তৃণমূলের সভা মঞ্চে জ্বলজ্বল করছিল দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। সেই মঞ্চ থেকেই গত পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী পদের টিকিট কেনা-বেচা হয়েছিল বলে প্রকাশ্যে দাবি করলেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারি তৃণমূল কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি ফারুক আবদুল্লা।
শনিবার এমনই দাবি করার পাশাপাশি মেমারির এক তৃণমূল কাউন্সিলর ও এক নেতাকে উদ্দেশ্য করেও চরম হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখেন এই নেতা। পঞ্চায়েত ভোটের আগের তৃণমূল নেতার এমন দাবি ঘিরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে জেলা রাজনৈতিক মহল। বিরোধীরা বলছেন, তাঁরা এতদিন যে কথা বলে আসছিলেন তাতে তৃণমূলের নেতাই সিলমোহর বসিয়ে দিলেন।
মেমারি শহর তৃণমূল শনিবার বিকেলে শহরের চকদিঘী মোড়ে একটি সভার আয়োজন করে। সেই সভায় মেমারি শহর তৃণমূলের সভাপতি স্বপন ঘোষাল ছাড়াও ফারুক আবদুল্লা সহ অন্য অন্য বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। মেমারি শহর তৃণমূলের সংখ্যলঘু সেলের সভাপতি ফারুক আবদুল্লা সেই সভায় বক্তব্য রাখতে উঠে আগাগোড়া নিজের দলের এক কাউন্সিলর ও এক নেতার বিরুদ্ধে সুর চড়ান।
আরও পড়ুন- মধ্যরাতে নূপুর পায়ে ঘুরে বেড়ান, আশা পূরণ করেন জাগ্রত আশাদেবী কালী
নাম মুখে না এনে ওই কাউন্সিলরকে তিনি ক্লাস টু পাশ কাউন্সিলার বলেও কটাক্ষ করেন। এমনকী তিনি এও বলেন, সই করতে গেলে ক্লাস টু পাশ ওই কাউন্সিলার নাকি কলম ভেঙে ফেলেন। পাশাপাশি তিনি ওই কাউন্সিলরকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, '১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে তুমি কাউন্সিলার হয়েছো। তোমার নেতাও ১কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছে।" এর পরেই ফারুক তাঁর দলের দুই নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনব্রত মণ্ডলের জেলবন্দি হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওই দুই কাউন্সিলারের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনার কথা বলা সাজে না। বেশি কথা বলবেন না। নয়তো আপনার কথা আপনার বুকের মধ্যে চেপে দেব।'
ফারুক আবদুল্লা যখন প্রকাশ্য সভামঞ্চ থেকে দলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করছেন তখন তার প্রতিবাদ না করে উল্টে মঞ্চে থাকা নেতারা হাততালি দিয়ে ফারুককে সমর্থন জানান। তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার টিকিট কেনাবেচা হয়, বিরোধীরা বারবার এই অভিযোগ তুলেছে। মেমারি শহর তৃণমূলের সভাপতি স্বপন ঘোষাল বলেন, “ফারুক যখন মঞ্চে বক্তব্য রাখতে ওঠে তখন আমি মঞ্চে ছিলাম। একটু পরেই মঞ্চ থেকে আমি নেমে যাই। তবে ফারুক তৃণমূলের কাউন্সিলর পদ প্রার্থী হওয়ার টিকিট কেনাবেচার যে কথা বলেছে সেটা আমিও শুনেছি’।
আরও পড়ুন- Ajker Rashifal Bengali, 8 January 2023: ছুটির দিন আপনার পক্ষে যাবে নাকি বিপক্ষে? পড়ুন রাশিফল
স্বপনবাবু জানান, ফারুকের বক্তব্য তিনি সমর্থন করেন না। কারণ ফারুক দলের সম্পর্কে সঠিক বলেনি বলেই তিনি মনে করেন। তাই ফারুকের মন্তব্যের বিষয়টি নিয়ে তিনি দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, “এমন মন্তব্য দল বিরোধী। যিনি এইসব মন্তব্য করেছেন তার দায় তাঁকেই নিতে হবে। দলের উচ্চ নেতৃত্ব এই বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।'
এদিকে ফরুক আবদুল্লার মন্তব্য নিয়ে তৃণমূলের নেতারা দায় এড়ানোর চেষ্টা করলেও বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধী নেতৃত্ব। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূলের আসল স্বরূপ প্রকাশ্যে এনে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা ফারুক আবদুল্লা। টাকা ছাড়া তৃণমূলের কেউ কিছু বোঝেন না। শুধু সরকারি প্রকল্প থেকে কাটমানি খাওয়া নয়, পুরসভা ভোট থেকে শুরু করে যে কোনও ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী হতে হলে মোটা টাকা দিয়েই টিকিট কিনতে হয়। এটা নিয়ে এতদিন বিরোধীরা যা বলে আসছিল তাতেই তৃণমূল নেতা ফারুক আবদুল্লা সিলমোহর বসিয়ে দিয়েছেন।”