বিধানসভা ভেটের সময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতো গ্রামে পানীয় জলের সমস্যার সমাধান হয়নি। একই রকম ভাবে হচ্ছে না গ্রামের রাস্তাঘাট ও নিকাশী-ব্যবস্থা উন্নতি। এরই প্রতিবাদে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির দুর্গাপুর পঞ্চায়েতের চোটখণ্ড গ্রামের বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন মেমারির তৃণমূল বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য। ভোটের সময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা বিধায়ক প্রথমে অস্বীকার করেন। সঙ্গে সঙ্গেই সকল গ্রামবাসীরা প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কথা তুলে ধরতেই বিধায়ক এরপর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কথা স্বীকার করে নেন। যা নিয়ে এখন শাসক ও বিরোধীদের রাজনৈতিক তরজা মেমারিতে তুঙ্গে উঠেছে।
মেমারির দুর্গাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের লাগোয়া গ্রাম চোটখণ্ড। এই গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাই কাঁচা। নিকাশী বাবস্থা ভাল না থাকায় বর্ষায় চোটখণ্ড গ্রামের মানুষজনের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। গ্রামের বাসিন্দা অনাথ ক্ষেত্রপাল, বাপি ক্ষেত্রপাল বলেন, ’বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়ে মধুসূদন ভট্টাচার্য আমাদের চোটখণ্ড গ্রামে প্রচারে আসেন। ওই সময়ে গ্রামের মন্দির তলায় বসে মধুসূদনবাবু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান ভোটি জিতলে তিনি হয় ’পিএইচই’ নয়তো ’সজল ধারা’ প্রকল্পে চোটখণ্ড গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দেবেন। পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নেও উদ্যোগ নেবেন বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটে জিতে বিধায়ক হয়ে যাওয়ার পর মধুসূদনবাবু তাঁর দেওয়া সব প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে গিয়েছেন। পানীয় জলের হাহাকার আজও চোটখণ্ড গ্রামে রয়েই গিয়েছে।
তাই বৃহস্পতিবার বিকালে বিধায়ক মধুসূদনবাবু যখন চোটখণ্ড গ্রামে আসেন তখন গ্রামের সকলে তাঁর কাছে পানীয় জলের ব্যবস্থা না হওয়ার কথা তুলে ধরেন। ভোটের সময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথাও বিধায়ককে স্মরণ করিয়ে দেন। ওই সময়ে বিধায়ক প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কথা অস্বীকার করলে সবাই তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়ে বিধায়ক পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে যান।
গ্রামের অপর বাসিন্দারা এদিন জানান,, তাঁদের গ্রামে দুটি টিউবকল রয়েছে। তার একটি খারাপ। অপরটি দিয়ে কাদাগোলা জল জল বের হয়। সেই জল খাওয়া যায় না। দূরের গ্রাম থেকে পানীয় জল এনে তাঁদের খেতে হয়। আধিকাংশ রাস্তা ঘাট এখন কাঁচা রয়েছে। বর্ষায় ওই সব রাস্তা কদায় ভরে যায়। এক হাঁটু কাদা পেরিয়ে বর্ষায় গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাতাযাত করতে হয়। রাস্তা কাচা থকার জন্য বর্ষা কালে স্কুল ছাত্র ছাত্রীদের স্কুলে যাওয়ার সমস্যা হয় ।প্রশুতি ও অন্য রোগীদের বর্ষার সময়ে হাসপাতাল যেতেও দুর্ভোগে পড়তে হয়। গ্রামবাসীরা আরও জানান, তাঁদের এলাকার নিকাশি ব্যবস্থারও কোনও উন্নতি হয়নি। সন্ধ্যা নামলেই এলাকার রাস্তাঘাট অন্ধকারে ঢাকা পড়ে। অন্য পঞ্চায়েত এলাকায় পথে বাতি থাকলেও তাঁদের চোটখণ্ড গ্রামে পথে বাতির কোনও ব্যবস্থা আজ অবধি হয়নি। ভোট আসলেই নেতা ও বিধায়করা সব সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। আর ভোট মিটে গেলেই প্রতিশ্রুতির কথা তাঁরা ভুলে যান।
