Advertisment

'ভারতে নারীর জন্য ৪৯টি আইন, পুরুষের কিচ্ছু নেই, গণ আন্দোলন গড়ে তুলব'

এ দেশে ১৮ শতাংশ পুরুষও মহিলাদের হাতে যৌন হেনস্থা-ধর্ষণের শিকার। কিছুদিন আগে পার্লামেন্টকে অনুরোধ করা হয়েছিল যাতে ধর্ষণের আইনটাকে লিঙ্গ নিরপেক্ষ করা হয়। কিন্তু আমাদের মহান সংসদ তা অস্বীকার করেছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Men's Rights, All Bengal Men's Forum

‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস মেয়েরাই বেশি করে, ছেলেরা নয়’

ভারতে ১৮ শতাংশ পুরুষ ধর্ষিত হয়, মহিলারা তাঁদের যৌন হেনস্থাও করে। কিন্তু পুরুষ সে কথা বাইরে বলতে পারে না। দেশের আইন প্রায় পুরোটাই মেয়েদের পক্ষে। পুরুষ তাই নিরুপায়। এ সমাজ আর সেভাবে আজ পুরুষতান্ত্রিক নয়, বরং মেয়েদের হাতেই চলে যাচ্ছে অনেক ক্ষমতা। আর এই ক্ষমতাই পচন ধরাচ্ছে, ভুগছেন পুরুষরা। তাই দেশের আইনে প্রকৃত লিঙ্গসাম্য চাই। পুরুষ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজে গণ আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। এমনটাই মনে করেন নারী হয়েও পুরুষাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে বাংলার প্রথম সারির মুখ নন্দিনী ভট্টাচার্য। তাঁদের লড়াই-সংগ্রামের কথা নিয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র মুখোমুখি অকপট নন্দিনী

Advertisment

পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে হঠাৎ পুরুষদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হওয়ার কি দরকার পড়ল?

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ একটা মিথ। আমাদের ভুল ধারণা যে আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করি। এক সময় এটা ছিল, খুব বেশিভাবেই ছিল। মেয়েরা তখন অত্যন্ত নির্যাতিতা হতেন, এখনও হন না, একথা আমি বলছি না। তবে এখন আর খুব বেশি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নেই। এই ধারনাটা বহু দিন ধরে চলে আসছে। আমাদের বোধ হয় এবার এটা বদলানোর সময় এসেছে। দেখবেন, অনেক বাড়িতে ঠাকুমা অথবা মা কিংবা স্ত্রীর বাড়ির নানা নিয়ম-কানুন, রীতি-নীতি ঢুকে পড়েছে। আমি কিন্তু, অর্থনৈতিক জায়গা থেকে বলছি না। বরং বলছি, সামাজিক অবস্থানগত দিক থেকে। লক্ষ্য করবেন, ছেলে মেয়ে কোন স্কুলে বা টিউশনে পড়বে, মা না শাশুড়ি কাকে বেশি দামি শাড়ি দেওয়া হবে- এসব সিদ্ধান্ত মোটামুটি এখন পরিবারের মহিলারাই নিয়ে থাকেন। আর, পুরুষরা ঠিক করেন ফারাক্কাকে কত কিউসেক জল দেওয়া হবে বা আনবিক বোমা ফাটানোর রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল, এগুলি। এর থেকেই বোঝা যায়, পরিবার এবং বৃহত্তর পরিবার অর্থাৎ সমাজের দরকারি সিদ্ধান্তগুলি মহিলারাই নিয়ে থাকেন।

publive-image নন্দিনী ভট্টাচার্য।

কেন একথা বলছেন? এটাও তো বলা যায় যে কে কোন সিদ্ধান্ত নেবে সেই সিদ্ধান্তটিই পুরুষতান্ত্রিকতা ঠিক করে দিয়েছে।

দেখুন, দেশ-রাষ্ট্র-দুনিয়া এসব বড় বড় ব্যাপার। আপনার দৈনন্দিন বেঁচে থাকার জীবনে ছেলে-মেয়ে কোন স্কুল-কলেজে পড়বে বা কোন পেশা বেছে নেবে অথবা বাড়ির জন্য কোন গাড়িটি কেনা হবে, এগুলিই মূলত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেসব মূলত পরিবারের মহিলা সদস্যরাই আজকাল ঠিক করে থাকেন। অর্থাৎ পুরুষরা বহু ক্ষেত্রেই আর সংসারের 'ডিসিশন মেকার' নয়। মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও কিন্তু অনেকটা বেড়েছে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

অবশ্যই। এই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তো নারী ক্ষমতায়নের দীর্ঘ প্রতিক্ষিত সুফল। এতে সমস্যাটা কোথায়?

