প্রধান তিন বিরোধী দলেন গরহাজিরাতেই নবান্নে পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে হল সর্বদল বৈঠক। রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস ঠিক করা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে চলল চুলচেরা আলোচনা। তথ্য নির্ভর এই আলোচনায় ছিল চাঁদের হাট। কবি-সাহিত্যিক-ইতিহাসবিদ থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বরা ছিলেন বৈঠকে। সেই বৈঠকেই অধ্যাপক-ইতিহাসবিদ সুগত বসু, কবি সুবোধ সরকার, কবি জয় গোস্বামী, সাহিত্যিক আবুল বাশারদের উল্টো পথে হাঁটলেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ তথা লেখক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি। পশ্চিমবঙ্গ দিবস ঠিক করা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই নিজের মতামত জানিয়ে গেলেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি।
কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশেই রাজভবনে গত ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। যদিও ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন নিয়ে তুমুল আপত্তি তোলে রাজ্য সরকার। তারপর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের একটি দিন ঠিক করা নিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার নবান্নে এব্যাপারে সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেই বৈঠকে কবি, সাহিত্যিক থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব ও রাজনৈতিক দলগুলির নেতারা নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন নিয়ে পয়লা বৈশাখ দিনটিকেই বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অধিকাংশ ইতিহাসবিদ-কবি-সাহিত্যিকরা। সুগত বসু থেকে শুরু করে সুবোধ সরকার, জয় গোস্বামী, আবুল বাশাররা পয়লা বৈশাখ দিনটিকেই পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন- ‘২৪-এর ভোটের আগে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ মোদীর, ‘বিরাট’ কমল রান্নার গ্যাসের দাম, কটাক্ষ তৃণমূলের
তবে তাঁদের উল্টো পথে হেঁটে ইতিহাসবিদ নৃসিংপ্রসাদ ভাদুড়ি রাখী বন্ধনের দিনটি পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে পালন করা উচিত বলে জানিয়েছেন। তিনি এদিন বলেন, '২০ জুন বাংলা দিবস এটা কোনওদিন শুনিনি। পয়লা বৈশাখ নিয়ে একটা শুনছি। পয়লা বৈশাখ হলে সেটা অখণ্ড বাংলার একটা ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর রাখীবন্ধন করেছিলেন। ওই দিনটায় তিনি হিন্দু-মুসলিমকে একত্রিত করতে পেরেছিলেন। তাঁর রাখী এপার এবং ওপার বাংলা মেনে নিয়েছিল। ভৌগোলিক দিক থেকে তাই রাখীর দিনটিই পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা উচিত।'
অন্যদিকে, কবি সুবোধ সরকার বলেন, '২০ জুন তারিখটাকে মানতে পারব না। ২০ জুনের পরিবর্তে একটা দিন ঠিক করতেই হবে। পশ্চিমবঙ্গের সত্ত্বা হিসেবে যে তারিখটা সবচেয়ে বেশি রিফ্লেক্ট করে সেটা হল পয়লা বৈশাখ।'
আরও পড়ুন- কলকাতার কাছেই অসাধারণ এক দ্বীপ, সবুজে ঘেরা এপ্রান্তের মায়াবী পরিবেশ মন কাড়বেই!
অধ্যাপক-ইতিবাদবিদ সুগত বসু বলেন, 'স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মণিষীরা ঐক্যবদ্ধ বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে গেল ১৯৪৭-এর ৩ জুন। ওই দিন দেশভাগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন মাউন্টব্যাটেন। ১৯৪৭ সালের ২৮ মে পর্যন্ত সম্ভাবনা ছিল যে বাংলা হয়তো অখণ্ড থাকবে। ৩ জুনের পর ইংরেজদের সিদ্ধান্ত রোধ করা সম্ভব হল না। ১৯৪৭-এর ১৫ জুন কংগ্রেসও এটা স্বীকার করে নিল। ২০ জুন আইনসভায় বাংলা ভাগের বিরুদ্ধেই ভোট পড়েছিল। বাংলা দিবস হিসেবে অন্য শুভ দিনই বেছে নেওয়া উচিত। পয়লা বৈশাখ হলে ভালোই হয়।'
আরও পড়ুন- বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রীকে ‘মেশিনগান’ গিফট! প্রাক্তন তৃণমূল নেতার ‘বাহুবলী’ পোস্টে শোরগোল
বৈঠকে উপস্থিত প্রখ্যাত সাহিত্যিক আবুল বাশারও পয়লা বৈশাখের দিনটিই পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে পালন করা উচিত বলে জানিয়েছেন। কবি জয় গোস্বামীও এদিন ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ্যমমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদ করাটাকে অত্যন্ত সঙ্গত বলে জানিয়েছেন। অবশ্য কেনা দিনটি পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া উচিত সেব্যাপারে সরাসরি।