন। সেই কারণে তৃণমূল ও বিজেপি দুই দলই এখন মতুয়াদের কাছে পেতে চাইছে।' যদিও তৃণমূলের রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের কথায়, 'সিএএ আসলে হল বেনাগরিক করার ছক। সেটা মতুয়ারা ভালই বুঝে গেছেন। তাই সিএএ বিরোধীতায় মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন এবার তৃণমূলকেই উজার করে ভোট দেবেন।'