ঠিক সে অর্থে সমস্যা নয়। বলতে চাইছি, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ আজ আর সেভাবে নেই, অনেকটা ফিকে হয়েছে।

কিন্তু, আপনি যে ছবিটা দিতে চাইছেন তা তো শহর-মফঃস্বলের। মূল যে গ্রামীণ ভারত সেখানকার ছবিটা তো ভিন্ন।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারি। আমার বাড়িতে যে মেয়েটি কাজ করেন তাঁর মাস গেলে ৮-১০ হাজার টাকা রোজগার। ওঁর স্বামী রঙের মিস্ত্রি, কিন্তু এখন কোনো কাজ নেই সেই ভদ্রলোকের। আমার বাড়িতে কাজ করাকালীন মেয়েটি যে ভঙ্গিতে স্বামীকে বাড়ির রান্না-বান্না করতে বা অন্যান্য বিষয়ে নির্দেশ দেয়, তাতে আমার মনে হয় না যে তিনি আর পুরুষতান্ত্রিকতার মধ্যে রয়েছেন। দেশে দেশে কালে কালে যখন যার হাতে ক্ষমতা থাকে তারাই মাথায় বসে। মেয়েদের হাতে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতা যাচ্ছে। মনে রাখবেন, পাওয়ার কোরাপ্টস।

আংশিকভাবে কিছু ক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিকতা ফিকে হচ্ছে বলে মনে করছেন বলেই কি আপনাদের মনে হয় পুরুষাধিকার রক্ষা জরুরি?

না, না, একেবারেই তা নয়। ভারত একটি প্রো ফেমিনিস্ট কান্ট্রি। আমাদের দেশে মেয়েদের জন্য ৪৯টি আইন আছে। অথচ পুরুষ মানুষের জন্য কোনো আইন নেই। তবে কয়েকটা প্রিকশন আছে। কিন্তু, পুরুষরা তা জানেনই না। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হলে পুরুষরা ভয়ে কাঁটা হয়ে যান। আমাদের কাজ দেশের আইনে প্রকৃত লিঙ্গসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই। নিরাপরাধ পুরুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের সাহায্য করা। কিছুদিন আগেই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, এক পুরুষ তাঁর স্ত্রীর হাতে বেধড়ক মার খাচ্ছেন। সেই পুরুষটি যদি থানায় যেতেন, তবুও তিনি অভিযোগ জানাতে পারতেন না। কারণ, আমাদের দেশের আইনটি হল- 'প্রোটেকশন অব উইমেন ফ্রম ডোমেস্টিক ভায়লেন্স'। আমরা চাই, গার্হস্থ্য হিংসার এই আইন, লিঙ্গ নিরপেক্ষ হোক।

যে দেশে ঘণ্টার হিসাবে পুরুষের হাতে ধর্ষণ-শ্লীলতাহানি-যৌন হেনস্থা ঘটে সেখানে দাড়িঁয়ে পুরুষাধিকার নিয়ে কথা বলাটা কি ন্যায্য?

কী বলতে চান, পুরুষই শুধু ধর্ষণ-যৌন হেনস্থা করে? এ দেশে ১৮ শতাংশ পুরুষও মহিলাদের হাতে যৌন হেনস্থা-ধর্ষণের শিকার। কিছুদিন আগে পার্লামেন্টকে অনুরোধ করা হয়েছিল যাতে ধর্ষণের আইনটাকে লিঙ্গ নিরপেক্ষ করা হয়। কিন্তু আমাদের মহান সংসদ তা অস্বীকার করেছে।

ধর্ষিত বা যৌন লাঞ্ছিত পুরুষ আপনাদের কাছে আসে? এ ক্ষেত্রে ব্যাপারগুলি কেমন হয়?

আমাদের কাছে এমন পুরুষরা আসেন। বহু ক্ষেত্রেই সেগুলি পুরুষদের বিরুদ্ধে ভুয়ো ধর্ষণ মামলা। আসলে ঘটনা অন্য রকম হয়।

মানে? এইসব পুরুষদের সাধারণত কে ধর্ষণ করে থাকে?

