মিজলস ও রুবেলার টীকাকরণ কর্মসূচি রাজ্য় জুড়ে প্রচারের ঢক্কানিনাদের পর অশ্বডিম্ব প্রসব করল। এবারের মত বন্ধ রাখতে হয়েছে টীকাকরণ কর্মসূচি। কবে ফের এই টীকারকণ হবে সে ব্য়াপারে স্বাস্থ্য় দপ্তরের কোনও কর্তাই মুখ খুলছেন না। প্রস্তুতি পর্বের লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতি হল সরকারের। এর আগেও তিনবার এই কর্মসূচি বাতিল হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, হামের টীকাকরণ অত্য়ন্ত জরুরি।
এ বছর সারা রাজ্য়ে আড়াই কোটি মজলস ও রুবেলা প্রতিরোধী শিশুর টীকাকরণ কর্মসূচি নিয়েছিল রাজ্য় স্বাস্থ্য় দপ্তর। কিন্তু গতকাল প্রশাসনিক বৈঠকে এই কর্মসূচি বাতিল করার নির্দেশ দেন মুখ্য়মন্ত্রী তথা স্বাস্থ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। জেলায় জেলায় টীককরণ কর্মসূচি বাতিলের সরকারি নির্দেশও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারি নির্দেশের ফলে সারা দেশে মিজলস ও রুবেলার বিরুদ্ধে অভিযান চললেও এরাজ্য়ে তা বন্ধই রাখতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন, শীত আসছে, ডাক্তারবাবু বলছেন, ‘ত্বকের যত্ন নিন’
সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক ডা. সজল বিশ্বাসের দাবি, “এই নিয়ে চারবার বন্ধ করা হল এই টীকারকরণ কর্মসূচি। এরফলে আড়াই কোটি শিশু টীকা থেকে বঞ্চিত হল। তাছাড়া সমস্ত প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পর এভাবে বাতিল করে দেওয়ায় একদিকে যেমন বিপুল আর্থিক ক্ষতি হল, পাশাপাশি টীকাকরণ কর্মসূচির ওপর আস্থা ও ভরসা প্রশ্নের মুখে পড়ল। আমরা এই কর্মসূচি কেন বন্ধ করা হল সে ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’’
বাঁকুড়ায় প্রশাসনিক সভায় মুখ্য়মন্ত্রী বলেছিলেন, “হামের টীকা একসঙ্গে আড়াই কোটি করতে পারছি না। তাহলে সমস্য়া হয়ে যাবে। আড়াই কোটির মধ্য়ে একজনের সমস্য়া হলে সেটা নিয়ে মিডিয়া চিৎকার করবে। আড়াই কোটি শিশুকে টীকা দেওয়া খুবই কঠিন কাজ। সেজন্য় আপানাদের বিশেষ শিবির করার দরকার। যেসব অভিভাবকরা বাচ্চাদের হামের টীকা দেওয়াতে চান তাঁদের দিয়ে দেবেন।’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘৩৬৫ দিন চলে মিজলস ও রুবেলার টীকাকরণ। এত সময় ধরে সারাক্ষণ স্কুল দখল করতে দেওয়া যাবে না।’’ মুখ্য়মন্ত্রী এ কথা বলার পরই বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্বাস্থ্য় দপ্তর। জানিয়ে দেওয়া হয় মিজলস টীকাকরণ ব্য়বস্থাপনা ও প্রচার কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, সামনেই লোকসভার ভোট। সেক্ষেত্রে হাম বা রুবেলার টীকাকরণ কর্মসূচিতে একজনেরও যদি মৃত্য়ু হয়, তাহলে রেরে করে উঠবে বিরোধীরা। সে আশঙ্কার থেকেই এই কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই টীকাকরণ সামগ্রী অত্য়ন্ত সাবধানে রাখতে হয়। সংরক্ষণে রাখার তাপমাত্রা হেরফের হলেই একেবারে বিষে পরিণত হতে পারে টীকা। দপ্তর মনে করেছে, এ ব্যাপারে প্রস্তুতি সঠিক ভাবে নেওয়া হয়নি। তাই আপাতত পিছিয়ে দেওয়া হল এই টীকাকরণ প্রকল্প।
বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. রেজাউল করিম বলেন, “আড়াই কোটির হিসেবটাই গোলমেলে। সংখ্যাটা ১০ লক্ষের কমই হবে।’’মুখ্যমন্ত্রী কেন আড়াই কোটির হিসেব দিচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘‘গতবছর এমএমআর ভ্য়াকসিন নিয়েছে ৮৫ শতাংশ। ১৫ ভাগের হয়নি। এ জন্য প্রশিক্ষিত কর্মী প্রয়োজন। এটা পোলিও বা অন্য় ভ্য়াকসিনের মত নয়। এই ভ্য়াকসিন ঠিক ভাবে না সংরক্ষণ করতে পারলে ভয়ানক বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। খারাপ ভ্য়াকসিন দিলে একজন বাচ্চাও যদি মারা যায় তাহলে প্রোগ্রামটাই লাটে উঠে যাবে।’’ এই নিয়ে যে টীকাকরণ কর্মসূচি চারবার বন্ধ হয়ে গেল সে বিষয়টির উল্লেখ করেন ওই চিকিৎসকও।
আরও পড়ুন, ব্যস্ত শহরে রোগীর বাহন এক অভিনব অ্যাম্বুলেন্স
হাম ও রুবেলা হলে কী ক্ষতি হতে পারে? বিশিষ্ট শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অপূর্ব ঘোষ বললেন, “হাম শিশুদের ক্ষেত্রে খুব ভয়ানক অসুখ। মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে এমন কোন অর্গ্য়ান নেই যেখানে এর সংক্রমণ হতে পারে না। হাম আজ হলে, আজ থেকে ২০ বছর পরেও তা মস্তিষ্কে আক্রমণ করতে পারে। এই সাঙ্ঘাতিক অসুখের অবশ্য়ই প্রতিরোধ করা উচিত।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন রুবেলা শিশু বা পুরুষের ক্ষেত্রে তেমন মারাত্মক নয়। তবে, ‘‘গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে রুবেলা অত্যন্ত মারাত্মক। সেক্ষেত্রে বিকলাঙ্গ শিশু প্রসবের আশঙ্কা রয়েছে।’’ দুটি টীকাকরণই অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন এই ডাকসাইটে চিকিৎসক।