অস্ত্রোপচার ও রোগীর সাময়িক সুস্থ হয়ে ওঠাই শেষ কথা নয়, তারপরও প্রয়োজন কড়া নজরে রেখে রোগীর দেখভাল করা। শুধু ভাবনাতেই নয়, ইতিমধ্যে তার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মেডিক্যাল কলেজ। ১৭ নভেম্বর সরকারি উদ্যোগে প্রথমবার হৃদ প্রতিস্থাপন করা হয় রাখাল দাসের। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে খরচের কথা না ভেবেই সমস্ত চিকিৎসা করা হয়। ইতিমধ্যে রাখালবাবুর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলে, সৌজন্যে চিকিৎসক প্লাবন মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর সহকর্মীরা।
কলকাতায় বেসরকারি হাসপাতালে হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট হলে মেডিক্যালে নয় কেন? অ্যাপোলো বা ফোর্টিসে যাঁরা আছেন, তাঁরা তো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকেই পাশ করে বেরিয়েছেন। তাহলে এখানে সম্ভব হবে না কেন? এই প্রশ্নই বেশ কয়েকদিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছিল ডাঃ মুখোপাধ্যায়ের মনে। তিনি স্বাস্থ্য দপ্তর ও রোগী কল্যান দপ্তরকে জানালে, সে বার্তা সরাসরি পৌঁছে যায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলে বহুদিন ধরেই ফাঁকা পড়ে ছিল একটি ঘর। অধক্ষ্যের পরামর্শে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে সেই ঘরেই রাখালবাবুকে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। ডাঃ মুখোপাধ্যায় বলেন, "ওঁকে এখনও বেশ কিছুদিন চিকিৎসাধীন রাখতে হবে। যেহেতু এই ধরণের রোগীর ক্ষেত্রে জটিল হয় ওষুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি, তাই শিখিয়ে পড়িয়ে দিতে হবে। রাখালবাবুর স্ত্রী মামণি দাসকেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যতদিন ওঁকে মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে রাখা হবে, ততদিন তাঁর স্ত্রীকেও ওই ঘরেই রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডে সংক্রমণের ভয় থাকে, সেই কারণেই হোস্টেলের ব্যবস্থা করা হয়। সর্বক্ষণ ডাক্তাদের নজরবন্দী থাকতে পারবেন উনি।"
আরও পড়ুন: “চিকিৎসার জন্য আর দক্ষিণ ভারতে যাওয়ার দরকার হবে না”
মেডিক্যাল কলেজের তরফ থেকে ডাক্তাররা গিয়ে দেখে এসেছেন রাখালবাবুর বাসস্থান। দরিদ্র ওই রোগীর বাড়ির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। অতিরিক্ত শীতে দরজা জানলাহীন ঘরে সমস্যা হবে। এলাকার লোকজনের উনুনের ধোঁয়া ভেসে আসে তাঁর বাড়ির প্রাঙ্গনে, যার ফলে শ্বাস প্রশ্বাসের অসুবিধে হবে রাখালবাবুর। কাজেই আপাতত বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন ডাঃ মুখোপাধ্যায়।
গতকাল বায়োপসি করা হয়েছে। বর্তমানে রুটিন মাফিক চিকিৎসার মধ্যে রয়েছেন রাখালবাবু। অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন ডাঃ মুখোপাধ্যায়। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ও পর্যালোচনা নিয়ে সাধারণ মানুষের যে ভাবধারণা তা "ভেঙে ফেলতে হবে"। সরকারি হাসপাতালে শুধু চিকিৎসা করেই ছেড়ে দেওয়া হয় না, রোগীর প্রয়োজনীয় পরবর্তী পর্যবেক্ষণও করা হয় সরকারি হাসপাতালে, এটা জানানোই উদ্দেশ্য।