পরিবারের মধ্যেই কখনো হয়। তাছাড়া পাড়ার কাকিমা, পিসি, দিদিরা করে থাকেন। এ ধরণের ঘটনার একটা বড় অংশের শিকার হয় বয়ঃসন্ধির ছেলেরা। তারা যখন বাড়িতে এসে মা-বাবাকে বলে, তাঁরা বলেন, "এসব বলতে নেই। উনি তোমাকে ভালবাসেন"। মেয়েরা এমন অভিযোগ করলে এখন তাও বাবা-মায়েরা গুরুত্ব দিয়ে সে কথা শুনে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু আজও ছেলেরা এসব বললে কেউ গুরুত্ব দেয় না লোকলজ্জার ভয়ে।

সেই সব পুরুষরা কেন সরব হন না? আপনাদের কেস স্টাডি কী বলছে এ ক্ষেত্রে?

- কৈশোরে ভয় পায়। আর বড় হয়েও ভয়-লজ্জা পায়। কারণ, বড় হয়ে যাওয়ার পর সে যে পুরুষ, তাঁর মুখে এসব কথা মানায় না- এ বোধটা জন্মে যায়।

publive-image ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে নন্দিনী।

এও তো পুরুষতান্ত্রিকতার দান। তাহলে পুরুষতান্ত্রিকতা আছে?

আছে, তবে এতে পুরুষরাই আটকে পড়ছেন। পুরুষদের সঙ্গে এসব হয়, কিন্তু তাঁরা বলতে পারেন না। আর দেশের আইনও সেই রকম। মেয়েরাই তাতে সুবিধা পায়। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে, কর্পোরেটে বা অন্য কোথাও যেখানেই মহিলারা ক্ষমতার শীর্ষে, তাঁরাও পুরুষদের কাস্টিং কাউচ বা অন্যভাবে ব্যবহার করেন।

শারীরিকভাবে ব্যবহার করার কথা বলছেন?

হ্যাঁ, তাই বলছি। সবটা কি শুধু মেয়েদের সঙ্গেই হয় না কি! বহু ক্ষেত্রে পুরুষও ভুক্তভোগী। আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি। কর্পোরেটে মেয়েরা এমন কাজ করে যা জেনে আমার লজ্জা হয়, ঘেন্না করে।

আচ্ছা, আপনি তো মেয়ে। কেন হঠাৎ এত পুরুষপন্থী হয়ে উঠলেন?

আমার নিজের জীবনের কোনও ঘটনা আমাকে এ পথে নিয়ে আসেনি। কিন্তু আমি কোনো দিনই মেয়েদের হয়ে কথা বলার পাত্রী ছিলাম না। আমি বুঝতাম, ছেলেদের জীবনের চাপটা অনেক বেশি। একেবারে পারিবারিক দিক থেকে বলছি, ছেলেদের মা এবং বউয়ের মধ্যে স্যান্ডুইচ হতে হয়। একটা মেয়েকে কিন্তু কখনও মা আর শাশুড়ির মধ্যে ব্যালান্স করতে হয় না। নিজের চার পাশে সমাজের নানা ঘটনায় পুরুষদের কোণঠাসা হতে দেখেছি...এ ভাবেই এই কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পরি।

আপনার বান্ধবীরা কখনও আপনার এই প্রবণতার বিরুদ্ধে কথা বলেনি?

না। বরং তাঁদের সাহায্য ও সমর্থন পেয়েছি।

আপনারা কীভাবে কাজ করেন?

আমাদের 'অল বেঙ্গল মেন'স ফোরামে'-র টোল ফ্রি নম্বরে সাধারণত সমস্যাগ্রস্থ পুরুষরা যোগাযোগ করেন। আমরা এরপর টেলিফোনে তাঁদের সমস্যার ধরণটা ঠিক কী তা বোঝার চেষ্টা করি। এরপর উপযুক্ত মনে হলে সেই ব্যক্তিকে পরিচয়পত্র, ছবি এবং আইনি কাগজপত্রের প্রতিলিপি নিয়ে আমাদের অফিসে আসতে বলা হয়। অফিসে তিনি এলে আমাদের আইন বিশেষজ্ঞ কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখেন। আমরা প্রয়োজনে সেই পুরুষকে কাউন্সিলিং করি। কারণ, অনেকেই নানা কারণে এতটা ভেঙে পড়েন যে লড়াই করার মানসিকতাটাই হারিয়ে ফেলেন। তাঁকে মনে জোর ফিরিয়ে দিতে হয়। বোঝাতে হয়, আমরা তাঁর সঙ্গে আছি এই লড়াইয়ে। এরপর সব দিক খতিয়ে যদি দেখি সংশ্লিষ্ট অভিযোগে বা সমস্যার সারবত্তা আছে, তাহলে আমরা সহযোগিতা করি।

এই সহযোগিতাটা কেমন?