গ্রামবাসীদের অভিযোগের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন দুর্গাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান নিতাই ঘোষ। তিনি শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমকে জানান, চোটখণ্ড ছাড়াও হঠাৎপাড়া,বনশেঁকরা, তালগেঁড়া প্রভৃতি এলাকায় রাস্তা ঘাট সত্যি অত্যন্ত খারাপ রয়েছে। ওইসব গ্রামে পানীয় জলের সমস্যাও রয়েছে। এইসব সমস্যার সমাধান কোনও ভাবেই করে উঠতে পারা যাচ্ছে না। সেই কারণ এই সব গ্রামের মানুষজন মাঝে মধ্যেই পঞ্চায়েতে এসে বিক্ষোভ দেখান। গ্রামবাসীদের একটু ধৈর্য্য ধরার কথা বলা হয়েছে বলে উপপ্রধান জানান। বিধায়ককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোর কারণ প্রসঙ্গে উপ প্রধান বলেন, “গ্রামবাসীরা বলছে বিধানসভা ভোটের সময়ে মধুসূদনবাবু নাকি চোটখণ্ড গ্রামে ’সজল ধারা’ প্রকল্পে পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার ও গ্রামের রাস্তা ঘাটের উন্নতি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । কিন্তু পানীয় জলের ব্যবস্থা আজ আবধি হয়নি। তাই তাঁরা বৃহস্পতিবার বিধায়ককে কাছে পেয়ে বিক্ষোভ দেখান।" উপপ্রধান বলেন, গ্রামবাসীদের দাবির বিষয়টি নিয়ে বিধায়ক আগামী সোমবার পঞ্চায়েতে বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়ে গিয়েছেন ।
আরও পড়ুন মিলল গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি, শর্তসাপেক্ষে রাজ্যকে ছাড় হাইকোর্টের
বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, “ভোট বৈতরণী পার হবার জন্য আমি নির্দিষ্ট কিছু করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষের কাছে ভোট চাই না । ওই গ্রামে টিউবকল আছে। জলস্তর নিচে থাকা বা অন্য কোনও কারণে ওইসব কল থেকো হয়তো ঠিকঠাক জল উঠছে না। গ্রামবাসীরা পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছে। সমস্যার দ্রুত সমাধান কী করে করা যায় সেই বিষয়টি দেখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আগামী সোমবার পঞ্চায়েত অফিসে বৈঠকে বসা হবে“।
এই বিষয়ে সিপিএম মেমারি ১ (পূর্ব) এরিয়া কমিটির সদস্য অভিজিৎ কোঙার বলেন ,“ বাম আমলে ওই পঞ্চায়েতটি রাজ্যের সেরা ও দেশের সেরা পঞ্চায়েতের স্বীকৃতি পেয়েছিল। এখন ওই পঞ্চায়েতটি করে খাওয়ার জায়গা হয়ে উঠেছে। রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার বইছে বলে তৃণমূলের তরফে যে প্রচার করা হয় তা যে আসলে ভাঁওতা সেটা চোটখণ্ড গ্রামের বাসিন্দাদের ক্ষোভ বিক্ষোভই প্রমাণ করে দিয়েছে। মিথ্য প্রতিশ্রতি আর পেশী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলের প্রার্থী ভোটে জিতেছেন। তার পরিণাম এখন তাঁকেই ভুগতে হচ্ছে।" বৃহস্পতিবারের তৃণমূল বিধায়কের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তার পিছনে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব কাজ করেছে বলে অভিজিৎ বাবু জানিয়েছেন। মেমারির বিজেপি নেতৃত্বও দাবি করেছে,“তৃণমূল উন্নয়নের নামে যা প্রচার করে তা আশলে ধাপ্পা ছাড়া আর কিছুই নয় “।