আমরা তাঁকে আইনি বিষয়ে গাইড করি। কারও আইনজীবী থাকে আবার কারও থাকে না। আমরা সেদিকেও সাহায্য করি। থানা-কোর্ট প্রয়োজনে সব জায়গাতেই যেতে হয়।

এই যে যান, সেখানে কেমন প্রতিক্রিয়া পান?

ভাল অভিজ্ঞতা। এমনকি মহিলা থানাতে গেলেও তাঁরা বলেন, 'ভাল কাজ করছেন দিদি'। পুলিশ-উকিল কেউই কিন্তু বলেন না যে আমরা একটা খারাপ কাজ করছি।

আপনাদের এই সাহায্য পেতে গেলে কি ফোরামের সদস্যপদ গ্রহণ করতে হয়?

না। তেমন বাধ্যবাধকতা নেই। সদস্য না হলেও আমরা পাশে থাকি একইভাবে। তাছাড়া, কেউ সদস্য হতে চাইলেই আমরা সদস্যপদ দিই না। বরং কেউ আবেদন করলে আমরা তাঁর নানা দিক খতিয়ে দেখি এবং তাতে সন্তুষ্ট হলে তবেই সদস্য করা হয়।

আপনারা চাঁদা নেন?

হ্যাঁ, মাসে ২০০টাকা।

কোনও ভুয়ো কেস পাননি? মানে, স্ত্রী হয়ত তেমন সমস্যা করেননি, তবু স্বামী এসেছে আপনাদের মাধ্যমে স্ত্রীকে ত্যাগ করতে?

হ্যাঁ, পেয়েছি। সে ক্ষেত্রে আমরা পত্রপাঠ তাদের চলে যেতে বলি। অনেকে আবার আমাদের পরীক্ষা করতেও এসেছেন। নানা অভিজ্ঞতা আছে। আমরাও মানি, পুরুষ অধিকারের লড়াই করছি মানেই সব পুরুষ ধোয়া তুলসী পাতা নয়।

এই যে বলছেন, লিঙ্গসাম্য প্রতিষ্ঠায় আইনের সংশোধন চান, তাহলে তো বিষয়টিকে সংসদে নিয়ে যেতে হবে। সে বিষয়ে কী পরিকল্পনা?

দেখুন, শুধু তো আমরাই একমাত্র নই, সারা দেশেই পুরুষের অধিকার নিয়ে কাজ হচ্ছে। প্রথমে সমাজে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এটাকে গণ আন্দোলন (মাস মুভমেন্ট) হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। পুরুষাধিকারকে রান্নাঘর-বেড রুম-ড্রইং রুম সর্বত্র পৌঁছে দিতে হবে। একজন রিক্সাচালক থেকে অধ্যাপক সকলকে এ বিষয়ে কথা বলতে হবে। আর তখনই আইন প্রণেতারাও কথাটা ভাবতে বাধ্য হবেন।

এই সচেতনতা গড়তে আপনারা কী কাজ করছেন?

আমরা সেমিনার করছি। গানের-খেলার দল তৈরি করেছি। আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছতে চেষ্টা করছি এবং সাড়াও পাচ্ছি। আমরা গরিব পুরুষদের জন্য হাসপাতাল তৈরি করছি। এছাড়া তাঁদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবাও চালু করব।

publive-image গানের দল।

এই মুহূর্তে সমাজে পুরুষাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা কোন স্তরে রয়েছে?

প্রাক প্রাথমিক, বলতে পারেন। দুঃখের কথা কি জানেন, পুরুষরা নারী দিবস পালন করেন, অথচ পুরুষ দিবসটা যে কবে, সেটাই জানেন না।

পুরুষাধিকারের লড়াইয়ে সব থেকে বড় অন্তরায় কী বা কে?

নারীবাদী পুরুষরাই সব থেকে বড় বাধা আমাদের সামনে। নারীবাদী মহিলাদের নিয়ে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। বাংলার বহু নামকরা নারীবাদী নারী আমাদের সমর্থন করেন, যেমন শাশ্বতী ঘোষ।

কেন একথা বলছেন?

কারণ, এই ধরনের পুরুষরা আমাদের আন্দোলনকে অপ্রাসঙ্গিক হিসাবে তুলে ধরতে চায়। আর তাঁরা পুরুষ হয়ে পুরুষাধিকারের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আমাদের কাজটা কঠিন হয়ে যায়। তবু আমরা সেসব নিয়েই লড়ছি, এগোচ্ছিও। পরিস্থিতির সামান্য হেরফের হয়েছে। পুরুষের কথা এখন কিঞ্চিত আমল দেওয়া হয়।

আচ্ছা, ভবিষ্যতে কখনো যদি আপনার অধিকার খর্ব হয়েছে বলে মনে হয়, সে ক্ষেত্রে কি নারী অধিকার রক্ষাকারী সংগঠনের কাছে যাবেন?

না, আমার সে দরকারই হবে না। আমি নিজে ঠিক জায়গায় থাকলে কোনো দিনই আমার সে সমস্য হবে না। অনেক মেয়েই সেটা করে না। মেয়েরা যে কী করতে পারে আপনাদের কোনো ধারণা নেই।

আপনার চোখে মেয়েদের অপরাধের একটা তালিকা দিন...

-ভারতে প্রতি বছর ম্যাট্রিমনিয়াল ডিসপুটে ৯৮ হাজার পুরুষ আত্মহত্যা করেন। সেখানে নারীর সংখ্যা ৩১ হাজার। আর নারীদের আত্মহত্যার কারণ পণ। মাথায় রাখবেন, পণ দেওয়া ও নেওয়া দুটিই কিন্তু অপরাধ। ক'জন মেয়ের বাবা দোষী সাব্যস্ত হয় এ জন্য? তাছাড়া মনে রাখবেন, পণের পিছনেও মেয়েদের বিশাল ভূমিকা-'দিদিকে দিয়েছ, আমাকে কেন দেবে না?'- এই তো অধিকাংশের মানসিকতা। জানবেন, 'বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসে'র ব্যাপারটাও মেয়েরা সব থেকে বেশি করে। ছেলেরা থানায় যায় না তাই। মেয়েরা যেই না মোটা রোজগারের বর পেয়ে যায়, ওমনি প্রেমিককে ছেড়ে চলে যায়। আর তার আগে দু'জনের মধ্যে সব রকম সম্পর্কই তৈরি হয়। এর বাইরে আরও আছে...'মা'- মানেই একটা মিথ। জানেন কি, মায়েরা সন্তানকে ওষুধ খাইয়ে হুইল চেয়ারে বসিয়ে রাখে যাতে বাবার থেকে আরও বেশি করে টাকা আদায় করতে পারে, ফ্ল্যাট লিখিয়ে নিতে পারে। গান গেয়ে উপরে উঠতে, সিনেমায় অভিনয় করতে, চাকরিতে উন্নতি করতে মেয়েরা যা করতে পারে তাতে আবারও বলছি, আমার মেয়ে হিসাবে ঘেন্না করে।

পুরুষাধিকার রক্ষার লড়াইয়ে এখনও পর্যন্ত আপনার একটা প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তির কথা বলুন

-একটা প্রাপ্তি নেই। সামগ্রিকভাবে বলব, যখন কোনও বিপন্ন পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি, তখন যে ভালবাসা-শ্রদ্ধা পেয়েছি তাতে আমি আপ্লুত। মনে হয়, এ জীবনে আর কিছু চাই না। আর অপ্রাপ্তি যদি বলতে হয় তাহলে বলব, দেশে আইন কানুনের সমস্যা থাকায় অনেক অপরাধী মেয়েকেও শাস্তি দিতে পারিনি। যদি পারতাম, একটু মনটা হালকা হত। এই সব মেয়েরা যে কীভাবে অন্যের জীবন নষ্ট করেছে ভাবতে পারবেন না। জানবেন, আমরা নারী, আমরা সব পারি...

Women's Day WOMEN
Advertisment